বিশ্বসেরার কাতারে অগ্রণী ব্যাংক
লাবণ্য চৌধুরী : অর্থনৈতিক প্রযুক্তির রূপান্তরে মোবাইল ব্যাংকিং ও অ্যাপভিত্তিক উদ্ভাবনী সেবা চালুর মাধ্যমে নিজের সক্ষমতা বাড়িয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। শুধু নিজস্ব প্ল্যাটফর্ম উন্নয়নই নয়, দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে প্রযুক্তি উন্নয়নে সাফল্য পেয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক এ প্রতিষ্ঠানটি।কোর ব্যাংকিং সফটওয়্যার (সিবিএস) থেকে শুরু করে প্রবাসীদের আয় সহজে দেশে আনতে রেমিট্যান্স অ্যাপ এবং নতুন হিসাব খোলার জন্য ই-অগ্রণী সেবা রয়েছে ব্যাংকটির। দেশের প্রথম ব্যাংক হিসেবে ২০২০ সালের জুন মাসে মোবাইল আর্থিক সেবা বিকাশের সঙ্গে টুওয়ে ব্যাংকিং (ব্যাংক টু বিকাশ) সেবা চালু করে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড।অগ্রণী ব্যাংকের প্রযুক্তিগত রূপান্তর প্রসঙ্গে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামস্-উল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কোর ব্যাংকিংয়ে টেমেনস টোয়েন্টিফোর সফটওয়্যার ব্যবহার করা হচ্ছে, যেটি আর্থিক সেবায় বিশ্বের অন্যতম একটি সমাধান।
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের রেমিট্যান্সগুলোও আসছে রিয়ালটাইম। সেখানে একটা রেমিট্যান্স অ্যাপ আমরা চালু করেছি। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আমরা সিঙ্গাপুর থেকে এ অ্যাপ উদ্বোধন করেছিলাম। কিন্তু কোভিট ১৯ প্যান্ডেমিকের মানুষ যখন আইসোলেশনে চলে গেল। মানুষ যখন ব্যাংকে আসতে পারল না, তখন মোবাইলের মাধ্যমে, এই রেমিট্যান্স অ্যাপের সাহায্যে মানুষ টাকা পাঠিয়েছে। এতে রেমিট্যান্সে বিশাল একটি বিপ্লব ঘটেছে।রেমিট্যান্স আহরণে প্রযুক্তির পরিচয় করানোর জন্য সিঙ্গাপুরের কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনিটরি অথরিটি অব সিঙ্গাপুর অগ্রণী ব্যাংককে ফিনটেক অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করেছে।
কোর ব্যাংকি সেবার উন্নয়নে কাজ চলছে বলে জানান অগ্রণী ব্যাংকের নির্বাহী প্রধান। তিনি বলেন, ‘নতুন ভার্সন এসেছে। আমাদের বোর্ড অ্যাপ্র“ভ করেছে। আশা করা যায়, আগামী জুন-জুলাই নাগাদ প্রাইমারি কাজ শেষ হবে। মাইগ্রেশনের জন্য কাজ শুরু করে দিয়েছে। এটা হলে ডিজিটাল ব্যাংকিং ক্ষেত্রে ফাইন টিউনিং হবে, ইউজার ফ্রেন্ডি ও রোবাস্ট হবে।’
দেশের প্রথম ব্যাংক হিসেবে বিকাশের সঙ্গে ‘ব্যাংক টু বিকাশ’ মডেলে টুওয়ে সেবা চালু করে অগ্রণী ব্যাংক লিমেটেড যেটি অনুসরণ করছে অন্য ব্যাংকগুলো।
মোবাইল আর্থিক সেবায় অন্তর্ভুক্তি বেশি হচ্ছে বলে জানান শামস-উল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমরা যে উপবৃত্তি কার্যক্রমে যুক্ত আছি, সেখানে ছেলেমেয়েদের স্কুল-মাদরাসায় যেখানে আমরা (অগ্রণী ব্যাংক) ও বিকাশ যৌথভাবে স্টাইপেন্ড বিতরণ করছি। আপনি জেনে খুশি হবেন যে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর অনুরোধে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট আছে, সেখানে মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি আমরা বিনা মূল্যে বিতরণ করছি। এই প্রকল্পে আমাদের ব্যাংক থেকে ৫৪ লাখ টাকা আয় কম করেছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে আমরা এটা বিনা মূল্যে দিয়েছে। আমরা সরকারি ব্যাংক, প্রফিটের জন্য কাজ করি না, দেশের মানুষের জন্য কাজ করি।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের জন্য খুব শিগগিরই ডিজিটাল ন্যানো লোন চালু করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। পাশাপাশি নিজস্ব ডিজিটাল ব্যাংকিং অ্যাপ ও ওয়েব সেবা নিয়ে কাজ করছে সরকারি ব্যাংকটি।
এ প্রসঙ্গে শামস-উল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের অনলাইন ও মোবাইল ব্যাংকিং রেডি। আমরা অপেক্ষা করছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সম্মতির জন্য। উনি সময় দিলে ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে আমরা এটা চালু করব। আমাদের টেলিযোগাযোগমন্ত্রীর মাধ্যমে আমরা ই-অগ্রণী নামে ডিজিটাল অ্যাকাউন্ট খোলার প্লাটফর্ম চালু করছি, যার মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো জায়গা থেকে অগ্রণী ব্যাংকের হিসাব খোলা যাবে কয়েক মিনিটে।১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ নং ২৬-এর অধীনে হাবিব ব্যাংক ও কমার্স ব্যাংকের দায় ও সম্পদ নিয়ে অগ্রণী ব্যাংক গঠিত হয়। এই ব্যাংক ২০০৭ সালের ১৭ মে কম্পানি আইন-১৯৯৪ এর অধীনে রাষ্ট্রমালিকানাধীন।