পিলখানা ট্রাজেডি কবে নিষ্পত্তি
কোর্ট রিপোর্টার : কবে নিষ্পত্তি হবে পিলখানা ট্রাজেডি । একদল বিপথগামী বিডিআর অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের পাশাপাশি তৎকালীন মহাপরিচালকসহ ৫৭ জন বিভিন্ন পর্যায়ের সেনা কর্মকর্তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। বর্বরোচিত এই হত্যাকাণ্ডের ১৩ বছর পার হয়ে গেলেও এখনও আসামিদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া কোনও মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি। নিম্ন আদালত থেকে হত্যা মামলার রায় উচ্চ আদালত হয়ে এখন আপিল বিভাগে আটকে আছে।
রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি-বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) বিদ্রোহের ১৩ বছর হলো আজ শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি)। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআর (বাংলাদেশ রাইফেলস)-এর বিপথগামী কিছু সদস্য দাবি আদায়ের নামে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল সদর দফতর পিলখানায়। অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের পাশাপাশি তৎকালীন মহাপরিচালকসহ ৫৭ জন বিভিন্ন পর্যায়ের সেনা কর্মকর্তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
বিপথগামী বিদ্রোহীদের হাত থেকে রেহাই পায়নি নারী ও শিশুরাও। তারা নারী ও শিশুসহ ১৭ জন বেসামরিক নাগরিককেও নির্মমভাবে হত্যা করে। রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, উচ্চ আদালতের রায়ের বিপরীতে ২০২১ সালে অর্থাৎ গত বছর আপিল ফাইল হয়েছে। এই ফাইল প্রস্তুত হলে শুনানি শুরু হবে। আর বিস্ফোরক মামলার নিষ্পত্তির বিষয়টি ওই আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর বলতে পারবেন।
বিজিবি ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা গেছে, ২০০৯ সালের বর্বরোচিত এই ঘটনার পর দুটো ফৌজদারি মামলা দায়ের হয়। এরমধ্যে বিস্ফোরক মামলাটির শুনানি এখনও নিম্ন আদালতে চলছে। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর নিম্ন আদালত হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। ওই রায়ে ৮৫০ জন আসামির মধ্যে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া ২৭৮ জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। রায় ঘোষণার আগেই মারা যান চার আসামি। নিম্ন আদালতের রায়ের বিপরীতে আসামিরা উচ্চ আদালতে গেলে শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ নভেম্বর ৫৫২ জনকে বিচারের আওতায় এনে বাকি ২৮৩ জনকে খালাস দেন আদালত। উচ্চ আদালতে শুনানি চলাকালে আরও ১১ জনের মৃত্যু হওয়ায় মোট ৮৩৫ জনের বিরুদ্ধে শুনানি করা হয়। নিম্ন আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া ১৫২ জনের মধ্যে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন উচ্চ আদালত। ৮ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫ জনকে খালাস দেন হাইকোর্ট। এরপর আসামিদের অনেকেই আপিল বিভাগে আপিল করেন, যার শুনানি শুরু হয়নি। আর বিস্ফোরক মামলাটির বিচার এখনও চলছে নিম্ন আদালতেই।
বিজিবি সূত্র জানায়, এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শহীদ ব্যক্তিদের স্মরণে শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়। দিনের কর্মসূচির মধ্যে ছিল শহীদদের রুহের মাগফেরাতের উদ্দেশে পিলখানাস্থ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদর দফতরসহ সব রিজিয়ন, প্রতিষ্ঠান, সেক্টর ও ইউনিটের ব্যবস্থাপনায় খতমে কোরআন, বিজিবি’র সব মসজিদ এবং বিওপি পর্যায়ে শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল কা হয়। এছাড়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টায় বনানী সামরিক কবরস্থানে রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তিন বাহিনীর প্রধানরা (সম্মিলিতভাবে), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব এবং বিজিবি মহাপরিচালক (একত্রে) শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। একইসঙ্গে দিবসটি পালন উপলক্ষে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর সব স্থাপনায় বিজিবির পতাকা অর্ধনমিত রাখে। বিজিবি’র সব সদস্য কালো ব্যাজ পরিধান করে।