অপরাধ

ওরিয়নের ভয়াবহ লুটপাট-ওবায়দুলের পেটে ৪৫০০ কোটি

০০ বিদ্যুৎ না দিয়ে সরকারি টাকা লোপাট-
০০ ওবায়দুলের পেটে ৪৫০০ কোটি-
০০ দেশেই ঘাপটি মেরে লুকিয়ে আছে-

 

শফিক রহমান : পলাতক হাসিনা সরকারের রাঘববোয়াল দুর্নীতির সহযোগী ছিল ওরিয়ন গ্রুপের মালিক ওবায়দুল করিম। এই মহা লুটেরা সরকারের এমপি মন্ত্রীদের ভাগ দিয়ে লুটপাট করত। সবচেয়ে বড় লুটপাট হচ্ছে সরকারকে কোনো বিদ্যুৎ না দিয়ে ওরিয়ন ক্যাপাসিটি চার্জের নামে লুটে নিয়েছে আরও সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা।ধুরন্ধর এই ওবায়দুল করিম সব সরকারের আমলে ক্ষমতাসীনদের ব্যবসায়িক অংশীদার বানিয়ে সরকারি অর্থ লুটপাট করেছে। অভিযোগ করা হয়েছে, ওরিয়ন গ্রুপ ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একে একে সাতটি পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের নামে অন্তত আড়াই হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে।

এইসব লুটপাটে সহায়তায় সাত বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকানাও দেওয়া হয় আওয়ামী লীগ নেতা মির্জা আজম, আলাউদ্দীন নাসিম ও শামীম ওসমানকে। ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের অনুসন্ধানে সরকারি অর্থ লুটপাটের এই চিত্র পাওয়া গেছে। টিআইবি বলছে, এইসব লুটপাটে জড়িতদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনা প্রয়োজন। নারায়ণগঞ্জের গগন নগরের ১০২ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র ডিজিটাল পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের ৬০ শতাংশের মালিকানা ওরিয়নের। বাকি ৪০ শতাংশের মালিকানা দেওয়া হয় আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী ও হুইপ মির্জা আজম, তাঁর তিন ভাই ভাই মির্জা গোলাম কিবরিয়া, মির্জা গোলাম রাব্বানি ও মির্জা জিল্লুর রহমানকে।

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ওরিয়ন গ্রুপের আরও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র ১০০ মেগাওয়াটের ডাচ বাংলা পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস। এতে ওরিয়নের হাতে ৭০ শতাংশ মালিকানা রেখে, বাকি ৩০ শতাংশ দেয়া হয় আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দীন আহমেদ চৌধুরী নাসিম ও তাঁর ভাই জামাল উদ্দীন আহমেদকে।
একইভাবে নারায়ণগঞ্জের আরেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র ১০৪ মেগাওয়াটের ওরিয়ন পাওয়ার সোনারগাঁও লিমিটেডের ৪ শতাংশের মালিকানা আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি শামীম ওসমানের। আর বাকি ৯৬ শতাংশের মালিকানা ডিজিটাল পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের। এই কোম্পানিটির মালিকানায় আছে ওরিয়ন ও মির্জা আজম এবং তাঁর তিন ভাই।

অনুসন্ধান আরও বলছে, খুলনার জাবুশায় অবস্থিত ১১০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার ওরিয়ন পাওয়ার রুপসা লিমিটেডের যৌথ মালিকানায় আছে ডিজিটাল পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড। সঙ্গত কারণে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রেও মির্জা আজম ও তাঁর তিন ভাইয়ের অংশীদারত্ব আছে।আবার মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ার ৬৩৫ মেগাওয়াটের ওরিয়ন পাওয়ার ইউনিট-২– এর মালিকানায় ওরিয়ন গ্রুপের পাশাপাশি রাখা হয়েছে চীনের ফুজিয়ান লং এনার্জি ও দুবাইয়ের ফাস্টজেন এনার্জি নামের দুইটি কোম্পানিকে। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, ওই দুই বিদেশি কোম্পানির মালিকও ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিম ও তাঁর ছেলে সালমান ওবায়দুল করিম। অভিযোগ উঠেছে, অর্থ পাচারের সুবিধার্থে দুবাই ও চীনের এই দুই কোম্পানিকে ব্যবহার করা হয়।

