ক্ষমতার সিঁড়ি পিআর! আন্দোলনের হুমকি জামায়াতে ইসলামীর

ভোটের ডামাডোলের আগেই মাঠ গরম হচ্ছে পিআর পদ্ধতি নিয়ে। জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনারা পিআর পদ্ধতির পক্ষে এবার আন্দোলনে নামছে বলে প্রকাশ্য ষোষণা দেয়া হয়েছে। ভোটের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ে লাভক্ষতির হিসাব নিকেশ নিয়েই পিআর চাচ্ছে জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনারা।
শফিক রহমান : ক্ষমতার সিঁড়ি ভাবা হচ্ছে পিআরকে! ভোটের ডামাডোলের আগেই মাঠ গরম হচ্ছে পিআর পদ্ধতি নিয়ে। জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনারা পিআর পদ্ধতির পক্ষে এবার আন্দোলনে নামছে বলে প্রকাশ্য ষোষণা দেয়া হয়েছে। ভোটের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ে লাভক্ষতির হিসাব নিকেশ নিয়েই পিআর চাচ্ছে জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনারা। ইতিপূর্বে জামায়াতে ইসলামীর মহাসমাবেশে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন, নির্বাচনে উচ্চকক্ষে যারা পিআর চায় না তারা ফ্যাসিবাদী হতে চায়। ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব ইউনুস আহমাদ বলেছেন, নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতেই হতে হবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে এর আগে পিআর পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হলেও তাতে একমত হতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো। বিএনপি পিআর পদ্ধতিতে ভোটের প্রস্তাবকে আমলেই নিতে রাজি নয়।অন্যদিকে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন, এনসিপি ও গণ অধিকার পরিষদসহ কয়েকটি দল পিআর পদ্ধতির পক্ষে মত দিয়েছে।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ডঃ খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলছেন, তারা মনে করেন নির্বাচনকে বিলম্বিত করার ‘ষড়যন্ত্র ও কৌশল’ হিসেবেই এসব ইস্যু সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে।নির্বাচন সময়মতোই হবে। এ নিয়ে সংকট হবে না। মানুষ ভোট দিয়ে তার প্রতিনিধি নির্বাচন করবে এবং সেই প্রতিনিধিরা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। সেই ভোটই মানুষ দেখতে চায় বলে জানান তিনি।
যাহোক রবিবার সংখ্যানুপাতিক বা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে বৈঠক শেষে এ হুঁশিয়ারি দেন দলটির নায়েবে আমীর সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের। তবে সমমনা ইসলামী দলগুলোর অন্যতম ইসলামী আন্দোলন ইতিপূর্বে পিআর পদ্ধতিতে ভোটের জন্যে গনভোট দাবি করেছিল। সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে এনিয়ে কি ঘটে সেটাই এখন দেখার বিষয়।
সর্বশেষ কয়েক দিন আগে প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে বলেছেন, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতেই অনুষ্ঠিত হবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ এবং উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন আয়োজনে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা করা হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ উপলক্ষ্যে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমরা আশা করছি এই ঐক্যমতের ভিত্তিতে অচিরেই রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে এবং এর বাস্তবায়নেও ঐকমত্যে পৌঁছাবে।”এছাড়া তার ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা দাবি করেছেন, ”জাতীয় জীবনে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে, অর্থনীতিতে গতিশীলতা এসেছে, সংকট দূর হয়েছে।”আর এ কারণেই তারা এখন অন্তর্বর্তী সরকার থেকে একটি নির্বাচিত সরকারের হাতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব তুলে দেওয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছেন বলে তিনি দাবি করেন।
এর আগে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে লন্ডনে বৈঠকের পর দেওয়া বক্তব্য অনুযায়ী বাংলাদেশে ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচনের সম্ভাবনা তৈরি হয়। ওই সময় জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ প্রধান উপদেষ্টা নিরপেক্ষতা ক্ষুন্ন করেছেন বলে জানিয়েছিলেন।
যাহোক ভোট যতই ঘনিয়ে আসছে জামায়াতে ইসলামীসহ তাঁদের সমমনা দলগুলো পিআর পদ্ধতির দিয়ে ঝুঁকে পড়ছেন। নির্বাচনে হতে হবে ভোটের অনুপাতে আসন বণ্টন (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর) পদ্ধতিতে’- জামায়াত ইসলামী নেতাদের এমন বক্তব্য নতুন করে আলোচনা তৈরি করেছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। প্রশ্ন উঠছে যে, শেষ পর্যন্ত নির্বাচন পদ্ধতিকে ঘিরে তৈরি হওয়া বিতর্কই আগামী নির্বাচনকে সংকটে ফেলে দিতে পারে বলেও আশংকা করছেন রাজনৈতিক বুদ্ধিজীবী মহল।
