অপরাধরাজনীতি

হাসিনার অডিও নির্দেশনা- যেখানে পাবে সোজা গুলি করবে ফরেনসিক তদন্তে সত্যতা মিলেছে

অনলাইনে শেখ হাসিনার ফাঁস হওয়া একটি অডিও’র ফরেনসিক অনুসন্ধানে শেখ হাসিনার কন্ঠের মিল পাওয়া গেছে। আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একাধিক প্রসিকিউটর শেখ হাসিনার অডিও কলের ক্লিপটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে সংরক্ষণ করেছেন

 

লাবণ্য চৌধুরী : বিগত জুলাই-অগাস্টের আন্দোলন বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে “প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার” করার জন্য নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর প্রতি নির্দেশনা দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা।নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা আন্দোলনকারীদের “যেখানে পাবে, সোজা গুলি করবে”। অনলাইনে শেখ হাসিনার ফাঁস হওয়া একটি অডিও’র ফরেনসিক অনুসন্ধানে শেখ হাসিনার কন্ঠের মিল পাওয়া গেছে। আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একাধিক প্রসিকিউটর শেখ হাসিনার অডিও কলের ক্লিপটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে সংরক্ষণ করেছেন বলে সংশ্লিষ্ঠ সূত্র দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে নিশ্চিত করেছেন। এছাড়াও সিআইডির ফরেনসিক তদন্তেও এর সত্যতা মিলেছে।

শেখ হাসিনার এই অডিও বার্তার মাধ্যমে তিনি সরাসরি হুকুমের আসামী। জাতিসংঘের তথ্যমতে, জুলাই-অগাস্টের আন্দোলন ও সহিংসতায় বাংলাদেশে অন্তত ১,৪০০ জন মানুষ প্রাণ হারান। এসব হত্যাযজ্ঞে আওয়ামী লীগ শাসনামলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বেশ কয়েকজন বড় বড়, দলীয় নীতি নির্ধারনী নেতা, মন্ত্রী সংসদ সদস্য ইতিমধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, গত বছর শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন আন্দোলন দমনে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের অনুমোদন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই দিয়েছিলেন বলে তার সেসময়ের কথোপকথনের ফাঁস হওয়া একটি অডিও রেকর্ডিং থেকে জানা গেছে। গত মার্চ মাসে অনলাইনে ফাঁস হওয়া ওই অডিও রেকর্ডিং, যাচাই করেছে সিআইডি। ওই অডিও তে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে “প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার” করার জন্য দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর প্রতি নির্দেশনা দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা।

নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা আন্দোলনকারীদের “যেখানে পাবে, সোজা গুলি করবে”। একজন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে শেখ হাসিনার কথোপকথনের ফাঁস হওয়া অডিওটি গণহত্যার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ। যাতে শেখ হাসিনা সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের গুলি করার জন্য সরাসরি নির্দেশনা দিয়েছিলেন।

ওদিকে জাতিসংঘের তদন্তকারী দলের তথ্যমতে, গত জুলাই-অগাস্টের ওই আন্দোলন ও সহিংসতায় অন্তত ১,৪০০ জন মানুষ প্রাণ হারান। মানবতাবিরোধী অপরাধের একাধিক অভিযোগে হাসিনার বিরুদ্ধে যে বিচার চলছে সেখানে এই অডিও রেকর্ডিংটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে বলে আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একাধিক প্রসিকিউটর নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে নিশ্চিত করেছেন।

অন্যদিকে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে নেতারা শেখ হাসিনার অডিও রেকর্ডটি সত্য কি-না তা নিয়েও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

ঢাকায় আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের একজন মুখপাত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, এটি ভুয়া অডিও রেকর্ড। এটি এআই দিয়ে তৈরী করে শেখ হাসিনার কন্ঠ বানানোর পাঁয়তারা চলছে। তবে বিবিসির কাছে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের এক মুখপাত্র ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডিংটি “শেখ হাসিনার বেআইনি কোনও উদ্দেশ্যের প্রতিফলন ঘটায় না” বলেও মন্তব্য করেছেন তারা।

ফাঁস হওয়া অডিওটি সম্পর্কে গোয়েন্দা অনুসন্ধানে মিলেছে গত ১৮ই জুলাই নিজের সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে শেখ হাসিনা ওই ফোনালাপটি করেছিলেন। তবে চলতি বছরের মার্চের শুরুতে ফোনালাপের অডিওটি কে ফাঁস করেছে তা স্পষ্ট নয়। দেখা গেছে, বিক্ষোভের পর থেকে হাসিনার কলের অসংখ্য ক্লিপ অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে। তাছাড়া শেখ হাসিনা এখন প্রতিনিয়ত অনলাইনে সরকারের প্রতিটি পদক্ষেপ সম্পর্কে মন্তব্য করে চলেছেন। যা ইউটিউবে প্রকাশ পাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ইউটিউবারদের মাধ্যমে।

বাংলাদেশের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট সিআইডি বলেছে, ১৮ই জুলাইয়ের ফাঁস হওয়া রেকর্ডিংয়ের কণ্ঠের সঙ্গে শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বরের মিল রয়েছে। ফরেনসিক তদন্তে তারা এটা শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ এর এক সিনিয়র কর্মকর্তা দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেছেন, তারা সরকারের উচ্চ পর্যায়কে বিষয়টি জানিয়েছেন।

ওদিকে বিবিসি আলাদাভাবে ইয়ারশটের অডিও ফরেনসিক এক্সপার্টদের দিয়ে হাসিনার ওডিও রেকর্ডিংয়ের সত্যতা যাচাই করেছে।সেখানে ইয়ারশট বলেছে, এটিতে এডিট করার বা কোনো রকম পরিবর্তন করার কোনো প্রমাণ পায়নি। অডিওটি কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়েছে এমন সম্ভাবনাও খুবই কম বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। মানবাধিকার বা পরিবেশ রক্ষার ইস্যুতে অডিও সংক্রান্ত তদন্তের কাজ করে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ইয়ারশট। তারা বলছে, ফাঁস হওয়া রেকর্ডিংটি সম্ভবত এমন একটি ঘরে ধারণ করা হয়েছিল যেখানে ফোন কলটি স্পিকারে বাজানো হয়েছিল। কারণ এতে স্বতন্ত্র টেলিফোনিক ফ্রিকোয়েন্সি এবং ব্যাকগ্রাউন্ডে কিছু শব্দ শনাক্ত করা গেছে।

সংশ্লিষ্ট খবর

Back to top button