‘ধরপাকড় বন্ধ সিসি ক্যামেরা সচল রাখুন’
নারায়নগঞ্জ প্রতিনিধি : নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে লক্ষাধিক ভোটে পাসের আশা প্রকাশ করে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার বলেছেন, তিনি মরে গেলেও ভোটের মাঠ ছাড়বেন না। শনিবার (১৫ জানুয়ারি) এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তৈমূর আলম খন্দকার। ইতোমধ্যে নাসিক নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণার সময় শেষ হয়েছে। রোববার (১৬ জানুয়ারি) ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
তৈমুর বলেন, আমি প্রচার না, সংবাদ সম্মেলন করছি। আমি ভোট চাইনি। আমার ঘরে আগুন লাগিয়ে দিলে আমি কী বলব না। আমার লোকজন গ্রেফতার হচ্ছে, আমার গলায় আপনি ফাঁসি লাগিয়ে দেবেন—আমি কথা বলতে পারব না, সেটা তো হবে না। এটা নৈতিক দায়িত্ব। মানুষের ওপর যত অত্যাচার হয় ভোটাররা তত ঐক্যবদ্ধ হয়।
তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, লক্ষাধিক ভোটে পাস করব। মরে গেলেও মাঠ ছাড়বো না। প্রশাসনকে বলব, জনগণের সেবা করা আপনাদের দায়িত্ব। বহুবার রিকোয়েস্ট করেছি এখন বিবেকের কাছে ছেড়ে দিলাম। আগামীকালের ভোট যাই হোক, আমরা মাঠে থাকব। গ্রেফতার হলে হবো কিন্তু নির্বাচন চালিয়ে যাবো।
তিনি বলেন, আজকে আপনাদের সামনে হাজেরা বেগম উপস্থিত আছেন। তিনি মহানগর শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদকের স্ত্রী। তিনি আমার বাড়িতে রাত ২টা পর্যন্ত ছিল। তাকে ঈদগাহের সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও চারজনকে প্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বেশিরভাগই আমার দলের গুরুত্বপূর্ণ পদের নেতা এবং নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করছে। এমনকি সরকারি দলের সদস্যদেরও হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। পাঠানটুলি এলাকার ছেলে আহসান, সে-ই এলাকায় আমার নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করেছিল। তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমি এখনো তার খোঁজ পাইনি।
তিনি আরও বলেন, এখানে অনেক লোক আছেন, যারা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন। এদের মধ্যে এমন কোনো লোক নেই, যাদের বাড়িতে দুই থেকে তিনবার লোক যায়নি। প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই, আপনি আমাদের ওপর এত অত্যাচার করছেন কেন? প্রশাসনের এহেন কাজে আপনার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। মহানগর ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক পাপনও কাল এখানে ছিল। তাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। এভাবে আমার লোকদের গ্রেফতার করা হলে নির্বাচন কমিশন যে বলছে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে—এটাই কী সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রক্রিয়া।
এই প্রার্থী বলেন, এখানে যারা আছেন, তাদের জিজ্ঞেস করে দেখেন পুলিশ কীভাবে অত্যাচার করছে। একটি অডিও ভাইরাল হয়েছে। ভোটারদের নৌকায় ভোট দেওয়ার জন্য প্রেসার দেওয়া হচ্ছে। নয়তো তাদের ভোট দিয়ে দেওয়া হবে।জেলা পুলিশ সুপারের বক্তব্যের প্রতিবাদে তৈমূর বলেন, আপনাদের মাধ্যমে যে কথা বলি, এটা কি তার কর্ণগোচর হয় না? এসব সাফাইয়ের কোনো ভিত্তি নাই। রবি কি মাদক ব্যবসায়ী, জামাল হোসেন কি হেফাজত। ১৯৫২ সালে যারা এ দেশের আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালিয়েছিল, তারা বাঙালি পুলিশই ছিল।
এর আগে শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি) রাত ১০টায় নিজ বাড়িতে আরেক সংবাদ সম্মেলনে স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার জানান, ‘বিভিন্ন স্কুলে কেন্দ্রের কক্ষে থাকা সিসি ক্যামেরা খুলে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন এমন নির্দেশ দিয়েছে বলে আমি জানতে পেরেছি। এর দ্বারা কী বোঝায়? নির্বাচনে হঠকারিতা, ভোট চুরি, হামলা ও পুলিশি নির্যাতন করার জন্যেই এই নির্দেশনা এসেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সিসি ক্যামেরা চলবে। সেখানে আমি কিছু করলেও ধরা পড়বে, অন্য কেউ করলেও ধরা পড়বে।’ তিনি বলেন, ‘আমি প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন কোথাও ন্যায়বিচার পাচ্ছি না। রাত ১০টার সময়েও নেতাকর্মীরা আমার বাসায় উপস্থিত। কারণ বিভিন্ন স্থান থেকে পুলিশের অভিযানের খবর পাচ্ছি টেলিফোনের মাধ্যমে। কিছুক্ষণ আগেও আশরাফ নামে এক কর্মীকে খানপুর থেকে পুলিশ আটক করেছে।’
তৈমুর বলেন, নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম যখন আসেন তখন আমি জানতে চেয়েছি, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না? তিনি বলেছিলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, নিশ্চিত থাকেন। আর আমি ২০১১ সালের মতোও বসবো না। কারণ এখন আর কামাল হোসেন (গণফোরাম নেতা ড. কামাল হোসেন) আর শফিক রেহমানের মতো লোক এখন আর বুদ্ধি দেওয়ার জন্য নাই।’
ইভিএম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রতি কেন্দ্রে অপারেটর রাখার কথা শুনেছি। অপারেটরের ইভিএম কেন্দ্রীক সকল কাজ এজেন্টের সামনে করতে হবে। আমাদের এজেন্ট বুথ ছেড়ে যাবে না। কিন্তু তাদের নিরাপত্তা দিতে হবে। ভোট নিয়ে আমাদের কোনো টেনশন নাই, কিন্তু ভোটের পরিবেশ নিয়ে আছে। এরই মধ্যে দেখেছি ভরাডুবির শংকায় তাঁরা আমাদের পুলিশ দিয়ে হয়রানি করছে।’