বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ নিয়ে মিথ্যাচার ক্ষুব্ধ রনো
বিশেষ প্রতিনিধি : বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হায়দার আকবর খান রনো সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন-এর লেখা বই ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। সোমবার (৩ জানুয়ারি) পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ প্রতিক্রিয়া জানান। হায়দার আকবর খান রনোর বিবৃতি নিচে দেওয়া হলো-
‘সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন-এর লেখা একটি বই ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ আমার নজরে এসেছে। বইটি প্রকাশ করেছে চন্দ্রাবতী একাডেমি। যদিও শিরোনামে মহান ঐতিহাসিক পুরুষের নাম রয়েছে, বস্তুত বইয়ের ভেতরে অনেক অপ্রাসঙ্গিক, অবান্তর ও ভুল তথ্য রয়েছে। আমি তার সবগুলো নিয়ে আলোচনা করতে চাই না, কারণ তাতে আমার লেখাটি অনেক বড় হয়ে যাবে। আমি শুধু আমার প্রসঙ্গে যে বানোয়াট তথ্য পরিবেশিত হয়েছে, সেটার সম্পর্কেই কিছু কথা বলব।
বইটির ৭৮ পৃষ্ঠায় লেখক তাঁর ভাষায় যাঁরা ‘জিয়াউর রহমান ও এরশাদ-এর পদলেহন’ করেছেন, তাঁদের তালিকা দিয়েছেন, তার মধ্যে আমার নামও অন্তর্ভুক্ত করেছেন। রাজনীতি ও ইতিহাস সম্পর্কে যাঁদের সামান্যতম ধারণা আছে, তাঁরা জানেন যে, এটা কত বড় মিথ্যা ও বানোয়াট। বাষট্টি সাল থেকে ষাটের দশক জুড়ে বামপন্থী ছাত্রসংগঠন ছাত্র ইউনিয়ন ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ যে আন্দোলন করে এসেছে এবং গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়েছে, আমি তার একজন সংগঠক ছিলাম, তা কোনো অজানা বিষয় নয়। আমি ষাটের দশকে অনেকবার কারারুদ্ধ হয়েছি। প্রথমবার ১৯৬২ সালে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে একই সেলে (২৬ সেলে) থাকার বিরল সুযোগ আমার হয়েছিল। এসব খবর হয়তো মোমেন সাহেবের জানা নাও থাকতে পারে। কারণ তিনি তখন আইয়ুব খানের ছাত্রসংগঠন এনএসএফ করতেন। পরবর্তীতে আমি মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করেছি, সেটাও অজানা বিষয় নয়। বর্তমান সরকার প্রণীত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় আমার নামটি আছে। কিন্তু জনাব মোমেন মুক্তিযুদ্ধ থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করেছিলেন।
আমি যে জিয়া সরকার ও এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি, সে জন্যে বারবার হুলিয়া হয়েছে এবং আমার বাসায় যে মিলিটারি পুলিশ কতবার রেইড করেছে, তা আমার পক্ষে হিসেব করে বলা কঠিন। জনাব মোমেন এসব কথা জানেন না, কারণ তিনি তখন ছিলেন রাজনীতির বাইরে সরকারের একজন মধ্য-স্তরের কর্মচারী। তাঁর জ্ঞাতার্থে জানাতে চাই যে, কাজী জাফর আহমেদ জিয়ার মন্ত্রীসভায় গেলে আমি এবং রাশেদ খান মেনন তাঁর বিরোধিতা করি এবং সে কারণে আমাদের তখনকার দল ইউপিপি ভেঙে যায়। মেনন এবং আমি জিয়ার ‘হ্যাঁ-না’ ভোটের তীব্র বিরোধিতা করেছিলাম। প্রসঙ্গত বইয়ের ১৬ নং পৃষ্ঠায় তিনি জিয়ার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
এরশাদ-বিরোধী আন্দোলন শুরু হয় ১৫ দলের যে যৌথ বিবৃতি দিয়ে, যার প্রথম স্বাক্ষরটি ছিল বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার, সেই যুক্ত বিবৃতিতে আমার স্বাক্ষরও ছিল। এরশাদ-বিরোধী আন্দোলন ও ৯০-এর গণঅভ্যুত্থানে আমার সক্রিয় ভূমিকা তখনকার কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব অথবা বর্তমানের কোনো সৎ ঐতিহাসিকের অজানা থাকার কথা নয়। কিন্তু সেটা জানেন না বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আমার সম্পর্কে তিনি যে মন্তব্য করেছেন, তা শুধু ভুলই নয়, অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতও বটে। আমি তাঁর এই মিথ্যা বক্তব্য প্রত্যাহার করার জন্যে আহ্বান রাখছি।’