৫৬ গুজবে প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে গুজব ছড়ানোর পাশাপাশি বাংলাদেশ পুলিশকে নিয়ে ২৪টি, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালকে নিয়ে ১৮টি, কূটনীতিক, বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোকে উদ্ধৃত করে ১৭টি গুজব চিহ্নিত করেছে রিউমর স্ক্যানার।
বিশেষ প্রতিনিধি : নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত তিন মাসে সর্বোচ্চ ৫৬টি গুজব ছড়ানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে। এরপরই বেশি গুজবের শিকার হয়েছে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় বাহিনী। আর এ কাজে ব্যবহার করা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউব প্ল্যাটফর্ম। যদিও এ প্রতিষ্ঠান দুটি নির্বাচনি গুজব ঠেকাতে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছিল।
রিউমর স্ক্যানার প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকের মাসভিত্তিক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংখ্যার দিক থেকে ডিসেম্বরে ২১৫টি, নভেম্বরে ১৭৫টি, অক্টোবরে ২১০টিসহ মোট ৬০০টি গুজবের ঘটনা চিহ্নিত করা গেছে।
যদিও ফেসবুক কর্তৃপক্ষ গত ডিসেম্বরে জানায়, বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোর নির্বাচন সংক্রান্ত মিথ্যা কিংবা উসকানিমূলক কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণে তাদের ৪০ হাজার কর্মী কাজ করছেন। নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট যেকোনও তথ্যের স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গত ২৮ নভেম্বর বিশ্বের বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশগুলোর নির্বাচন নিয়ে পলিসি ঘোষণা করে ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা। বিটিআরসি বলছে, গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে ফেসবুক, টিকটক ও গুগলের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। তাতে সাড়া দিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে গুজব ছড়ানোর পাশাপাশি বাংলাদেশ পুলিশকে নিয়ে ২৪টি, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালকে নিয়ে ১৮টি, কূটনীতিক, বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোকে উদ্ধৃত করে ১৭টি গুজব চিহ্নিত করেছে রিউমর স্ক্যানার। মোট রাজনৈতিক গুজবের ৮৩.৭০ শতাংশ জাতীয় নির্বাচনকেন্দ্রিক।
অক্টোবরে রাজনীতি বিষয়ক ৮৪টি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন তৈরি করেছে রিউমর স্ক্যানার। এর মধ্যে নির্বাচনকে জড়িয়ে ছিল ৬৫টি। নভেম্বরে প্রতিষ্ঠানটির রাজনীতি বিষয়ক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন ৭৬টি। এর মধ্যে নির্বাচনকে জড়িয়ে ছিল ৬৬টি। সর্বশেষ ডিসেম্বরে তাদের রাজনীতি বিষয়ক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন ১১০টি। এর মধ্যে নির্বাচনকে জড়িয়ে ছিল ৯৫টি।
রিউমর স্ক্যানারের ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র গত তিন মাসে সর্বোচ্চ ৫৬টি গুজব ছড়ানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে। এর বিপরীতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে জড়িয়ে গুজব ছড়ানো হয়েছে ৭টি, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে জড়িয়ে ৬টি, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে নিয়ে ৪টি, গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি নুরুল হক নুরকে নিয়ে ৪টি, বিএনপি নেত্রী রুমিন ফারহানা ও বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে নিয়ে ৩টি করে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে ৩টি গুজব ছড়ানো হয়েছে।
রিউমর স্ক্যানারের হেড অব অপারেশন্স সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে বেড়েছে নির্বাচনকেন্দ্রিক গুজবের সংখ্যা। বছরের শেষ তিন মাসে ইন্টারনেটে রাজনৈতিক ও নির্বাচনকেন্দ্রিক গুজব ছড়ানো হয়েছে ফেসবুক ও ইউটিউবে ভুয়া শিরোনাম ও থাম্বনেইল সংবলিত ভিডিও এবং গণমাধ্যমের আদলে তৈরি ভুয়া ফটোকার্ডের মাধ্যমে। অক্টোবর মাসে ভুয়া ফটোকার্ডের আধিক্য থাকলেও ডিসেম্বর মাসে এসে ভুয়া শিরোনাম ও থাম্বনেইল সংবলিত ভিডিও’র আধিক্য পরিলক্ষিত হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফীন সিদ্দিক বলেন, ‘‘ডিজিটাল যুগে গুজব খুব বিশ্বাসযোগ্য করে উপস্থাপন করা যায়। ফলে শঙ্কার জায়গা বেশি। এ ধরনের গুজব থেকে অনেক সময় ‘শিক্ষিত মানুষেরাও’ বিভ্রান্ত হয়। ফলে এসব ঠেকাতে প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজন থাকা জরুরি।’’