আন্তর্জাতিক

আজ বিরল সূর্যগ্রহণ উত্তর আমেরিকা’য়

 

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক : আজ ৮ এপ্রিল সোমবার ৫৪ বছর পর এক বিরল সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে। সূর্য ও পৃথিবীর মধ্যকার কক্ষপথে চাঁদ এসে পড়লে চাঁদের ছায়ায় পৃথিবীর একটা অংশ সম্পূর্ণ ঢেকে যায়। এতে সেখানে দিনের বেলায় নেমে আসে অন্ধকার। মহাজাগতিক এ ঘটনাকে বলে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ। এমনই পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ সোমবার হবে বলে জানিয়েছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।

বছরের প্রথম এই পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে মেক্সিকো, আমেরিকার কয়েকটি রাজ্য ও কানাডার নির্দিষ্ট কিছু স্থান থেকে। এছাড়া স্পেন, যুক্তরাজ্য, পর্তুগালসহ কয়েকটি দেশ থেকে আংশিক সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে। তবে সূর্যগ্রহণটি বাংলাদেশ থেকে দেখা যাবে না; দেখা যাবে উত্তর আমেরিকা থেকে।যা নিয়ে বিশ্বের সর্বত্র চলছে নানা আলোচনা। এই সূর্যগ্রহণ দেখতে দলে দলে উত্তর আমেরিকায় আসছে মানুষ। সংবাদ মাধ্যমের বরাতে জানা যাচ্ছে, এই সূর্যগ্রহণ বেশ বিরল। এই সূর্যগ্রহণের বিশেষত্ব কী আসলে?

খালি চোখে সূর্যগ্রহণ দেখা ঝুঁকিপূর্ণ। শুধু খালি চোখেই নয়। ক্যামেরা, বাইনোকুলার বা দুরবিন দিয়েও দেখা উচিত নয়। নাসার ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।কারণ, এর আগে এরকম সূর্যগ্রহণ দেখা গিয়েছিল ১৯৭০ সালে। পরেরবার এর দেখা পেতে অপেক্ষা করতে হবে আরও ৫৪ বছর।

এর মানে, ফের ২০৭৮ সালে এরকম সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে। মাত্র ১০০ মিনিট স্থায়ী হবে এই গ্রহণ। মাঝে যেসব সূর্যগ্রহণ হবে, সেগুলো দেখার সুযোগ থাকবে না। যেমন ২০২৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি একটি পূর্ণসূর্যগ্রহণ হবে। তবে এটি দেখা যাবে অ্যান্টার্কটিকা থেকে। বুঝতেই পারছেন, সে জিনিস দেখার কোনো উপায় নেই।

সূর্যগ্রহণের কথা শুনলেই এককালে আঁতকে উঠত মানুষ। মনে করত, দেবতা রুষ্ট হয়েছে। অথচ এখন পরিস্থিতি বদলেছে। শুধু বদলাইনি, দলে দলে সূর্যগ্রহণ দেখতে যাচ্ছে মানুষ!পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদ। অর্থাৎ চাঁদ পৃথিবীকে ঘিরে ঘুরছে। এই চাঁদ ও পৃথিবী মিলে একটি যুগ্মব্যবস্থা। এই চাঁদ-পৃথিবী আবার একসঙ্গে সূর্যকে ঘিরে ঘোরে।

মজার বিষয় হলো, সূর্যকে পৃথিবী যে তলে প্রদক্ষিণ করে, চাঁদ সেই একই তলে পৃথিবীকে ঘিরে ঘোরে না। পৃথিবী সূর্যকে যে তলে প্রদক্ষিণ করে, তার একটা নাম আছে। অয়ন বৃত্ত। চাঁদের কক্ষপথ এই অয়ন বৃত্তের সঙ্গে পাঁচ ডিগ্রি কোণ করে ঘোরে। এই পাঁচ ডিগ্রি কোণের কারণেই চাঁদ, পৃথিবী ও সূর্য এক সরলরেখায় থাকে না। তবে ঘুরতে ঘুরতে প্রতিবছর চাঁদের কক্ষপথ দুইবার এই অয়নবৃত্তকে ছেদ করে। মানে, দুবার চাঁদ, পৃথিবী ও সূর্য এক সরলরেখায় চলে আসে। এ সময়ই হতে পারে গ্রহণ। আর ঘুরতে ঘুরতে চাঁদ পৃথিবী ও সূর্যের ঠিক মাঝখানে চলে এলেই ঘটে সূর্যগ্রহণ।

