রাজনীতি

রিসেট বাটনে তুলকালাম-রিসেট বাটন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলা নয়: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলা অর্থে রিসেট বাটন চাপার কথা বলেননি, বরং কলুষিত রাজনীতি থেকে নতুন যাত্রা বোঝাতে তা বলেছেন।

বিশেষ প্রতিনিধি : প্রধান উপদেষ্টার রিসেট বাটন নিয়ে তুলকালাম অবস্থা চলছে। অভিযোগ উঠেছে, প্রধান উপদেষ্টার রিসেট বাটন নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে ফ্যাসিস্টদের সহযোগীরা। এর সূত্রপাত করেন সরকারি এক নারী কর্মকর্তা। যিনি লালমনিরহাট জেলায় কর্মরত ছিলেন। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত আবু সাঈদ ও অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন। ইতোমধ্যে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের ওই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাপসী তাবাসসুম ঊর্মিকে সাময়িক বরখাস্ত করে মন্ত্রণালয়।

উর্মি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করে আলোচনায় এসেছেন। তাকে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনা সমালোচনা ঝড় বইছে। শুধু তাই নয়, এ ইস্যুটি টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হিসাবে বদলির পর সাময়িক বরখাস্ত করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
কোথাও তাকে খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ওএসডি করার পর থেকে তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন। এমনকি তার পরিবারও জানেন না বর্তমানে তিনি কোথায় অবস্থান করছেন। এর মধ্যে গুঞ্জন উঠেছে, সীমান্ত দিয়ে তিনি ভারতে পালিয়েছেন।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাপসী তাবাসসুম ঊর্মির ভারতে পালিয়ে যাওয়ার গুঞ্জন বিষয়ে গতকাল লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক (ডিসি) এইচ এম রকিব হায়দার গণমাধ্যমকে বলেন, গত ৫ অক্টোবর রাত থেকে ম্যাজিস্ট্রেট তাপসী তাবাসসুম ঊর্মি লালমনিরহাটে নেই। তিনি এখন কোথায় আছেন, তা আমাদের জানা নেই।এদিকে ময়মনসিংহ নগরীর কাশর জেল রোড এলাকার নিজ বাসায় মা-বাবার কাছেও ঊর্মি আসেননি বলে জানিয়েছেন তার মা নাসরিন জাহান।

নাসরিন জাহান বলেন, মেয়ের (ঊর্মি) সঙ্গে গত দুই দিন ধরে আমার কোনো যোগাযোগ নাই। ওর মোবাইল বন্ধ, কোনো যোগাযোগ করছে না। দোয়া করছি আল্লাহ তাকে রক্ষা করুন, হেফাজত করুন। তবে গত পরশু সে লালমনিরহাটে ছিল। কিন্তু এখন কোথায় আছে তা জানি না।এই অবস্থায় ম্যাজিস্ট্রেট তাপসী তাবাসসুম ঊর্মির বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে মানহানির মামলা দায়ের হওয়ায় তিনি গা ঢাকা দিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে বিদেশ চলে যেতে পারেন বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকেই।

যাহোক, উর্মির বিতর্কিত কর্মকান্ডে সরকার বিব্রতবোধ করছেন। ফ্যাসিস্টদের সহযোগীদের কারণে বিষয়টা মাথাচাঁড়া দিচ্ছে। এনিয়ে চলছে অপব্যাখ্যাও। ভুল বুঝাবুঝির অপচেষ্ঠারোধে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো হয়েছে বিবৃতি।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলা অর্থে রিসেট বাটন চাপার কথা বলেননি, বরং কলুষিত রাজনীতি থেকে নতুন যাত্রা বোঝাতে তা বলেছেন।বৃহস্পতিবার সকালে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে।বিবৃতিতে বলা হয়ে, প্রধান উপদেষ্টা রিসেট বাটন চাপার কথা বলেছিলেন কলুষিত রাজনীতি থেকে নতুন যাত্রা বোঝাতে, যে দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতি বাংলাদেশের প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে, অর্থনীতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে, মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করেছে, কোটি কোটি নাগরিকের নাগরিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে।

একাত্তরের ইতিহাসকে ‘হার্ডওয়্যার’ উল্লেখ করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আপনি যখন রিসেট বাটন চাপবেন তখন আপনার সফটওয়্যারটি পুনরায় সচল হবে। এটি হার্ডওয়্যার পরিবর্তন করে না। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের হার্ডওয়্যার। সেটা পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই।

ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া ড. ইউনূসের সাক্ষাৎকারের ভুল ব্যাখ্যা করছে কিছু মানুষ- বিবৃতিতে বলা হয়। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, অধ্যাপক ইউনূস মিডল টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পরপরই তিনি বাংলাদেশ নাগরিক কমিটি গঠন করেন এবং মার্কিন সরকারকে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে রাজি করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রব্যাপী প্রচারণা চালান। তিনি বাংলাদেশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যা সম্পর্কে বিশ্বকে অবহিত করার জন্য বাংলাদেশ নিউজলেটার প্রকাশ করেন।

উল্লেখ্য, গত ৮ আগস্ট ঢাকায় আসার পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের বিজয়কে দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলে উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে ‘১৯৭১ সালে দেশের গৌরবময় স্বাধীনতা যুদ্ধ’ বলে উল্লেখ করেন।

সংশ্লিষ্ট খবর

Back to top button