অসন্তোষে বেহাল গার্মেন্টস-মহাসড়ক অবরোধ চলছেই-
সাভার প্রতিনিধি : সাভারের আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে গত কয়েক দিন পোশাক কারখানায় স্বাভাবিক উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হলেও আবারও কয়েকটিতে শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকালে বকেয়া বেতনের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন অন্তত ৯টি কারখানার শ্রমিকরা। এ অবস্থায় সেগুলোতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি শ্রমিক অসন্তোষের জেরে অন্তত ৪৩টি কারখানা বন্ধ রয়েছে। সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে সড়ক অবরোধের বিষয়টি দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে নিশ্চিত করেছেন আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক।
এর আগে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের নরসিংহপুর এলাকায় জেনারেশন নেক্সট পোশাক কারখানার কয়েক হাজার শ্রমিক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১ ও বিভিন্ন কারখানা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা, হাজিরা, টিফিন, নাইট বিল বৃদ্ধির বাস্তবায়ন ও কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ঘোষণাসহ নানা দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন ৯টি কারখানার শ্রমিকরা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সেই ৯টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে, সোমবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ৪৩টি কারখানায় নোটিশ দেওয়া হয়। সেগুলো কবে খুলবে, সে বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি।
শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শ্রমিক অসন্তোষ শেষে গত সপ্তাহ এবং চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন অর্থাৎ শনিবার পর্যন্ত শিল্পাঞ্চলের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। রবিবার সকালে আশুলিয়ার বিভিন্ন কারখানায় উপস্থিত হন শ্রমিকরা। এদিন আশুলিয়ার বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর সড়কের জিরাবো, নরসিংহপুর, জামগড়া এলাকার উভয় পাশে অবস্থিত কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রেখে হাজিরা বোনাস, টিফিন বিল, নাইট বিল বৃদ্ধি বাস্তবায়ন না হওয়া, কারখানা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এসব দাবি পূরণের ঘোষণা না আসায় বিক্ষোভ করেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ওই এলাকার সাতটি পোশাক কারখানায় ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। একই কারণে সোমবার আরও দুটি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়।
সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বাইপাইল-আব্দুল্লাপুর সড়কের নরসিংহপুর এলাকায় জেনারেশন নেক্সট গার্মেন্টসের কয়েক হাজার শ্রমিক সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় শ্রমিকরা বলেন, অনেক কারখানায় যখন হাজিরা বোনাস, টিফিন বিল, নাইট বিল বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবিতে শ্রমিকরা আন্দোলন করেছিল, তখন আমাদের কোনও দাবি ছিল না। অন্য কারখানার শ্রমিকরা এসে আমাদের কারখানায় ঝামেলা করার চেষ্টা করলেও আমরা কাজ করেছি।
তারপরও হঠাৎ আমাদের মালিকপক্ষ কেন কারখানা বন্ধ করে রেখেছেন, তা আমরা জানি না। এ অবস্থায় গত দুই মাসের (আগস্ট-সেপ্টেম্বর) আমাদের বেতন পরিশোধ করা হয়নি। এ কারণে আমরা বাসা ভাড়া ও দোকানের বাকি পরিশোধ করতে পারছি না। নেক্সট গার্মেন্টসে আমরা প্রায় পাঁচ-ছয় হাজার শ্রমিক কাজ করি। বন্ধ ঘোষণা করায় অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছি আমরা। এর আগে আমাদের পাওনা পরিশোধের আশ্বাস দেওয়া হলেও বাস্তবায়ন হয়নি। আজ বাধ্য হয়ে আমরা রাস্তায় নেমেছি।
স্থানীয় সূত্র জানায়, নতুন করে শ্রমিক অসন্তোষের জেরে আশুলিয়ায় ৪৩টি কারখানা বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬-এর ১৩(১) ধারায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি ৯টিতে শ্রমিক অসন্তোষের জেরে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। শ্রম আইনের ধারায় বন্ধ ঘোষণা করা কারখানাগুলো হলো- এমএএম গার্মেন্টস লিমিটেড, নাসা গ্রুপ, নিউএইজ গ্রুপ, অনন্ত গ্রুপ, স্টারলিং স্টাইল, স্টারলিং ক্রিয়েশন, স্টারলিং অ্যাপারেলস, ব্যান্ডো ডিজাইন, এনভয় গ্রুপ, ভিনটেজ ও জেনারেশন নেক্সটসহ ৪৩টি।
হা-মীম গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠানের গেটে দেওয়া নোটিশে দেখা যায়, দ্যাটস ইট স্পোর্টস ওয়্যার লিমিটেড, অ্যাপারেল গ্যালারি লিমিটেড, রিফাত গার্মেন্টস লিমিটেড, এক্সপ্রেস ওয়াশিং অ্যান্ড ডাইং লিমিটেড, আর্টিস্টিক ডিজাইন লিমিটেড, নেক্সট কালেকশন লিমিটেডের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের জানানো যাচ্ছে যে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের বর্তমান সহিংসতা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিবেচনায় শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬-এর ধারা ১৩(১) অনুযায়ী ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে উল্লেখিত কারখানাসমূহ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হলো। পরবর্তীতে পরিবেশ নিরাপদ হলে শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে নোটিশের মাধ্যমে কারখানা খোলার তারিখ জানানো হবে। কারখানায় নিরাপত্তা বিভাগ ওই নোটিশের আওতামুক্ত থাকবে।
অনন্ত গ্রুপের একটি কারখানার গেটেও বন্ধের নোটিশ লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানেও একই কারণ উল্লেখ করা হয়েছে।আশুলিয়ার শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ সারোয়ার আলম দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেন, সোমবার শিল্পাঞ্চলে ৪৩টি কারখানা শ্রম আইনের ধারায় বন্ধ এবং ৯টিতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ডিইপিজেডসহ অন্যান্য কারখানায় কাজ চলছে। শ্রমিকরা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের দাবি জানিয়েছেন। বিক্ষোভ হলেও কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি আমরা।