নারীদের ইতেকাফ প্রসঙ্গে ইসলাম কী বলে?
ধর্মপাতা ডেস্ক : রমজানের শেষ দশকে নারীদের জন্য ইতেকাফ করা মুস্তাহাব। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের স্ত্রীগণ রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করেছেন। কিন্তু নারীদের জন্য ইতেকাফ করা পুরুষদের তুলনায় কঠিন। কারণ নারীদের ইতেকাফের জন্য নিজ নিজ ঘর ছাড়া সাধারণত মসজিদে কোনো সুনির্দিষ্ট স্থান নেই। আর সবার জন্য ঘরে ইতেকাফ করার তেমন পরিবেশও থাকে না। তাছাড়া মক্কা-মদিনা-মসজিদে আকসা ছাড়া অনেক ইসলামিক স্কলারদের মতে নারীদের জন্য মসজিদে ইতেকাফ করা মাকরুহ।
তারপরও যেসব নারীরা ইতেকাফ করতে চায়, তারা ঘরে নামাজের নির্ধারিত একটি স্থানে ইতেকাফ করবেন। যদি ঘরে নামাজের নির্ধারিত স্থান না থাকে, তবে যে কোনো একটি জায়গাকে ইতেকাফের জন্য নির্দিষ্ট করে নিতে হবে। যেখানে কেউ সরাসরি যেতে পারবে না। ইতেকাফকারী নারীকে বিরক্ত করবে না।
নারীদের ইতেকাফের অনুমতি
স্বামীর অনুমতি ছাড়া কোনো নারীর ইতেকাফ বৈধ নয়। নারীর ইতেকফের জন্য স্বামী অনুমতি আবশ্যক। যাদের স্বামী নেই বা বৃদ্ধা বা বিধবা; তাদের জন্য ভিন্ন কথা। হাদিসে পাকে এসেছে-
১. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইতেকাফ করার ইচ্ছে করলেন। এরপর যে স্থানে ইতেকাফ করার ইচ্ছে করেছিলেন সেখানে এসে কয়েকটি তাঁবু দেখতে পেলেন। (তাঁবুগুলো হল নবিজীর সহধর্মিণী) আয়েশা, হাফসা ও যয়নব রাদিয়াল্লাহু আনহুন্নার তাঁবু। তখন তিনি বললেন, তোমরা কি এগুলো দিয়ে নেকি হাসিলের ধারণা কর? এরপর তিনি চলে গেলেন আর ইতেকাফ করলেন না। পরে শাওয়াল মাসে দশ দিনের ইতেকাফ করলেন।।’ (বুখারি ও মুসলিম)
২. হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেছেন, রমজানের শেষ দশকে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইতেকাফ করতেন। আমি তাঁর তাঁবু তৈরি করে দিতাম। তিনি ফজরের নামাজ আদায় করে তাতে প্রবেশ করতেন। (নবিজীর সহধর্মিণী) হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহা তাঁবু খাটাবার জন্য আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার কাছে অনুমতি চাইলেন। তিনি তাঁকে অনুমতি দিলে হাফসা রাদিয়াল্লাহু আনহা তাঁবু খাটালেন। (নবিজীর সহধর্মিনী) যয়নব বিনতে জাহাশ রাদিয়াল্লাহু আনহা তা দেখে আরেকটি তাঁবু তৈরি করলেন। সকালে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁবুগুলো দেখলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এগুলো কী? তাঁকে জানানো হলে তিনি বললেন, ‘তোমরা কি মনে কর এগুলো দিয়ে নেকি হাসিল হবে? এ মাসে তিনি ইতেকাফ ত্যাগ করলেন এবং পরে শাওয়াল মাসে দশ দিন (কাযা স্বরূপ) ইতেকাফ করেন।’ (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ)
হাদিসের আলোকে বুঝা যায়, নারীর জন্য ইতেকাফ করায় স্বামীর অনুমতি আবশ্যক। স্বামীর অনুমতি ছাড়া ইতেকাফ বৈধ হবে না।
রমজানের শেষ ১০ দিন ইতেকাফ করতে হয়। তাই ইতেকাফের রয়েছে কিছু প্রস্তুতি। ইতেকাফে বসলে রোজাদার ইতেকাফকারী নারী হোক কিংবা পুরুষ সাংসারিক কোনো কাজ-কর্ম, কোনো ধরনের কথা-বার্তা, লেন-দেন, ব্যবসা-বানিজ্য, চাকরি-বাকরি কোনো কিছুতেই অংশগ্রহণ করতে পারে না। ইতেকাফের বিধি-নিষেধ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَلاَ تُبَاشِرُوهُنَّ وَأَنتُمْ عَاكِفُونَ
‘তোমরা ইতিকাফ অবস্থায় (স্বামী-স্ত্রী) পরস্পর সঙ্গম করো না।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১২৭)
ইতেকাফকারী নারী কিংবা পুরুষ কোরআনে বিধানের লঙ্ঘন এবং নারীরা ইতেকাফের নির্ধারিত স্থান ত্যাগ করলে ইতেকাফ ভেঙে যাবে। তাই ফজিলতপূর্ণ ইবাদত ইতেকাফ করার ক্ষেত্রে নারীরা রমজানের শেষ দশক যথাযথ মর্যাদার ও গুরুত্বের সঙ্গে ইতেকাফ করবেন।
ইতেকাফের ফজিলত
রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ একটি আমল। রমজানের বরকত ও ফজিলত বিশেষত হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ রাত লাইলাতুল কদর পাওয়া। ইতিকাফের ফজিলত সম্পর্কে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন-
‘আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির নিয়তে যে ব্যক্তি মাত্র একদিন ইতিকাফ করবে আল্লাহ তাআলা তার ও জাহান্নামের মাঝে তিনটি পরিখার সমান দূরত্ব সৃষ্টি করে দেবেন। প্রতিটি পরিখার দূরত্ব হবে আসমান-জমিনের মধবর্তী দূরত্বের সমান।’ (তবারানি, বায়হাকি)
যেহেতু ইতিকাফ শুধু পুরুষের জন্য নয়। নারীদেরও ইতিকাফের সুযোগ রয়েছে। আর নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীগণও ইতিকাফ করতেন। তাই সুযোগ ও অনুমতি থাকলে নারীদেরও ইতেকাফ করা উত্তম।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর নারীদের ইতেকাফ করার তাওফিক দান করুন। সব পুরুষকে নারীদের ইতেকাফে উৎসাহিত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।