রাজনীতি

দরবেশের বেক্সিমকোর আকুতি

 

০০ সরকারের কাছে টাকা চেয়ে চিঠি-
০০ রপ্তানির নামে পাচার হাজার কোটি-
০০ টাকা উদ্ধারে সিআইডির ১৭ মামলা-

 

শফিক রহমান : উপদেষ্টাদের কাছে টাকা চেয়ে দরবেশের বেক্সিমকোর আকুতি ব্যাংক পাড়ায় তোলপাড় অবস্থা সৃষ্টি করেছে। অথচ পলাতক হাসিনা সরকারের শিল্প-ক্ষেত্রে দরবেশের খেতাব পাওয়া বেক্সিমকো গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার আইনে ১৭টি মামলা করেছে সিআইডি (পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ)।এতে সালমান এফ রহমান ছাড়াও তার ছেলে, ভাই, ভাতিজাসহ প্রতিষ্ঠানের ২৪ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।মামলায় রপ্তানির আড়ালে ৮৩ মিলিয়ন বা প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকেই অভিযুক্ত এই ১৭ প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা আত্মগোপনে আছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।অন্যদিকে সালমানের দুই ছেলে ও বড় ভাই আগে থেকেই দেশের বাইরে অবস্থান করছেন।সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বর্তমানে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ঘটনায় দায়ের করা একটি হত্যা মামলায় গ্রেফতার আছেন।এছাড়া তার বিরুদ্ধে সিআইডির মামলা ছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় একাধিক মামলা রয়েছে।

এমন প্রেক্ষাপটে ঋণসুবিধা চেয়ে চার উপদেষ্টা ও গভর্নরকে চিঠি দিয়েছে বেক্সিমকো।ব্যবসায়ী গোষ্ঠী বেক্সিমকো জানিয়েছে যে তারা রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে বিপাকে পড়েছে, কারণ তাদের হাতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ চলতি পুঁজি নেই। ফলে ব্যবসা হারানোর উপক্রম হয়েছে গোষ্ঠীটির। সে কারণে রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ঋণসুবিধা ফের চালুর আবেদন করেছে বেক্সিমকোর টেক্সটাইল ও অ্যাপারেল বিভাগ।

অন্তর্বর্তী সরকারের চারজন উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে দেওয়া এক চিঠিতে এই আবেদন করেছে বেক্সিমকো শিল্পগোষ্ঠী। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের কাছে এই চিঠি দিয়েছে বেক্সিমকোর টেক্সটাইল ও অ্যাপারেল বিভাগ। এতে স্বাক্ষর করেছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওসমান কায়সার চৌধুরী।

ব্যাংক সূত্র দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে জানিয়েছে, ১৯ সেপ্টেম্বর পাঠানো চিঠিতে প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, রপ্তানিমুখী উৎপাদন শুরু করতে না পারলে তারা ব্যবসা হারাবে। ফলে কর্মী ছাঁটাই করার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। চিঠিতে বলা হয়, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বেক্সিমকো গোষ্ঠীর রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা লুটপাট করা এবং আগুন দেওয়া হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার মতো চলতি পুঁজি বেক্সিমকোর হাতে নেই। ফলে অনেক ক্রেতা বেক্সিমকো থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। বেক্সিমকো গোষ্ঠী সক্ষমতা অনুযায়ী উৎপাদন করতে পারছে না। ডিসেম্বর পর্যন্ত বিক্রয় ও নগদ প্রবাহের হিসাব করে বেক্সিমকো দেখেছে, ব্যয় নির্বাহ করার মতো নগদ অর্থ তাদের হাতে নেই।

চিঠিতে বেক্সিমকো গোষ্ঠী বলেছে, আগস্ট মাসে শ্রমিকদের মজুরি দিতে ৬৯ কোটি পাঁচ হাজার টাকা প্রয়োজন ছিল। জনতা ব্যাংক সে লক্ষ্যে ৫৫ কোটি টাকা ঋণ দেয়। বাকি অর্থ কাঁচামাল আমদানির জন্য আলাদা করে রাখা তহবিল থেকে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বেক্সিমকো গোষ্ঠীর নিয়মিত ঋণসুবিধা বন্ধ থাকায় সেপ্টেম্বর মাসের মজুরি পরিশোধ নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তারা জানিয়েছে, সেপ্টেম্বর মাসের মজুরি পরিশোধে ৬৫ কোটি টাকা প্রয়োজন।

এই পরিস্থিতিতে জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে বেক্সিমকো গোষ্ঠীর যে রপ্তানি আয় ইতিমধ্যে এসেছে এবং আগামী ৬ অক্টোবর পর্যন্ত যে রপ্তানি আয় আসার কথা, তা থেকে বেক্সিমকো গোষ্ঠীকে সেপ্টেম্বর মাসের মজুরি বাবদ ৬৫ কোটি টাকা দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে বলে চিঠিতে জানানো হয়েছে। চিঠিতে শিল্পের উৎপাদন অব্যাহত রাখতে অন্তর্বর্তী সরকারের অঙ্গীকারের কথা বলা হয়েছে। বেক্সিমকো গোষ্ঠী বলছে, সরকারের এই ঘোষণা আমাদের উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে।

জনতা ব্যাংকের কাছে বেক্সিমকো গোষ্ঠী যেসব সুবিধা চেয়েছে সেগুলো হলো—৩১ আগস্ট পর্যন্ত সব বকেয়া সুদবিহীন ব্লক হিসেবে স্থানান্তর। দায় পরিশোধের জন্য ১০ বছর সময় দেওয়া; স্থানীয় পর্যায়ে বস্ত্র ও অ্যাকসেসরিজ সরবরাহে ১০ শতাংশ হারে বিল ডিসকাউন্ট সুবিধা ইত্যাদি।গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা ও বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বেক্সিমকো গ্রুপের ব্যাংক হিসাবের তথ্যও তলব করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট খবর

Back to top button