বিএনপিকে মানছে না ‘উপজেলার নেতারা’ ১৪০ নেতা বহিস্কার
দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থেকে উপজেলার নেতারা যেন অতিষ্ঠ! তাই উপজেলার ভোটের মাঠে লড়াই করতে নামছেন একের পর এক নেতা। ওদিকে এতে নাখোশ বিএনপির হাই কমান্ড।
শফিক রহমান : উপজেলার ‘নেতারা’ মানছেন না বিএনপির হাইকমান্ডকে ! একের পর এক নেতা ভোটে দাড়িয়ে যাচ্ছেন বিএনপির হাই কমান্ডের নির্দেশ উপক্ষো করে। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থেকে উপজেলার নেতারা যেন অতিষ্ঠ! তাই উপজেলার ভোটের মাঠে লড়াই করতে নামছেন একের পর এক নেতা। ওদিকে এতে নাখোশ বিএনপির হাই কমান্ড। ফলে উপজেলায় ভোটে প্রার্থী হয়ে সেখানকার নেতারা একের পর এক বহিস্কারের শিকার হচ্ছেন। সর্বশেষ প্রায় দেড় শতাধিক বিএনপি নেতাকে বহিস্কার করেছে বিএনপি হাই কমান্ড।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় এ পর্যন্ত ১৪০ নেতাকে বহিষ্কার করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল–বিএনপি। দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় আজ শনিবার আরও ৬১ নেতাকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি।
শনিবার দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এর আগে উপজেলা পরিষদের প্রথম দফা নির্বাচনের ৭৯ প্রার্থীকে বহিষ্কার করেছিল বিএনপি। এ নিয়ে দুই দফায় ১৪০ জনকে বহিষ্কার করলো বিএনপি।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামী ২১ মে অনুষ্ঠিতব্য দ্বিতীয় ধাপে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিএনপির যে সকল নেতা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ ও মহিলা) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, তাঁদের দলীয় গঠনতন্ত্র মোতাবেক বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের বহিস্কৃতদের মধ্যে চেয়ারম্যান প্রার্থী ২৬ জন, ভাইস চেয়ারম্যান ১৯ জন, ১৬ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন।
এদিকে ভোট বর্জনের কঠোর নির্দেশ সত্ত্বেও এমন পরিস্থিতিতে বিরক্ত দলের শীর্ষ নেতৃত্বও। তবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় দলীয় নেতাদের বহিষ্কারের তালিকা দীর্ঘ হলে সেটি তৃণমূলের সংগঠনকে আরও দুর্বল করবে-এমন পর্যালোচনা বিএনপির ভেতরেও আছে। তবুও নাকি কঠোর অবস্থানে থাকবে দলটি। নেতাদের ভোট থেকে বিরত রাখার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে ইতোমধ্যে সাংগঠনিক টিমকে নানা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নেতাদের কতা পাত্তা দেয়নি উপজেলার নেতাকর্মীরা।
যদিও বিএনপি বলছে- বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কোনো নেতা ভোটে অংশ নেওয়া বহিষ্কৃৃতদের কোনোভাবে সহায়তা করলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু এসব কথায় উপজেলার নেতাদের চিঁড়ে ভেজেনি।জানা গেছে, দ্বিতীয় ধাপে ১৫৯ উপজেলা পরিষদে নির্বাচন হবে ২১ মে। মঙ্গলবার ছিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। এ ধাপেও ভোটে অংশ নেওয়া বিএনপি নেতাদের প্রথমে শোকজ করার কথা। কিন্তু বিএনপির হাই কমান্ডকে কোনো পাত্তাই দেয়নি উপজেলার নেতারা।
এরপর সাংগঠনিক ব্যবস্থা, অর্থাৎ বহিষ্কার করার ঘটনা ঘটল। তবে দ্বিতীয় ধাপেও এতসংখ্যক নেতার ভোটে অংশগ্রহণের কারণ খুঁজছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। এক্ষেত্রে দায়িত্বশীল নেতাদের কোনো ব্যর্থতা আছে কিনা-তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একাধিক নেতা জানান, নির্বাচন বর্জনে কঠোর নির্দেশ সত্ত্বেও যারা দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন, তাদের ব্যাপারে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব খুবই বিরক্ত।
জানা গেছে, প্রথম ধাপের নির্বাচনে যারা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত নির্বাচনের ব্যাপারে সিদ্ধান্তহীনতায় ছিল দলটি। এ কারণে প্রথম ধাপের প্রার্থীদের ব্যাপারে দল কিছুটা সময় নিয়েছে, সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় তাদের বুঝিয়ে নির্বাচন থেকে ফেরানোর চেষ্টা করেছে। শেষ পর্যন্ত একযোগে ৭৩ জনসহ দলীয় নির্দেশ অমান্য করে প্রার্থী হওয়া ৮০ জনকে বহিষ্কার করা হয়। সর্বশেষ মঙ্গলবারও চারজনকে বহিষ্কার করা হয়, যারা আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পান।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, ‘দেশে ভোটের কোনো অধিকার নেই। জনগণ ভোট দিতে পারে না, একদলীয় ভোট হয়। সেখানে অংশগ্রহণ করব না, তাই ভোট বর্জনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আমাদের সিদ্ধান্ত ভোট বর্জনের। কাজেই সিদ্ধান্তের ভালো দিকও আছে, খারাপ দিকও আছে। এখন কোন দিকটা কি হবে, না হবে সেটা আমরা বিবেচনা করছি, দেখছি।