ওরিয়ন পরিবারের মালিকানাধীন ১০০ মেগাওয়াটের ক্ষমতার সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র মোংলার এনারগন রিনিউএবলস লিমিটেডে চীন ও দুবাইয়ের প্রতিষ্ঠান দুইটির শেয়ার আছে। মূলত এই দুই বিদ্যুৎকেন্দ্রের কেনাকাটা আর বিনিয়োগের বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশি চীন-দুবাইয়ের প্রতিষ্ঠান দুইটির মাধ্যমে মাধ্যমে পাচার করা হতো। তবে ওরিয়ন পাওয়ার মেঘনাঘাট লিমিটেড নামের বিদ্যুৎকেন্দ্রটির একক মালিকানা ওরিয়ন গ্রুপের। পরিসংখ্যান বলছে, এই ৭ বিদ্যুৎকেন্দ্রের নামে বিভিন্ন সময়ের ব্যাংক ঋণ নেওয়া হয় ৪ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা। আর সহজে ব্যাংক ঋণ পাওয়াতে সহায়তা ছিল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকানায় থাকা আওয়ামী লীগ নেতারা।

এর মধ্যে ডিজিটাল পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের নামে নেওয়া হয়েছে ৩৪০ কোটি, ওরিয়ন পাওয়ার মেঘনাঘাট লিমিটেডের নামে ২৩৫ কোটি, ওরিয়ন পাওয়ার ইউনিট-২ এর নামে ১ হাজার ৭৬ কোটি, এনারগন রিনিউঅ্যাবলস লিমিটেডের নামে ১ হাজার ৩০৬ কোটি, ডাচ–বাংলা পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের ১০২, ওরিয়ন পাওয়ার রুপসার নামে ৬২৫ ও ওরিয়ন পাওয়ার সোনারগাঁও লিমিটেডের নামে নেওয়া হয়েছে ৮১১ কোটি টাকা।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের যারা কোনো না কোনোভাবে রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তারা জনপ্রতিনিধিত্বই করে হোক বা দলের নেতাকর্মী হিসেবেই হোক ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যবসার নামে অনিয়ম দুর্নীতি করে। তাদের সংশ্লিষ্ট করে আমরাও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ি। এই যে সংস্কৃতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে, এটাকে সংস্কার করতে হবে।’

এছাড়াও ওরিয়ন বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রের নামে সরকারের কাছ থেকে ক্যাপাসিটি চার্জ নিয়েছে প্রায় ৪ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা, যা সহজে পেতে সহায়তা করেছে ওরিয়ন সাথে থাকা আওয়ামী লীগ নেতারা। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিদ্যুৎখাত নিয়ে ওরিয়ন যে নৈরাজ্য করেছে তার জন্যে তাদের বিচারের আওতায় আনা উচিত ।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বিডি রহমতউল্লাহ বলেন, ‘এই প্রকল্পগুলোর সবগুলোই হচ্ছে টাকা কামানোর জন্য, মানুষকে বিদ্যুৎ দেওয়ার জন্য নয়। দেশের উন্নয়নের জন্য নয়, বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য নয়। ট্যারিফের বাহিরে যা পয়সা নিয়েছে এটা আনতে হবে। এর জন্য জেল–ফাঁসি যা হয় করতে হবে। কারণ এই পয়সা আমরা দিয়েছি।’

ওরিয়ন যখন যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসে তাদের অংশীদার বানিয়ে গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানির নামে ১১ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা ।অভিযোগের বিষয়ে জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে সাবেক এমপি মির্জা আজম, আলাউদ্দীন আহমেদ চৌধুরী নাসিম এবং শামীম ওসমানের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

সংশ্লিষ্ট খবর

Back to top button