খুনী চন্দন পাকড়াও-চট্টগ্রামে আইনজীবীকে কুপিয়েছিল-
আসামি চন্দন ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জে আসছেন, এ তথ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) পেয়েছিল। তিনি ট্রেনে ওঠার পর তথ্যটি জানানো হয় ভৈরব থানা–পুলিশকে। তবে তিনি সরাসরি ট্রেনে ভৈরবে আসেননি। ট্রেন পরিবর্তন করায় তাঁর আসতে দেরি হয়।
ভৈরব ও চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা মামলার প্রধান আসামি চন্দন দাসকে (৩৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বুধবার রাতে কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানা–পুলিশের একটি দলের কাছে চন্দনকে হস্তান্তর করা হয়।
পুলিশ জানায়, আসামি চন্দন ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জে আসছেন, এ তথ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) পেয়েছিল। তিনি ট্রেনে ওঠার পর তথ্যটি জানানো হয় ভৈরব থানা–পুলিশকে। তবে তিনি সরাসরি ট্রেনে ভৈরবে আসেননি। ট্রেন পরিবর্তন করায় তাঁর আসতে দেরি হয়। পরে রাত পৌনে ১২টার দিকে তাঁকে ভৈরব রেলস্টেশন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার চন্দন চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানার সেবক কলোনির মেথরপট্টির ধারী দাসের ছেলে। তাঁর শ্বশুরবাড়ি ভৈরব পৌর শহরের সুইপার কলোনিতে।চন্দনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে ভৈরব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহিন মিয়া বলেন, চন্দন আত্মগোপন করতে শ্বশুরবাড়িতে আসছিলেন। গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি নানা কৌশল অবলম্বন করেন। তিনি সরাসরি ট্রেনে ভৈরব আসেননি; ট্রেন পরিবর্তন করে আসেন। সম্ভাব্য সময়ের চার ঘণ্টা পর চন্দনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়।
ভৈরব থানা–পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ভৈরব স্টেশনে বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার মধ্যে আসামি চন্দনের নেমে পড়ার কথা ছিল। অনেক আগে থেকেই সাদাপোশাকে স্টেশন এলাকায় অবস্থান নেয় পুলিশ। প্ল্যাটফর্ম ত্যাগ করার সম্ভাব্য সব জায়গা ঘিরে ফেলা হয়। ট্রেন আসে ট্রেন যায়, চন্দন আর নামেন না। অবশেষে তিনি ট্রেন থেকে নামেন রাত ১১টার পর। পুলিশের হাতে ধরা পড়েন রাত পৌনে ১২টায়। তাঁর মুখে মাস্ক ছিল। তখন তিনি একটি ব্যাগ হাতে ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মের বাইরে রিকশার জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
পুলিশ জানায়, মুখে মাস্ক থাকায় চন্দনকে প্রথমে চিনতে সমস্যা হচ্ছিল। ডিবি পুলিশ আগেই চন্দনের শার্ট ও প্যান্টের রং জানিয়েছিল। ধরা পড়ার পর তিনি নাম–পরিচয় গোপন করেননি। গ্রেপ্তারের পর চন্দনকে ভৈরব থানায় আনা হয়। সেখানে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রথমে তিনি আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হত্যায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করছিলেন। পরে সাইফুলকে কোপানোর ভিডিও দেখানো হয়। এতে চন্দনের চেহারা স্পষ্ট ছিল। ভিডিও দেখার পর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা আর অস্বীকার করেননি তিনি।
এদিকে চন্দনের শ্বশুরবাড়ি ভৈরব পৌর শহরের সুইপার কলোনিতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে কেউ নেই। চন্দনের শ্বশুর নন্দু পেশায় ডোম ছিলেন। সাত বছর আগে তিনি মারা যান। শাশুড়ি রশ্মি পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে কলোনিতে থাকেন। ১৪ বছর আগে চন্দন ও বিন্দিয়ার বিয়ে হয়। এ দম্পতির দুই সন্তান।
কলোনির অন্য বাসিন্দারা জানান, চন্দন শ্বশুরবাড়িতে কম আসতেন। তাঁদের কেউ জানতেন না চন্দন চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যা মামলার আসামি। গ্রেপ্তার হওয়ার পর বিষয়টি জানতে পারেন।সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর হওয়াকে কেন্দ্র করে গত ২৬ নভেম্বর আদালত প্রাঙ্গণে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নামঞ্জুর হওয়াকে কেন্দ্র করে গত ২৬ নভেম্বর আদালত প্রাঙ্গণে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় সাইফুলের বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন। এ ছাড়া পুলিশের ওপর হামলা, কাজে বাধাদান এবং আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলা, ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও পাঁচটি মামলা হয়। ছয় মামলায় গ্রেপ্তার হন ৪০ জন। তাঁদের মধ্যে হত্যায় জড়িত অভিযোগে ১০ জন গ্রেপ্তার রয়েছেন।
ঘটনাস্থল থেকে পুলিশের সংগ্রহ করা ৫২ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফুটেজের সূত্র ধরে তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ধারালো অস্ত্র দিয়ে আইনজীবী সাইফুলকে কোপান ওম দাশ, চন্দন ও রনব, আর তাঁকে পেটাতে থাকেন অন্যরা। সেখানে আরও ২৫-৩০ জন ছিলেন। তাঁদের বেশির ভাগই পরিচ্ছন্নতাকর্মী।