রাজনীতি

আত্মঘাতী পথে রাজনীতিকরা-দখলবাজি চাঁদাবাজিতে নিমজ্জিত দলগুলো

 

ঢাকা শহরের ৫৩টি পরিবহন টার্মিনাল ও স্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন ২ কোটি ২১ লাখ টাকা চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া সিলেটের কোয়ারি ও নদ-নদী থেকে পাথর লুটপাট; সেতু, বাজার, ঘাট, বালুমহাল, জলমহাল ইত্যাদির ইজারা নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হয়েছে। করা হয়েছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রাজনৈতিক মামলা।

বিশেষ প্রতিনিধি : রাজনৈতিক দলগুলো দখলবাজি চাঁদাবাজির মধ্যে নিজেদের নিমজ্জিত করে আত্মঘাতী পথে অগ্রসর হয়েছে। নতুনরাও তাদের জন্মলগ্ন থেকে একই রোল মডেল অনুসরণ করেছে বলে জানিয়েছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। ‘কর্তৃত্ববাদী সরকার পতন-পরবর্তী এক বছর: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত হওয়া রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। আজ সোমবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। ‘কর্তৃত্ববাদী সরকার পতন-পরবর্তী এক বছর: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে টিআইবি।

টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে পর্যবেক্ষণে বলা হয়, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় রাজনৈতিক দল বা কিংস পার্টি গঠন করা হয়েছে। এই কিংস পার্টি কারা—এ প্রশ্ন করেন একজন সাংবাদিক। জবাবে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এটা গোপন করার কিছুই নেই। এটি জাতীয় নাগরিক পার্টি, তার সম্পর্কে বলা হয়েছে যে কিংস পার্টি। কারণ, এর সঙ্গে সহযোদ্ধা বা সহযাত্রী হিসেবে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে দুজন সরকারে এখন আছেন। সে হিসেবে কিংস পার্টি।’

৫ আগস্টের পরবর্তী রাজনৈতিক যাত্রা অশুভ ছিল বলে মন্তব্য করেন ইফতেখারুজ্জামান। এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘ওই দিন বিকেল থেকেই বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের একাংশ দলবাজি, চাঁদাবাজি, মামলা–বাণিজ্য শুরু করে এবং গত এক বছর ধরে তা আরও বেড়েছে। এমনকি দলের উচ্চপর্যায় থেকে ব্যবস্থা নিয়েও তা নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। এর ফলে নতুন রাজনৈতিক দলগুলোও তাদের জন্মলগ্ন থেকে একই রোল মডেল অনুসরণ করেছে। দখলবাজি, চাঁদাবাজির মধ্যে নিজেদের নিমজ্জিত করে আত্মঘাতী পথে অগ্রসর হয়েছে।’

টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ১১ মাসে দেশে ৪৭১টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় মোট ১২১ জন নিহত এবং ৫ হাজার ১৮৯ জন আহত হয়েছেন। এসব রাজনৈতিক সহিংসতার ৯২ শতাংশের সঙ্গে বিএনপি, ২২ শতাংশের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, ৫ শতাংশের সঙ্গে জামায়াত এবং ১ শতাংশের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টি জড়িত ছিল বলেও গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

টিআইবির পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়েছে, সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের দখলে থাকা ঢাকা শহরের ৫৩টি পরিবহন টার্মিনাল ও স্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন ২ কোটি ২১ লাখ টাকা চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া সিলেটের কোয়ারি ও নদ-নদী থেকে পাথর লুটপাট; সেতু, বাজার, ঘাট, বালুমহাল, জলমহাল ইত্যাদির ইজারা নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হয়েছে। করা হয়েছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রাজনৈতিক মামলা। ‘মব’ তৈরি, সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন, থানা ঘেরাও ও বিক্ষোভ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানো হয়েছে বলে টিআইবির পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট খবর

Back to top button