বিএনপির অসহযোগে আওয়ামী লীগ খুশি!
বিশেষ প্রতিনিধি : বিএনপির নয়া অসহযোগে আন্দোলনে এবার সরকার দলীয় নেতারা খুশি হয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একাধিক সিনিয়র নেতা দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে জানিয়েছেন, বিএনপির অসহযোগ আন্দোলনে তারা খুশী। কারণ, এমনিতেই বিএনপির জ্বালাও পোড়াও আন্দোলনে মানুষ নাখোশ হয়ে তাদের আন্দোলন প্রত্যাখ্যান করেছে। ঠিক এমনি সময় তারা জ্বালাত পোড়াও থেকে সরে এসে অসহযোগে নেমেছে।
এটা হচ্ছে বিএনপির দেউলিয়াপনার চূড়ান্ত রুপ। কারণ, তাদের কোনো কর্মসূচি জনগন মেনে নিচ্ছে না। রাস্তা ঘাটের তীব্র জানজট সেটাই প্রমাণ করছে। তারপরও বিএনপি তারেকের কথায় মেতে নিজেদের রাজনীতির অস্তিত্ত্ব’ই লুটিয়ে ফেলেছে। দেশে অসহযোগ আন্দোলন করার মতো কোনো পরিস্থিতি যেখানে নেই সেখানে বিএনপি নেমেছে এই অসহযোগ আন্দোলনে। আর কদিন পর কোনো কর্মসূচিই তারা খুঁজে পাবেনা বলে খুশী আওয়ামী লীগ নেতারা।
ওদিকে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে— বলে অভিযোগ চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। এই অভিযোগে রাশিয়া অন্তত তিনটি বার্তা দিয়েছে বিভিন্ন সময়ে। সর্বশেষ বার্তায় রাশিয়ার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, বাংলাদেশে একটি আরব বসন্ত ঘটাতে চেয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সেখানে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধেও কিছু অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে।
এ নিয়ে আজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। কিন্তু এই প্রশ্ন এড়িয়ে যান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। তিনি পরিষ্কারভাবে বলেন যে, বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দেখতে চায়। এর বাইরে কোন কিছু নয়। এমনকি ট্রেনের নাশকতার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলেও, সেই প্রশ্নের বিষয়ে তিনি তার অজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে যেহেতু তিনি কিছু জানেন না, তাই মন্তব্য করতে রাজি নন।
গত কিছুদিন ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে এক রহস্যময় নীরবতা পালন করছে। এই নীরবতার অর্থ কি—তা নিয়ে কূটনৈতিক অঙ্গনে নানা রকম বিচার বিশ্লেষণ এবং আলাপ আলোচনা চলছে। অনেকেই মনে করেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিষয়টি এখন ভারতের ওপর ছেড়ে দিয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের মধ্যে বাংলাদেশ ইস্যুতে আলোচনার মধ্য দিয়ে দুই পক্ষ একটি সমঝোতায় উপনীত হয়েছে। যে সমঝোতার শর্ত হিসেবে বাংলাদেশে নির্বাচন সংক্রান্ত চুলচেরা বিষয়গুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নয়, বরং ভারত পর্যবেক্ষণ করবে। ভারতের অবস্থানের সঙ্গেই সহমত পোষণ করবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আর এ কারণেই বাংলাদেশের নির্বাচন প্রসঙ্গ থেকে নিজেদেরকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গুটিয়ে নিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস এখন এক ধরনের নীরবতা পালন করছেন। অথচ কয়েক মাস আগেই তিনি অত্যন্ত সরব এবং ব্যস্ত ছিলেন। নির্বাচন নিয়ে তিনি প্রতিদিনই কারও না কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন, কথা বলতেন।
এর কারণ হচ্ছে, ভারতের সঙ্গে একটি কৌশলগত সমঝোতার কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই নীরবতা অবলম্বন করছে কি না—সেটি নিয়ে জোর আলোচনা এবং গুঞ্জন চলছে। তবে কেউ কেউ মনে করে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিষয় নিয়ে কৌশল পরিবর্তন করেছে, কিন্তু তাদের অবস্থান পাল্টায়নি। এখনও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ব্যাপারে তাদের আগের অবস্থানেই অনড় রয়েছে। যেহেতু নির্বাচনে বিএনপি আসেনি, ২৮ অক্টোবরের পর একটি ভিন্ন ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, সেই কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন আগ বাড়িয়ে বাংলাদেশের ব্যাপারে কোন কিছু বলতে চাচ্ছে না।