বাংলাদেশে এ মুহূর্তের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি পিআর পদ্ধতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়ে আছেন। সর্বশেষ রবিবার সংখ্যানুপাতিক বা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। রোববার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে বৈঠক শেষে এ হুঁশিয়ারি দেন দলটির নায়েবে আমীর সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের।সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, ‘পিআর পদ্ধতি উচ্চ ও নিম্ন দুই কক্ষের জন্যই জামায়াতের দাবি।
আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর হচ্ছে নির্বাচনি ব্যবস্থার এমন একটি পদ্ধতি, যেখানে আসন বণ্টন হয় প্রতিটি রাজনৈতিক দলের প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে। বিএনপি সংসদ নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে জামায়াতের এই তৎপরতাকে দেখছে ‘নির্বাচন বিলম্বিত করার কৌশল’ হিসেবে। দলটির নেতারা মনে করেন, সরকারের ঘনিষ্ঠ একটি অংশ নিজেদের স্বার্থে ‘নতুন ইস্যু’ সামনে এনে নির্বাচন পেছানোর চেষ্টা করতে পারে।
অন্যদিকে জামায়াত বলছে, প্রচলিত পদ্ধতিতে জনমতের প্রতিফলন ঘটছে না বলেই তারা পিআর পদ্ধতি চাইছেন। দলটির একজন শীর্ষ নেতা দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে বলেছেন, ‘কোয়ালিটি নির্বাচনের’ জন্যই নতুন পদ্ধতিতে নির্বাচন হওয়া উচিত বলে তারা মনে করেন।এমন পরিস্থিতিতে দু পক্ষই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে নিজেদের পক্ষে টানা এবং নিজেদের অবস্থানের পক্ষে জনমত তৈরির চেষ্টা করছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্ষমতার ভাগাভাগিসহ রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ের জন্য সরকার কিংবা অন্য কারও ওপর চাপ তৈরির জন্যই ‘পিআর পদ্ধতিতে’ নির্বাচনের দাবিটি সামনে আনা হয়ে থাকতে পারে।নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব না ঘুচলে সেটি আগামী বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনকে সংকটে ফেলে দেওয়ার মতো পরিস্থিতিও তৈরি করতে পারে।
১০% ভোট পেলে ৩০ টি আসন
পি আর পদ্ধতিতে ভোট হলে কোনো দল মোট ভোটের ১০% ভোট পেলে ৩০ টি আসন পাবে। এটাই হচ্ছে পি আর এর মাহাত্ম। জামায়াতসহ সমমনাদের ভাবনা এই পদ্ধতিই তাদের ক্ষমতার সিঁড়ি। কারণ সারাদেশে তাদের ভোট আছে। কিন্তু আসন ভিত্তিতে তারা কম সিট পেয়ে যান আসছেন বিগত নির্বাচন গুলিতে। বর্তমান বাংলাদেশের সংসদীয় নির্বাচন ব্যবস্থায় ৩০০টি আসনে আলাদা আলাদা প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে রাজনৈতিক দলগুলো।
অন্যদিকে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর হচ্ছে নির্বাচনি ব্যবস্থার এমন একটি পদ্ধতি যেখানে আসন বণ্টন হয় প্রতিটি রাজনৈতিক দলের প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে।উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যদি কোন দল মোট প্রদত্ত ভোটের শতকরা ১০ শতাংশ পায়, তাহলে সেই দল আনুপাতিক হারে সংসদের ১০ শতাংশ বা ৩০টি আসন পাবেন।
যদিও পিআর বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে মুক্ত, গোপন ও মিশ্র তিনটি আনুপাতিক নির্বাচন ব্যবস্থা রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। দক্ষিণ এশিয়ার দুটি দেশ এবং ইউরোপসহ উন্নত বিশ্বের অনেক দেশে আনুপাতিক পদ্ধতিতে ভোট অনুষ্ঠিত হয়।
পিআর পদ্ধতি না মানলে আন্দোলন: জামায়াত
সংখ্যানুপাতিক বা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন না হলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। রোববার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে বৈঠক শেষে এ হুঁশিয়ারি দেন দলটির নায়েবে আমীর সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের।সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, ‘পিআর পদ্ধতি উচ্চ ও নিম্ন দুই কক্ষের জন্যই জামায়াতের দাবি।
এটি মানা না হলে আন্দোলন করা হবে। পিআর পদ্ধতিতে প্রতিটা জনগণের ভোটের মূল্যায়ন করা হয়।’ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ পিআর পদ্ধতিতে অনুষ্ঠানের বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) কয়েকটি দল। তবে বিএনপি এ পদ্ধতিতে ভোটে রাজি নয়।
বিষয়টি নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বেশ কয়েকদফা আলোচনা করলেও কোনো সুরাহা হয়নি। এরমধ্যে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।নির্বাচনের সময় ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী সব সময়ে নির্বাচনের পক্ষে। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনে কোনো আপত্তি নাই। তারিখকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি।’