বিচারবর্হিভূত হত্যা-ভয়েস অব ভিকটিম ফ্যামিলির আর্তনাদ
স্টাফ রিপোর্টার : ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত গ্রেপ্তারের পর বিচারবহির্ভূত হত্যা ও কারা হেফাজতে হত্যায় জড়িত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সদস্যদের বিচারের দাবি জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন ‘ভয়েস অব ভিকটিম ফ্যামিলি’।বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে স্বজন হারানো পরিবারের সদস্যরা মানববন্ধনে এ দাবি জানান।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আমাদের পরিবারের সদস্যরা গত ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তারের পর বিচারবহির্ভূত ও কারা হেফাজতে হত্যার শিকার হয়েছেন। হাসিনা সরকারের পোষ্য বাহিনী বিভিন্ন সময়ে বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী জনতার প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করে রিমান্ডের নামে অত্যাচার করে কারাগারেই খুন করেছে। এমনকি গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে অত্যচারের কারণে পরবর্তীতে গুরুতর অসুস্থ হলেও বিনা চিকিৎসায় তাদের মেরে ফেলা হয়েছে। আমরা আমাদের আপনজনদের হারিয়ে হারিয়ে এখন নিস্ব ও ভীতসন্ত্রস্ত। কারা হেফাজতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতনে হত্যার সঠিক বিচার চাই।
ঢাকার লালবাগের একটি ওয়ার্ডের বিএনপি নেতা আনোয়ার হোসেনের ছেলে আনান হোসেন বলেন, আমার বাবাকে ধরে নিয়ে লালবাগ থানায় অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। এরপর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে। নির্যাতনের কারণে আমার বাবার চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, চোখ খুলতে পারতেন না।
আনোয়ার হোসেন ভালো চিকিৎসা পায়নি অভিযোগ করে তার ছেলে আনান হোসেন আরও বলেন, বাবা ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। বাবা আর আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন না। আমি আমার বাবার হত্যার বিচার চাই।
পিরোজপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক বাবর শেখকে পুলিশ নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে বলে অভিযোগ করেন তার স্ত্রী হাফিজা আক্তার। তিনি বলেন, বাবর বিএনপি করতেন, এটাই তার একমাত্র অপরাধ। যদি বিএনপি করা অপরাধ হয়, তাহলে দেশে কেন দুই দল? এক দল থাকাই তো দরকার।
মানববন্ধন শেষে সচিবালয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর কাছে একটি স্মারকলিপি দিয়েছে সংগঠনটি। কারা হেফাজতে রিমান্ডে এবং অন্যান্য সময়ে বিচারবহির্ভূত হত্যায় জড়িত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সদস্যদের বিচারের দাবিতে এই স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।
স্মারকলিপিতে ৫টি দাবি জানানো হয়। এগুলো হলো—
১। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তার, অতঃপর নির্যাতনে মৃত্যুর ঘটনাগুলোর সঠিক তদন্ত করতে হবে।
২। বিচারের জন্য স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে।
৩। সংশ্লিষ্ট থানার তৎকালীন অফিসারদের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৪। ভিক্টিম পরিবারের সদস্যদের চাকুরি ও আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৫। সংশ্লিষ্ট অফিসারদের অনতিবিলম্বে গ্রেপ্তার করে বিচার কার্যক্রম শুরু করতে হবে এবং তাদের সম্পদের হিসাব প্রকাশ করতে হবে।