শেয়ার জুয়াড়ি হিরুকে ধরেন-১১৭ কোটি টাকা জরিমানা
দুধর্ষ জুয়াড়ি হিরু বাহিনী এখনও বহাল তবিয়তে। শুধু জরিমানায় হিরুর কোনো যায় আসেনা। ওই সিন্ডিকেট জুয়ার মত টাকা কামিয়ে ফের জরিমানা দিয়ে আবারও জালিয়াতি করে কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নেয়। এই সেই হিরু যিনি দীর্ঘদিন ধরে শেয়ার বাজার কে জুয়ার বাজার বানিয়ে রেখেছে। বাংলাদেশের এই কুখ্যাত জালিয়াত হিরুকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেফতারের দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা।
শফিক রহমান : বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের দুধর্ষ জুয়াড়ি হিরু বাহিনী এখনও বহাল তবিয়তে। শুধু জরিমানায় হিরুর কোনো যায় আসেনা। ওই সিন্ডিকেট জুয়ার মত টাকা কামিয়ে ফের জরিমানা দিয়ে আবারও জালিয়াতি করে কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নেয়। এই সেই হিরু যিনি দীর্ঘদিন ধরে শেয়ার বাজার কে জুয়ার বাজার বানিয়ে রেখেছে। বাংলাদেশের এই কুখ্যাত জালিয়াত হিরুকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেফতারের দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা।
এই শেয়ার জুয়ারি সমবায় অধিদপ্তরে উপ-নিবন্ধক আবুল খায়ের হিরু। এবার হিরুসহ তার পরিবারকে প্রায় ১১৭ কোটি টাকা জরিমানা করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। জরিমানার তালিকায় এসেছে হিরুর মালিকানাধীন একাধীক প্রতিষ্ঠানের নামও। বৃহস্পতিবার (০৫ ডিসেম্বর) বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ৯৩৪ তম কমিশন সভায় এ জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের নিয়ে শেয়ার কারসাজি চক্র গড়ে তুলেছিলেন সমবায় অধিদপ্তরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার আবুল খায়ের। যিনি পুঁজিবাজারে হিরু নামে সমধিক পরিচিত। তালিকাভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ পুঁজিবাজারে থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন তাঁরা। এবার সেই চক্রকে চারটি কোম্পানির শেয়ার কারসাজির দায়ে শতকোটি টাকার বেশি জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
গত মঙ্গলবার বিএসইসির ৯৩৪তম কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ। আজ বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম।
শেয়ার কারসাজির মূল হোতা হিরু। তাঁর কারসাজি চক্রে রয়েছেন—বাবা আবুল কালাম মাতবর, মা আলেয়া বেগম, স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসান, বোন কনিকা আফরোজ, ভাই মোহাম্মদ বাসার ও সাজিদ মাতবর, হিরুর স্ত্রী সাদিয়া হাসানের ভাই কাজী ফুয়াদ হাসান ও কাজী ফরিদ হাসান। এ ছাড়া রয়েছে হিরুর প্রতিষ্ঠান ডিআইটি কো-অপারেটিভ ও মোনার্ক হোল্ডিংস লিমিটেড।
ফরচুন সুজ, ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্স, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক এবং সোনালী পেপারের শেয়ার নিয়ে বিভিন্ন সময় কারসাজি করায় তাঁদের মোট ১৩৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। হিরু চক্রের বাইরেও শেয়ার কারসাজি ও সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গ করায় আরও ৫ ব্যক্তি ও দুই প্রতিষ্ঠানকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকার মতো জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি।
বিএসইসি জানিয়েছে, ২০২১ সালের ৩ থেকে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত ফরচুন সুজের শেয়ার নিয়ে কারসাজি করায় আবুল খায়ের হিরুকে ১১ কোটি, হিরুর বাবা আবুল কালাম মাতবরকে ৭ কোটি ২০ লাখ, হিরুর প্রতিষ্ঠান ডিআইটি কো-অপারেটিভকে ১৫ কোটি, স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসানকে ২৫ কোটি, বোন কনিকা আফরোজকে ১৯ কোটি এবং ভাই সাজিদ মাতবরকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। মোট ৭৭ কোটি ২১ লাখ টাকা।
২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজিতে হিরুকে ১৯ কোটি ১৫ লাখ, সাজিদ মাতবরকে ১ কোটি ৬০ লাখ, মোহাম্মদ বাসারকে ১ কোটি ১৫ লাখ, কনিকা আফরোজকে ২ কোটি ৯০ লাখ, কাজী সাদিয়া হাসানকে ১ কোটি ৯০ লাখ, কাজী ফুয়াদ হাসানকে ১ লাখ, ডিআইটি কো-অপারেটিভকে ৮৪ লাখ এবং আবুল কালাম মাতবরকে ২২ কোটি ৩০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। মোট জরিমানা ৪৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
২০২১ সালের ৭ থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের শেয়ার কারসাজির কারণে হিরুকে ২ কোটি ৩০ লাখ, আবুল কালাম মাতবরকে ৪ কোটি ১৫ লাখ, কাজী সাদিয়া হাসানকে ১১ লাখ, কনিকা আফরোজকে ১ লাখ, ডিআইটি কো-অপারেটিভকে ১২ লাখ, আলেয়া বেগমকে ১ লাখ, মোহাম্মদ বাসারকে ১ লাখ, সাজিদ মাতবরকে ১ লাখ এবং মোনার্ক হোল্ডিংস লিমিটেডকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। মোট জরিমানা ৬ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।
২০২১ সালের ২৮ জুন থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজির দায়ে হিরুকে ১ লাখ, আবুল কালাম মাতবরকে ১ লাখ, কাজী সাদিয়া হাসানকে ২ লাখ, কনিকা আফরোজকে ১ লাখ, কাজী ফরিদ হাসানকে ৩৫ লাখ এবং কাজী ফুয়াদ হাসানকে ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। মোট জরিমানা করা হয় ৭৫ লাখ টাকা।
এদিকে, ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্সের শেয়ার কারসাজির দায়ে সোনালী পেপার ও বোর্ড মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ পরিচালনা পর্ষদের প্রত্যেক পরিচালককে (স্বতন্ত্র ও মনোনীত পরিচালক বাদে) ২০ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। সেই হিসাবে ওই কোম্পানির তিন পরিচালককে ৬০ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। এই জরিমানা ব্যক্তিগত দায় হিসেবে পরিশোধ করতে হবে বলেও জানানো হয়।
এ ছাড়া, ২০২৩ সালের ২৩ নভেম্বর থেকে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রাইম ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের লেনদেনে কারসাজি করায় মাহফুজা আখতারকে ১০ লাখ এবং দেওয়ান সালেহীন মাহমুদ নামের আরেকজনকে ৪০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
অপর দিকে, সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গ করে মূল ব্যবসায়ের বাইরে বিনিয়োগ করার দায়ে মোনার্ক হোল্ডিংস লিমিটেডকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। আগামী ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে সফটএভিয়ন লিমিটেডে বিনিয়োগ করা টাকা ফেরত আনার নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি। না হলে ৩০ কর্মদিবস অতিবাহিত হওয়ার পরে প্রতিদিনের জন্য ১০ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য করা হবে।
এ ছাড়া সমন্বিত গ্রাহক হিসেবে (সিসিএ) ঘাটতির (যা পরবর্তীকালে পূরণ হয়েছে) কারণে এএনডব্লিউ সিকিউরিটিজকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।