রাজনীতি

তদন্তে হারিছ জোসেফ

 

 

সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের স্বজনদের পাসপোর্ট অনুসন্ধানে দুদকের চিঠি-

 

শফিক রহমান : সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের স্বজনদের পাসপোর্ট অনুসন্ধানে সংশ্লিষ্ট বিভাগে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সোমবার (১০ জুন) সংশ্লিষ্ট বিভাগে এ চিঠি দেয় দুদক। এদিকে আজিজ আহমেদের ভাইদের জাতীয় পরিচয়পত্র তদন্তে কমিটি গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
জানা যায়, শুধু এনআইডি নয়, মিথ্যা তথ্য দিয়ে পাসপোর্টও তৈরি করেছেন আলোচিত আজিজের দুই ভাই হারিছ আহমেদ ও তোফায়েল আহমেদ ওরফে জোসেফ।

তাদের স্ত্রীরাও একই কাজ করেছেন। সেনাপ্রধান থাকার সময়ই আজিজ আহমেদের ভাইদের ভুয়া তথ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট করানোর ক্ষেত্রে তার প্রভাব খাটানোর বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়।সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদের ভাই হারিছ ২টি এবং আনিস ১টি খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন। ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ তাদের সাজা মওকুফের প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

জানাপ গেছে, ১৯৯৬ সালে মোহাম্মদপুরের ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান হত্যা মামলার আসামি ছিলেন জোসেফ। এ মামলায় তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। এ রায় বহাল রাখেন হাইকোর্ট। পরে আপিল বিভাগ সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। ২০১৮ সালে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী তোফায়েল আহমেদ ওরফে জোসেফ রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় মুক্তি পান।আজিজ আহমেদ ২০১৮ সালের ২৫ জুন থেকে ২০২১ সালের ২৩ জুন পর্যন্ত সেনাপ্রধানের দায়িত্বে ছিলেন। দুর্নীতিতে সম্পৃক্ততার অভিযোগে সম্প্রতি এই সাবেক সেনাপ্রধানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

এদিকে সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের দুই ভাইয়ের ‘মিথ্যা তথ্যে ই-পাসপোর্ট ও এনআইডি জালিয়াতি’র অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে বলা হয়েছে জানিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘এতে আজিজ আহমেদের দোষ নেই।’তবে অভিযোগ দুটি খতিয়ে দেখতে নির্বাচন কমিশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। সোমবার দুদকের সংবাদ সংগ্রহে নিয়োজিত গণমাধ্যমকর্মীদের সংগঠন রিপোর্টার্স অ্যাগেইনস্ট করাপশনের (র‌্যাক) সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন মঈন।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “একজন আইনজীবীর দেওয়া একটি অভিযোগে বলা হয়েছে, তার (আজিজ আহমেদ) দুই ভাই মিথ্যা তথ্য দিয়ে ই-পাসপোর্ট নিয়েছেন। এটা আজিজের দোষ না, তার দুই ভাই এবং পাসপোর্ট ডিপার্টমেন্টের লোক জড়িত।“দ্বিতীয় অভিযোগ হল, (তারা) ন্যাশনাল আইডি কার্ড নিয়েছেন। এগুলোর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য দুই ডিপার্টমেন্টে পাঠিয়ে দিয়েছি।”

সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ‘দুর্নীতির’ বিষয়ে অনুসন্ধান চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সালাহ উদ্দিন রিগ্যান সম্প্রতি দুদকে আবেদন করেছেন।এতে লেখা হয়, “আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে। এতে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে।“জাতিসংঘের শান্তি মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে। দেশের সাধারণ জনগণের সেনাবাহিনীর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস ক্ষুণ্ন করেছে।”

এ আইনজীবী বলছেন, “এত বড় অভিযোগ প্রকাশিত হওয়ার পরও দুর্নীতি দমন কমিশন অনুসন্ধানের উদ্যোগ গ্রহণ করেনি; এটি দুদকের নিষ্ক্রিয়তা।”আইনজীবী সালাহ উদ্দিন রিগ্যান সাংবাদিকদের বলেন, “পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে তিনি (আজিজ) ভুয়া তথ্য দিয়ে ই পাসপোর্ট করতে সহায়তা করেছেন এবং জাল এনআইডি তৈরি করতে প্রভাব বিস্তার করেছেন। “আমরা বলছি না যে উনি দুর্নীতি করেছেন কী করেননি।

বলেছি বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হউক আসলে ঘটনা কী। তখন সত্যিটা বেরিয়ে আসবে।”জানা গেছে, ২০১৮ সালের জুন থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত তিন বছর বাংলাদেশের চিফ অব আর্মি স্টাফ ছিলেন জেনারেল আজিজ আহমেদ। তার আগে ২০১২ সাল থেকে চার বছর বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির নেতৃত্ব দেন।

গত ২০ মে এক মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে জেনারেল আজিজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা জানিয়ে বলা হয়, দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে আজিজ আহমেদ এবং তার পরিবারের সদস্যরা সাধারণভাবে ‘যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অযোগ্য’ বিবেচিত হবেন।দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির ওই অভিযোগ ‘অসত্য’ বলে পরদিন দাবি করেন আজিজ আহমেদ। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রধান হিসেবে বা সেনাপ্রধান হিসেবে তিনি কোনো দুর্নীতি করেছেন- এমন প্রমাণ করতে পারলে ‘যে কোনো পরিণতি’ তিনি মেনে নেবেন।

এর মধ্যে দৈনিক প্রথম আলো বেশ কিছু প্রতিবেদন ছাপে। এতে বলা হয়, আজিজ আহমেদের দুই ভাই হারিছ আহমেদ ও তোফায়েল আহমেদ জোসেফ তাদের নাম পাল্টে জাতীয় পরিচয়পত্র করেছেন। পাশাপাশি তাদের ছবিও পাল্টেছেন। এসব পরিচয়পত্রে বাবার নামও পাল্টানো হয়েছে। এরপর সেই ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে ই পাসপোর্ট নিয়েছেন। প্রতিবেদন অনুযায়ী ছবি পাল্টানোর আবেদনে সুপারিশ করেছেন আজিজ আহমেদ নিজেই। তবে পত্রিকাটির প্রশ্নে তিনি সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।প্রতিবেদনে পরে বলা হয়, আজিজের দুই ভাইয়ের মতো তার স্ত্রীরাও একইভাবে ভুয়া তথ্যে ই পাসপোর্ট নিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট খবর

Back to top button