লাবণ্য চৌধুরী : এবার আফ্রিকার কোকেন মিলেছে ঢাকায়। সেই সঙ্গে ধরা পড়েছে ঢাকার কোকেন মাফিয়া’দের আফ্রিকান চর! যিনি পেশায় একজন নার্স। তাও ছোটো খাটো চালান নয়,একেবারে সোয়া ৮ কেজি কোকেন। যার বর্তমানর বাজার দর ১০০ কোটিরও বেশী। রহস্যের বিষয় হচ্ছে এর বাহক ধরা পড়লেও ঢাকার কোকেন মাফিয়ারা ধরা পড়েনি।
ঢাকার এত বড় কোকোনের চালান এটাই প্রথম। মাদক কর্মকর্তারা বাহককে ধরেই বাহবা নিচ্ছে।ওদিকে এত বড় কোকেনের চালানে ঢাকার মাফিয়ারা কি ধরা পড়বে সেটা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। যদিও মাদক কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছেন ঢাকার কোকেন মাফিয়াদের ধরতে।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকা হতে শতকোটি টাকার আট কেজি ৩০০ গ্রামের একটি কোকেনের চালার আটক করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ। দেশে আটক হওয়া সলিড কোকেনের এটাই সবচেয়ে বড় চালান বলে জানিয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) কর্মকর্তারা।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার রাতে অভিযান চালিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকার দেশ মালাওয়ের এক নারীর কাছ থেকে বিপুল পরিমাণের ওই কোকেনের চালান আটক করা হয়।
বিমান সূত্র দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে জানায়, কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে ঢাকায় কোকেন আনা অভিযুক্ত ওই নারীকে আটক করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে কোকেন উদ্ধারের বিস্তারিত জানান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন) তানভীর মমতাজ। তিনি বলেন, কোকেনের চালানটি আফ্রিকার দেশ মালাওয় অথবা ইথিওপিয়া থেকে বাংলাদেশে এসেছে। কোকেন পাচারের জন্য বাংলাদেশকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিলো না ঢাকাতেই কোকেনের চালানটি পাচার করে আনা হয়েছে তা তিনি নিশ্চিত হতে পারেননি।
তানভীর মমতাজ বলেন, কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে একজন আফ্রিকান নাগরিকের মাধ্যমে ঢাকায় কোকেন আনা হবে- এমন তথ্য পেয়ে আমরা নজরদারি বাড়াই। বুধবার এপিবিএন সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি টিম বিমানবন্দরের আট নম্বর টার্মিনালের বোর্ডিং ব্রিজ এলাকায় অবস্থান নেয়। ফ্লাইটটি থেকে নামা সকল বিদেশি যাত্রীকে আমরা ফলো করি।
পরে আমরা দেখতে পাই যে, নোমথেনডাজো তাওয়েরা সোকো নামে এক বিদেশি নারী বিমানবন্দরের ভিসা অন অ্যারাইভাল ডেস্কে অবস্থান করছেন। তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে সন্দেহজনক মনে হলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেন যে, তার লাগেজে কোকেন আছে। পরে লাগেজের ভেতর লুকিয়ে রাখা আট কেজি ৩০০ গ্রাম কোকেন জব্দ করা হয়। জব্দ করা মাদকের মূল্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা।
তাওয়েরা সোকো মালাওয়ের নাগরিক জানিয়ে তানভীর মমতাজ বলেন, তিনি প্রথমে মালাওয় থেকে ইথিওপিয়া যান। এরপর ইথিওপিয়া থেকে দোহা গিয়ে কাতার এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে বাংলাদেশে আসেন। কোকেনের চালান বাংলাদেশে আরেক বিদেশি নাগরিকের কাছে পৌঁছে দিয়ে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ থেকে আবারো মালাওয়ে তার ফিরে যাওয়ার কথা ছিলো বলে জানান ডিএনসির পরিচালক।
তানভীর মমতাজ আরো বলেন, কোকেনের চালানটি বাংলাদেশকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করে অন্য কোনো দেশে চলে যেতো। আমাদের ধারণা, কোকেনের এই চালানটি মালাওয় বা বা ইথিওপিয়া থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। পেশায় নার্স তাওয়েরা সোকো বছরখানেক আগে একবার বাংলাদেশে এসেছিলেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন। গতবারের মতো এবারো তিনি বাংলাদেশের একটি গার্মেন্টসের আমন্ত্রণপত্র নিয়ে আসেন।
অন এ্যারাইভাল ভিসা নেওয়ার জন্য তিনি তার পরিচয় লুকিয়ে গার্মেন্টস ব্যবসার নাম করে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করছিলেন বলে জানান তানভীর মমতাজ। তিনি আরো বলেন, কোকেনের চালানের সঙ্গে কারা জড়িত আছেন, তা বের করার তদন্ত চলছে।