কিন্তু চাঁদ তো একটা ছোট জিনিস। এটা সূর্যকে ঢেকে দেয় কীভাবে? একদম সরল করে বলা যায়, চাঁদের ব্যাস সূর্যের ব্যাসের তুলনায় ৪০০ গুণ ছোট। কিন্তু পৃথিবী থেকে চাঁদের যে দূরত্ব, সূর্য আছে তার ৪০০ গুণ দূরে। সে কারণেই পৃথিবী থেকে দেখে মনে হয়, চাঁদ সূর্যকে ঢেকে দিয়েছে। তবে সব সময় পুরো ঢেকে দিতে পারে না। এ কারণে সূর্য কতটা ঢাকা পড়ল, তার ওপর ভিত্তি করে সূর্যগ্রহণকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়।

চাঁদ যদি সূর্যকে সম্পূর্ণ ঢেকে না ফেলে আংশিক ঢেকে ফেলে, তাহলে একে বলে আংশিক সূর্যগ্রহণ। ইংরেজিতে পার্শিয়াল সোলার ইক্লিপস। আবার চাঁদের কক্ষপথ উপবৃত্তাকার। তাই এটি কখনো পৃথিবীর কাছে থাকে, তখন বড় দেখায়। কখনো আবার দূরে থাকে, তখন দেখে মনে হয় চাঁদ ছোট হয়ে গেছে।

চাঁদ যদি পৃথিবী ও সূর্যের ঠিক মাঝখানে থাকে, কিন্তু পৃথিবী থেকে খানিকটা দূরে থাকে, তখন এই ছোট চাঁদ সূর্যকে পুরো ঢেকে দিতে পারে না। এ সময় সূর্যগ্রহণ হয় বটে, তবে দেখে মনে হয়, অন্ধকার একটা গোলকের চারপাশে যেন আগুনের বলয় বা রিং ঝুলে আছে আকাশের পটে।

এটাকে বাংলায় বলে বলয় গ্রাস। ইংরেজি নাম, অ্যানুলার সোলার ইক্লিপস। আর চাঁদ সূর্যকে পুরোপুরি ঢেকে দিতে পারে, মানে পৃথিবীর কাছাকাছি থাকে, তখন পূর্ণ সূর্যগ্রহণ হয়। ইংরেজিতে যাকে বলে টোটাল সোলার ইক্লিপস। এই আসন্ন সূর্যগ্রহণটি ঠিক তাই। পূর্ণ সূর্যগ্রহণ।

প্রতি দেড় বছরে একবার পূর্ণ সূর্যগ্রহণ হয়। তবে এ গ্রহণ সব জায়গা থেকে দেখা যায় না। শুধু সঠিক জায়গা থেকেই দেখা যায়। বর্তমান পূর্ণ সূর্যগ্রহণটি যেমন দেখা যাবে উত্তর আমেরিকা থেকে। এ অঞ্চলের তিনটি দেশ—যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডার অধিবাসীরা এ সূর্যগ্রহণ দেখতে পারবেন। এটি প্রথম দেখা যাবে মেক্সিকোর প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলে, স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ৭ মিনিটে। বিবিসি, সিএনএনসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৪ কোটি মানুষ এই সূর্যগ্রহণ স্বচক্ষে দেখতে স্থানীয় এলাকাগুলোয় ভিড় জমাচ্ছেন। সূত্র: নাসা, বিবিসি, সিএনএন, এনবিসি

সংশ্লিষ্ট খবর

Back to top button