করোনার পর জানুয়ারিতে সবচেয়ে কর্মব্যস্ত ছিলেন পোশাককর্মীরা
অর্থনীতি ডেস্ক : করোনা মহামারির পর দেশের তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের জন্য সবচেয়ে কর্মব্যস্ত সময় ছিল চলতি বছরের জানুয়ারি মাস। এই মাসে ২৭ কর্মদিবসে শ্রমিকরা গড়ে ২৯৫ ঘণ্টা সময় ফ্যাক্টরিতে কাটিয়েছেন। এ সময় গড়ে কাজ করেছেন ২৬৮ ঘণ্টা। এর বিনিময়ে বেতন পেয়েছেন ১২ হাজার টাকা। গতকাল সোমবার পোশাক খাতের শ্রমিকদের জীবনমানের ওপর প্রকাশিত এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। জরিপটি যৌথভাবে চালিয়েছে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এবং মাইক্রোফিন্যান্স অপরচুনিটিস (এমএফও)। ‘গার্মেন্ট ওয়ার্কার ডায়েরিজ’ শীর্ষক এই গবেষণার আওতায় ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রতি সপ্তাহে ১৩০০ জন নির্বাচিত পোশাক শ্রমিকের তথ্য সংগ্রহ করছে সংস্থা দুটি। যেসব শ্রমিকের ওপর জরিপ করা হয়েছে তারা দেশের পাঁচটি গার্মেন্টস শিল্পঘন এলাকাÑ ঢাকা, সাভার, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামে কাজ করেন। জরিপের অন্তর্ভুক্ত শ্রমিকদের তিন-চতুর্থাংশ নারী, যা বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের শ্রম খাতের প্রতিফলন। সানেম ও এমএফও জানিয়েছে, ২০২২ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রæয়ারি মাসের সংগৃহীত উপাত্ত থেকে এ প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জানুয়ারি মাসে দুপুরের খাবারের জন্য নির্ধারিত এক ঘণ্টা সময় বাদে শ্রমিকরা গড়ে ২৬৮ ঘণ্টা সময় কাজ করেছেন। এরমধ্যে খাবারের জন্য নির্ধারিত এক ঘণ্টা সময় বাদে নারী শ্রমিকরা গড়ে কাজ করেছেন ২৬৭ ঘণ্টা এবং পুরুষ শ্রমিকরা কাজ করেছেন ২৭০ ঘণ্টা। পরের মাসের তথ্য তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, ফেব্রæয়ারি মাসের ২৪ কর্মদিবসে গড়ে শ্রমিকরা ২৫৯ ঘণ্টা সময় ফ্যাক্টরিতে কাটিয়েছেন। খাবারের জন্য নির্ধারিত এক ঘণ্টা সময় বাদে ফেব্রæয়ারি মাসে শ্রমিকরা গড়ে ২৩৫ ঘণ্টা কাজ করেছেন। এরমধ্যে খাবারের এক ঘণ্টা বাদ দিয়ে নারী শ্রমিকরা গড়ে ২৩৪ ঘণ্টা এবং পুরুষ শ্রমিকরা গড়ে ২৩৫ ঘণ্টা কাজ করেছেন। সংস্থা দুটি বলছে, জানুয়ারি ও ফেব্রæয়ারি দুই মাসেই জরিপের অন্তর্ভুক্ত শ্রমিকদের অর্ধেকই আইনসিদ্ধ দৈনিক সর্বোচ্চ কর্মঘণ্টা ১০ ঘণ্টার (৮ ঘণ্টা নিয়মিত এবং ২ ঘণ্টা ওভারটাইম) বেশি কাজ করেছেন। ডিসেম্বর মাসের কাজের জন্য নারী শ্রমিকরা জানুয়ারি মাসে গড়ে বেতন পেয়েছেন ১২ হাজার টাকা এবং পুরুষ শ্রমিকরা বেতন পেয়েছেন ১২৫০০ টাকা। আর জানুয়ারি মাসের কাজের জন্য নারী শ্রমিকরা ফেব্রæয়ারি মাসে গড়ে ১২ হাজার টাকা বেতন পেয়েছেন, যেখানে পুরুষ শ্রমিকরা গড়ে পেয়েছেন ১৩ হাজার টাকা। ফেব্রæয়ারি মাসে ৫৪ শতাংশ শ্রমিক মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (বিকাশ, নগদ, রকেট ইত্যাদি) মাধ্যমে বেতন পেয়েছেন এবং বাকি ৪৬ শতাংশ শ্রমিক নগদ অর্থে বেতন পেয়েছেন বলেও প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। গত এক মাসে পরিবারের কোনও সদস্য অসুস্থ ছিলেন কি না ফেব্রæয়ারি মাসে এমন প্রশ্নের উত্তরে ২০ শতাংশ পোশাক শ্রমিক জানিয়েছেন, তাদের পরিবারের নূন্যতম একজন সদস্য ফেব্রæয়ারি মাসে কোনও না কোনও ধরনের অসুস্থতায় ভুগেছেন। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে এই হার ছিল ২৬ শতাংশ।