মাসে ১কোটি টিকা
বিশেষ প্রতিনিধি : বিশ্বে করোনাভাইরাস মহামারীর সংকট যে এখনও কাটেনি, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে সবাইকে শিগগিরই টিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, চলতি মাস থেকে গণটিকা কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রতি মাসে এক কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনার কর্মসূচি নিয়েছে তার সরকার। আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান মেয়াদের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে শুক্রবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে শেখ হাসিনা বলেন, মহামারীর কারণে এক গভীর সঙ্কটের মধ্য দিয়ে আমাদের বিগত ২০২০ এবং ২০২১ সাল অতিক্রম করতে হয়েছে। সেই সঙ্কট এখনও কাটেনি। এর মধ্যেই আবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নতুন করে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। আমাদের এখনই সাবধান হতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। যারা টিকা নেননি তাদের দ্রুত টিকা নেওয়ার অনুরোধ জানাই।
দুই বছর আগে বিশ্বে নতুন করোনাভাইরাসের মহামারী শুরুর পর গত বছরের প্রথম ভাগে বিপর্যয় নিয়ে আসে এ ভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। এরপর টিকাদানসহ নানা পদক্ষেপে পরিস্থিতির যখন উন্নতি হচ্ছিল, তখন গতবছরের শেষে দক্ষিণ আফ্রিকায় দেখা দেয় নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন।এ ভ্যারিয়েন্টই এখন দাপট দেখাচ্ছে বিশ্বজুড়ে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে রোগীর সংখ্যা আবার হু হু করে বাড়ছে। ফ্রান্সের স্বাস্থ্যমন্ত্রী অলিভার ভেরানের ভাষায়, ওমিক্রন যা ঘটাচ্ছে, তাকে আর সংক্রমণের ঢেউ বলা চলে না, এটা রীতিমত ‘জলোচ্ছ্বাস’।
বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারতে ওমিক্রনে আক্রান্তের সংখ্যা তিন হাজার ছাড়িয়ে গেছে। জিনোম সিকোয়েন্স করে বাংলাদেশেও ২০ জনের ক্ষেত্রে ওমিক্রমণের সংক্রমণের তথ্য মিলেছে।গবেষকরা বলছেন, দুই ডোজ টিকা ওমিক্রনের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে না পারলেও গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এড়াতে সহায়তা করছে। আর তৃতীয় বা বুস্টার ডোজ নিলে তা ওমিক্রনের সংক্রমণ থেকে কিছুটা সুরক্ষা দিতে পারছে। দেশে এখন পূর্ণোদ্যমে টিকাদান কার্যক্রম চলছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেন, এখন পর্যন্ত ১২ কোটি ৯৫ লাখ ৮০ হাজার ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ডোজ পেয়েছেন প্রায় ৭ কোটি ৫৮ লাখ এবং দুই ডোজ পেয়েছেন ৫ কোটি ৩৫ লাখ ৮২ হাজার মানুষ।
সব মিলিয়ে দেশের ৪৪ শতাংশের বেশি মানুষ অন্তত এক ডোজ টিকা পেয়েছেন, দুই ডোজ পেয়েছেন ৩১ শতাংশের বেশি নাগরিক। এছাড়া গতমাস থেকে বুস্টার ডোজ দেওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের হাতে সাড়ে ৯ কোটির বেশি ডোজ টিকা মজুদ আছে।তৃণমূলের মানুষকেও টিকার আওতায় আনতে গত বছর কয়েক দফা গণটিকা কার্যকম চালিয়েছিল সরকার। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে সেপ্টেম্বর মাসে দুই দিনেই ৮৩ লাখের বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছিল।
মহামারী যে বিশ্ব অর্থনীতিতে এক ‘গভীর ক্ষতের’ সৃষ্টি করেছে, সে বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক দেশের অর্থনীতিতে ধস নেমেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিও ক্ষতির মুখে পড়েছে, নেমে এসেছিল স্থবিরতা। তবে, আপনাদের সহায়তায় আমরা তা অনেকটা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি। বিভিন্ন নীতি-সহায়তা এবং বিভিন্ন উদার-নৈতিক আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ প্রদানের মাধ্যমে আমরা অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
এখন পর্যন্ত ২৮টি প্যাকেজের মাধ্যমে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এর মধ্যে অক্টোবর পর্যন্ত ১ লাখ ৬ হাজার ৫২২ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে, যা মোট বরাদ্দের ৫৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এতে প্রায় ৬ কোটি ৭৪ লাখ মানুষ এবং প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার প্রতিষ্ঠান উপকৃত হয়েছে।করোনাভাইরাসের অভিঘাত মোকাবিলা করেও গত অর্থবছরে দেশের জিডিপি ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ হারে বেড়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রক্ষেপণ অনুযায়ী জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০২১ সালে মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৫৪ মার্কিন ডলারে। করোনাভাইরাসের নতুন ঢেউ থেকে সবার সুরক্ষার জন্য প্রার্থনা রেখে প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণের শেষাংশে বলেন, সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।