জাতীয়

নিহত মুরসালিনের স্ত্রীর আর্তনাদ কে দেখবে কে খাওয়াবে-


স্টাফ রিপোর্টার :  বাঁচানো গেলোনা অসহায় মুরসালিনকে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মারা গেলেন মুরসালিন। তার মৃত্যুতে আর্তনাদ করে কাঁদছে স্ত্রী মিতু।
স্বজনদের জড়িয়ে ধরে সন্তানদের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের শঙ্কায় বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। পরক্ষণেই সংবিৎ ফিরে পেয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের শঙ্কার কথা জানাচ্ছিলেন। বলছিলেন, কীভাবে চলবে তার সংসার। কে খরচ জোগাবে তার দুই সন্তানের। এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছিলেন না মোরসালিনের মা-ও। তিনিও বিলাপ করছিলেন।বৃহস্পতিবার ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোরসালিনের মৃত্যুর পরপরই তার স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে ময়নাতদন্তের শেষে বৃহস্পতিবার দুপুরেই রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের পশ্চিম রসুলপুরের জরাজীর্ণ বাসায় নিয়ে যাওয়া হয় মোরসালিনের মরদেহ। এরপর সেখানেও স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। সাত বছরের মেয়ে হুমায়রা ও পাঁচ বছরের ছেলে হানিফকে নিয়ে কাঁদছিলেন মিতু আক্তার।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি সাংবাদিকদের জানান, যে সংসার চালাত সে আর নেই। কীভাবে কী করব? কিছু মাথায় আসছে না। আমার স্বামী গন্ডগোলে পড়ে গেছে। কারা মেরেছে সেটাও জানি না। মারামারির ঘটনার পরও মার্কেট সমিতি কেন মার্কেট বন্ধ রাখল না? এমনটা বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

বলেন, ‘যা হারানোর সেটা আমরা হারিয়েছি। আমার দুইটা সন্তান। ১৩ বছরের সংসারের সব শেষ হয়ে গেল। সরকার ও মার্কেট সমিতির লোকজন যেন মোরসালিনের পরিবারের পাশে দাঁড়ায়, এমন আহ্বান জানিয়েছেন নিহতের স্বজনরা।মোরসালিনের মা নূরজাহান বেগম বলেন, আমার নির্দোষ ছেলেকে যারা মেরে ফেলেছে তাদের বিচার চাই।
মোরসালিনের ভাই নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘আমার ভাই নিউ মার্কেটের একটি রেডিমেড পোশাক দোকানে ৯ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করত। সেই টাকায় তার সংসার চলত। মাকেও কিছু টাকা দিত। এখন মোরসালিন নাই। তাই সবার চোখে অন্ধকার।তিনি আরও বলেন, ‘গত দুই দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল ভাই। সেখানেও অনেক খরচ হয়েছে। ধার-দেনা করেছি। কিন্তু ভাইকে বাঁচাতে পারলাম না। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই।

গত মঙ্গলবার দুপুরে সংঘর্ষের সময় নুরজাহান মার্কেটের সামনে আহত হন মোরসালিন। পরবর্তীতে দুই যুবক অচেতন অবস্থায় মোরসালিনকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করেন। তার বাড়ি কুমিল্লা দাউদকান্দি উপজেলার কালাই নগর গ্রামে। থাকতেন কামরাঙ্গীরচর পশ্চিম রসুলপুর গ্রামে। স্ত্রী ও তার দুই মেয়ে সুমাইয়া ইসলাম লামহা (৭) ও আমির হামজা (৪) নিয়ে সেখানেই বাস করতেন। তার বাবার নাম মৃত মো. মানিক মিয়া।

সেদিনের ঘটনার কথা বলতে গিয়ে মোরসালিনের স্ত্রী মিতু আক্তার দেশ রূপান্তরকে বলেন, মঙ্গলবার সকালে কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে সে বাসা থেকে বের হয়েছিল। রাতেই ফেরার অপেক্ষায় ছিলাম আমরা। কিন্তু আহত হয়ে হাসপাতালে যায়। এখন শুধুই লাশ।

ওদিকে মুরসালিনের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন নিউমার্কেট থানার পুলিশ সদস্য হালদার অর্পিত ঠাকুর। মৃত্যুর সম্ভাব্য কারণ সম্পর্কে লেখা হয়েছে, মারপিট করার আঘাত। তিনি লিখেছেন, ‘মৃত মো. মুরসালিনের (২৪) কপালসহ সমস্ত মাথায় সাদা রাউন্ড ব্যান্ডেজ। ব্যান্ডেজ খুলে দেখা যায়, মাথার মাঝখানে গভীর ফাটা জখম। কপালের বাঁ পাশে কালো জখম, নাক ও ঠোঁটে জখম।

স্বজনরা জানান, নিউমার্কেট ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে দোকান থেকে নামাজ পড়তে বের হন মুরসালিন। এরপর খবর আসে নূরজাহান মার্কেটের সামনে ইটের আঘাতে আহত হন দুই সন্তানের এই জনক। রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, পরে নেওয়া হয় আইসিইউতে। সেখানেই জীবনযুদ্ধে হেরে যান তিনি, বৃহস্পতিবার ভোরে মৃত্যু হয় তার।

ঢামেক হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আঘাতের কারণে মুরসালিনের মাথার ভেতরে কোথাও কোথাও রক্ত জমাট বেঁধে যায়। এতে প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ হয়। পরে একে একে শরীরের সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে পড়ে।বৃহস্পতিবারই বেলা দেড়টার দিকে ময়নাতদন্ত শেষে মুরসালিনের মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। জানাজা শেষে তাকে বিকেলে আজিমপুরে দাফন করা হয়। কামরাঙ্গীরচরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকা মুরসালিন ৯ হাজার টাকা মাসিক বেতনে চাকরি করতেন নিউমার্কেটের একটি শার্টের দোকানে। তিনিই ছিলেন চার সদস্যের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।

সংশ্লিষ্ট খবর

Leave a Reply

Back to top button