‘উইমেন্স ওয়ার্ল্ডে’- পর্ণোগ্রাফি মাফিয়া!
নারীদের স্পর্শকাতর আপত্তিকর ভিডিও পাচার সন্দেহ-
বিশেষ প্রতিনিধি : রাজধানীর ধানমন্ডির স্বনামধন্য বিউটি পার্লার উইমেন্স ওয়ার্ল্ডে নারীদের স্পর্শকাতর আপত্তিকর ভিডিও পর্ণোগ্রাফি মাফিয়াদের কাছে পাচার হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। ওই পার্লারটির নারী মালিকদের সন্দেহ করছেন ভুক্তভোগীরা। ঘটনা ধামাচাপা দিতে মোটা অংক নিয়ে তদবিরের কাজ করছে পার্লারটির মালিকরা।
তবে পুলিশ এখনো এনিয়ে সন্দিহান। তবে ম্যাসাজ ও পোশাক পরিবর্তন করার কক্ষে গোপনে ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ পর্নোগ্রাফিতে ব্যবহার করা হয়েছে কি না তা জানতে কাজ করছে পুলিশ। এরই মধ্যে উইমেন্স ওয়ার্ল্ড থেকে জব্দ করা সিসিটিভি ফুটেজ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) পাঠানো হয়েছে। সংস্থাটির বিশেষজ্ঞরা বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখছেন।
পুলিশ বলছে, ধানমন্ডির সাতমসজিদ রোডের ৮০ নম্বর বাড়ির তৃতীয় তলায় উইমেন্স ওয়ার্ল্ড নামের একটি বিউটি পার্লারে অত্যন্ত সুকৌশলে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পার্লারে আগত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারীদের পোশাক পরিবর্তন, ম্যাসাজ রুমে গোপন ও স্পর্শকাতর ভিডিও ধারণ ও সংরক্ষণ করে রাখা হতো। প্রতিষ্ঠানটি এসব ভিডিও পর্নোগ্রাফিতে ব্যবহার না করলেও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে৷ কারণ, স্পর্শকাতর এসব ভিডিও তারা সেবা নিতে আসা নারীদের অনুমতি ছাড়াই ধারণ করেছিল। আর যদি এসব ফুটেজ পর্নোগ্রাফিতে ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে মামলায় ধারা আরও বাড়বে।
এদিকে ঘটনার পর উইমেন্স ওয়ার্ল্ডের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে আদালতে আবেদন করে পুলিশ। এতে বন্ধ ছিল তাদের কার্যক্রম। তবে সম্প্রতি বেশকিছু শর্তে তারা কার্যক্রম শুরু করেছে। বিশেষ করে সেবাপ্রত্যাশীদের কোনো ক্ষতি হয় কিংবা কোনো রুমে গোপনে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা যাবে না বলে নির্দেশ দেন আদালত।
গত ২৬ ডিসেম্বর উইমেন্স ওয়ার্ল্ড পার্লারের বিভিন্ন গোপন কক্ষে সিসি ক্যামেরা থাকার বিষয়টি পুলিশের নজরে আনেন একজন নারী। পরে ধানমন্ডি থানা পুলিশ সেখানে অভিযান চালিয়ে ঘটনার সত্যতা পায়। অভিযানে প্রতিষ্ঠানের তিনজনকে আটক করা হয়। তারা হলেন- প্রশাসনিক ব্যবস্থাপক এমদাদুল হাসান, মহাব্যবস্থাপক তসলিম আরিফ ইলিয়াস ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থাপক এইচ এম জুয়েল খন্দকার।
আর পুলিশের অভিযানের খবর পেয়ে উইমেন্স ওয়ার্ল্ডের মালিক তাসলিমা চৌধুরী কণা আলম ও তার মেয়ে এবং ধানমন্ডি ব্রাঞ্চ মালিক ফারনাস আলম পালিয়ে যান। পরে পুলিশ ফারনাস আলমকে গ্রেপ্তার করে; আর তাসলিম চৌধুরী কণা আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পান। বর্তমানে এই মামলায় পাঁচজনই জামিনে রয়েছেন।
ধানমন্ডি থানার ওসি পারভেজ ইসলাম বলেন, মামলাটির তদন্ত চলছে। আমরা সিআইডির প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আছি। সেটি পেলেই আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছেন ধানমন্ডি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মমিনুল ইসলাম খোকন। বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, “অভিযানে যেসব সিসিটিভি ফুটেজ জব্দ করা হয়েছে সেগুলো ফরেনসিকের জন্য সিআইডিতে পাঠানো হয়েছে। সিআইডির রিপোর্ট এলেই আদালতে প্রতিবেদন জমা দিতে পারব।”
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, “আমরা দেখছি এই ফুটেজ পর্নোগ্রাফিতে ব্যবহার করা হয়েছে কি না। যদি ফরেনসিকে তেমন কিছু আসে তাহলে সেভাবেই প্রতিবেদন দেওয়া হবে। আর যদি এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া না যায় তারপরেও প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফি আইনে প্রতিবেদন দেব। কারণ, তারা সেবা নিতে আসা নারীদের না জানিয়ে গোপনে এসব ভিডিও করেছিল, যা গুরুতর অপরাধ।”
কেন তারা নারীদের ম্যাসাজ ও পোশাক পরিবর্তনের কক্ষে গোপন ক্যামেরা বসিয়ে ভিডিও ধারণ করছিল সে বিষয়ে কিছু জানা গেছে কি না জানতে চাইলে এসআই খোকন বলেন, “তারা দাবি করছে, গ্রাহকের নিরাপত্তার জন্যই এটা করেছে। অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। তবে তাদের এমন কথার আইনি কোনো ভিত্তি নেই।
পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে করা পুলিশের মামলায় বলা হয়, অভিযানকালে পার্লারটি থেকে গোপন ভিডিও ধারণ-সংরক্ষণের আলামত জব্দ করা হয়, যেখানে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে পার্লারে সেবা নিতে আসা নারীদের আপত্তিকর-স্পর্শকাতর ভিডিও অসৎ উদ্দেশ্যে ধারণ-সংরক্ষণ করে।
এছাড়া পোশাক পরিবর্তনের আপত্তিকর দৃশ্য ধারণ করা হতো, যা ঘটনার সময় আটককৃতরা স্বীকার করেছেন। বিউটি পার্লারে অভিযানে আটটি সিসি ক্যামেরা ও ক্যামেরার ডিভিআর জব্দ করে পুলিশ। যেখানে অসংখ্য নারীর গোপন ভিডিও ধারণ করা ছিল। মামলায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২ এর ৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়।