সম্পত্তিতে সয়লাব বেনজির
০০ আগে মিলেছিল ৬২১ বিঘা জমি
০০ স্ত্রীর নামে ৫২১ বিঘা
০০ এবার জব্দ ৮ ফ্ল্যাট
০০ ৯১ একর জমি
লাবণ্য চৌধুরী : সম্পত্তিতে সয়লাব বেনজিরের। এবার তৃতীয় দফায় বেনজিরের ক্রোক হলো ৮ ফ্ল্যাটসহ ৯১ একর জমি। এর আগে গত ২৩ ও ২৬ মে ২ দফায় বেনজিরের ৬২১ বিঘা জমি জব্দের আদেশ দেন আদালত। এরমধ্যে বেনজিরের স্ত্রীর নামে ছিল প্রায় ৫২১ বিঘা জমি, এছাড়াও আরো ১০০ বিঘা জমি রয়েছে বেনজির ও তার ৩ মেয়ের নামে। পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজির আহমেদের এত সম্পত্তি দেখে আদালতও বিস্মিত। বুধবার (১২ জুন) ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন।
জব্দ হওয়া সম্পদ ও ফ্ল্যাটের মধ্যে- রুপগঞ্জে ২৪ কাঠা জমি, উত্তরায় ৩ কাঠা, বাড্ডায় ৩৯ দশমিক ৩০ জমির ওপর দুটি ফ্ল্যাট, বান্দরবান জেলায় ২৫ একর জমি, স্ত্রী জিসানের নামে আদাবর থানার পিসিকালচার এলাকায় ৬টি ফ্ল্যাট, গুলশানে বাবার কাছ থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি মূলে সম্পত্তিতে ৬ তলা ভবন, সিটিজেন টিভির শেয়ার ও টাইগার এপারেলসের শেয়ার রয়েছে।
মামলার অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচাল হাফিজুল ইসলাম এ আবেদন করেন। আবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজির আহমেদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে নিজ নামে, স্ত্রী জীশান মীর্জা ও কন্যাদের নামে দেশ-বিদেশে শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করা হয়েছে।
অনুসন্ধানকালে বিশ্বস্তসূত্রে জানা যাচ্ছে, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা তাদের মালিকানাধীন ও তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন। যা করতে পারলে মামলার অনুসন্ধানের ধারাবাহিকতায় মামলা দায়ের, চার্জশিট দাখিল, আদালত কর্তৃক বিচার শেষে সাজার অংশ হিসেবে অপরাধলব্ধ আয় থেকে অর্জিত সম্পত্তি সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্তকরণসহ সকল উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হবে।
তাই অনুসন্ধান শেষে মামলা দায়ের, তদন্ত শেষে চার্জশিট দাখিল, এরপর আদালত কর্তৃক বিচার শেষে সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্তের সুবিধার্থে তথা সুষ্ঠু অনুসন্ধান ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে স্থাবর সম্পত্তিসমূহ ক্রোক ও অস্থাবর সম্পত্তি ফ্রিজ করা একান্ত প্রয়োজন। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর।
এর আগে গত ২৩ ও ২৬ মে দুই দফায় বেনজির আহমেদ ও তার পরিবারের সদস্যদের ৬২১ বিঘা জমি জব্দের আদেশ দেন আদালত। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জমির মালিক বেনজিরের স্ত্রী জীশান মীর্জা। তার নামে প্রায় ৫২১ বিঘা জমি খুঁজে পেয়েছে দুদক। বাকি ১০০ বিঘার মতো জমি রয়েছে বেনজির, তার তিন মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজির, তাহসিন রাইশা বিনতে বেনজির ও জারা জেরিন বিনতে বেনজির এবং স্বজন আবু সাঈদ মো. খালেদের নামে।
বেনজির আহমেদের স্ত্রী জীশান মীর্জার নামে মাদারীপুরের সাতপাড় ডুমুরিয়া মৌজায় ২৭৬ বিঘা জমি পাওয়া গেছে। ২০২১ ও ২০২২ সালের বিভিন্ন সময় ১১৩টি দলিলে এসব জমি কেনা হয়। দলিলমূল্য দেখানো হয় মোট ১০ কোটি ২২ লাখ টাকা। ৮৩টি দলিলে ৩৪৫ বিঘা জমি জব্দের আদেশ দেন আদালত। যার দলিলমূল্য দেখানো হয় ১৬ কোটির কিছু বেশি।
এছাড়া বেনজির আহমেদের পরিবারের সদস্যদের নামে গুলশানে যে চারটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন আদালত। তার মধ্যে তিনটি তার স্ত্রীর নামে এবং একটি ছোট মেয়ের নামে। দুটি ফ্ল্যাটের আয়তন ২ হাজার ৩৫৩ বর্গফুট, দাম ৫৬ লাখ টাকা করে। বাকি দুই ফ্ল্যাটের আয়তন ২ হাজার ২৪৩ বর্গফুট করে, দাম সাড়ে ৫৩ লাখ টাকা করে। চারটি ফ্ল্যাট কেনা হয়েছে একই দিন একই ভবনে। ভবনটির নাম র্যানকন আইকন টাওয়ার।