বরং বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কীভাবে হয়, কতটুকু অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় সেই বিষয়টি তারা পর্যবেক্ষণ করতে চাচ্ছে। নির্বাচন যদি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ না হয় সেক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচনকে অস্বীকৃতি প্রদানসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। আর যদি নির্বাচন সুষ্ঠু হয়, ভোটারদের উপস্থিতি যদি সন্তোষজনক হয়, সেক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার নীরবতার সুফল ভোগ করে নতুন সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন বাণিজ্যিক এবং আর্থিক বিষয়গুলোকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
কেউ কেউ মনে করছেন যে, ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিবর্তনের একটি বড় কারণ। কারণ বিশ্বে এখন মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনেকটাই কোণঠাসা। তাছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কোন সাফল্যের বার্তা নেই। এরকম পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ নিয়ে নতুন একটি বিতর্কে জড়িয়ে নির্বাচনের আগে জো বাইডেন নতুন পরিস্থিতি তৈরি করতে চান না। এই কারণেই বাংলাদেশের নির্বাচনের প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র—এমনটাই মনে করেন কেউ কেউ। তবে যে যাই মনে করুক না কেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে দৃষ্টি রাখছে এবং যেকোনো মূল্যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন যেন হয়, সে ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশার কোন পরিবর্তন হয়নি। আসলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অবস্থান কী—তা বোঝা যাবে আগামী নির্বাচনের পর।
এবার তারেক জিয়ার কর্মসূচি ঘোষণা-
এবার তারেক জিয়া কর্মসূচি ঘোষণা-করলো। সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। নতুন কর্মসূচি অনুযায়ী আগামী ২১, ২২ ও ২৩ ডিসেম্বর লিফলেট বিতরণসহ গণসংযোগ এবং ২৪ ডিসেম্বর সকাল-সন্ধ্যা অবরোধ। বুধবার (২০ ডিসেম্বর) বিকেলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।এর আগে ‘একতরফা’ নির্বাচনে ভোট বর্জনসহ সরকারের বিরুদ্ধে ‘সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনে’র কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। অসহযোগে রয়েছে- ৭ জানুয়ারি ভোট বর্জন, ভোট কেন্দ্রে না যাওয়া, নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্বাচনী দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকা, সেবামূলক কর, খাজনাসহ বিভিন্ন প্রদেয় না দেওয়া, ব্যাংকে অর্থ আমানত না রাখা এবং আদালতে হাজিরা না দেওয়া।
বুধবার দুপুরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এই ঘোষণা দেওয়ার পরপরই দুপুরে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গণমাধ্যমের কাছে এই কর্মসূচি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বিএনপিসহ সব আন্দোলনরত দল এবং জনগণের পক্ষ থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। এই ঘোষণায় বলা হয়েছে যে, প্রতিটি নাগরিকের অধিকার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে আজ থেকে সরকারকে সব ধরনের অসহযোগিতা শুরু করার বিকল্প নেই। এই মুহূর্ত থেকে এই সরকারকে সহযোগিতা না করার জন্য প্রশাসনের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং দেশপ্রেমিক জনগণের প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি।
গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ পুলিশ পণ্ড করে দেওয়ার পর ‘একতরফা’ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর বিএনপিসহ সমমনা জোটগুলো চার দফায় ৫ দিন হরতাল ও ১১ দফায় ২২ দিন অবরোধ কর্মসূচি করে। এরপর অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটি।