অপরাধঅর্থনীতি

বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘সোনার ছেলে’ শাহীনুলের ভাইরাল কান্ড-মাফিয়া এনায়েত ১৯ কোটি তুললো-

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘সোনার ছেলে’! বিতর্কিত আপত্তিকর ৩ স্টাইলে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ভাইরাল হওয়ার মুখেও বীর দর্পে অফিস করেছেন বিএফআইইউ প্রধান এ এফ এম শাহীনুল ইসলাম। এই বিতর্কেও মাঝে তিনি পরিবহন লুটেরা এনায়েত উল্লাহ ও তার পরিবারের ৫০টি ব্যাংক হিসাবে জব্দ থাকা কোটি টাকাও তুলতে সহায়তা করেছেন।

শফিক রহমান : অবশেষে ধরা খেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘সোনার ছেলে’! বিতর্কিত আপত্তিকর ৩ স্টাইলে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ভাইরাল হওয়ার মুখেও বীর দর্পে অফিস করেছেন বিএফআইইউ প্রধান এ এফ এম শাহীনুল ইসলাম। এই বিতর্কেও মাঝে তিনি পরিবহন লুটেরা এনায়েত উল্লাহ ও তার পরিবারের ৫০টি ব্যাংক হিসাবে জব্দ থাকা কোটি টাকাও তুলতে সহায়তা করেছেন। বলার অপেক্ষা রাখে কি কত কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছেন তিনি? শাহীনুলের নির্দেশে পরিবহন মাফিয়া এনায়েত জব্দ করা হিসাব থেকে ১৯ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান এ এফ এম শাহীনুল ইসলামের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে সরকার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার একাধিক বিতর্কিত ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুরোধে বুধবার (২০ আগস্ট) সন্ধ্যায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাইদ কুতুব। সদস্যরা হলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম, পরিচালক (তথ্যপ্রযুক্তি) মতিউর রহমান এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে মতামতসহ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান এ এফ এম শাহীনুল ইসলাম। নিয়োগের সাড়ে সাত মাসের মধ্যেই বিতর্কিত ভিডিও ভাইরালের ঘটনায় তিনি এখন তদন্তের মুখে। এর আগে গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকও আলাদাভাবে একটি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নরের নেতৃত্বে গঠিত ওই কমিটিকে সহায়তা করছে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর জানিয়েছেন, বিএফআইইউ প্রধানকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হলেও বিএফআইইউ সূত্র দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে জানিয়েছেন, তিনি আজ অফিস করেছেন।

গত বছরের ১২ আগস্ট আগের প্রধান মাসুদ বিশ্বাসের পদত্যাগের পর প্রায় পাঁচ মাস বিএফআইইউর প্রধানের পদটি শূন্য ছিল। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের এক নিয়োগ বোর্ড গঠন করা হয়।বোর্ডে ছিলেন বুয়েটের শিক্ষক ড. মো. সোহরাব হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর মোহাম্মদ এ (রুমী) আলী, আইন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মহিউদ্দীন এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক।

২০২৩ সালের ৩ নভেম্বর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ২৭ জন প্রার্থী আবেদন করেন। প্রাথমিক বাছাই শেষে সাক্ষাৎকারে ডাকা হয় ২০ জনকে। ১ জানুয়ারির সভায় চূড়ান্ত তালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করেন সাবেক নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম শাহীনুল ইসলাম। তাঁর পরের স্থানেই ছিলেন মো. রফিকুল ইসলাম ও এ কে এম এহসান।

প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, ব্যাংক ও আর্থিক খাতে অভিজ্ঞতা, মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ বিষয়ে দক্ষতা যাচাই করে তালিকা চূড়ান্ত করা হয়। পাশাপাশি নিয়োগে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই) ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) সংস্থার প্রতিবেদনকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়।প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদনের জন্য পাঠানো সারসংক্ষেপে তিন প্রার্থীর নাম উল্লেখ থাকলেও প্রথম স্থান পাওয়ায় শাহীনুল ইসলামকে দুই বছরের জন্য নিয়োগের সুপারিশ করা হয়।

ওদিকে এই ভিডিও কেলেঙ্কারি এমন এক সময়ে সামনে এলো যখন শাহীনুল ইসলাম বিতর্কিত পরিবহন প্রতিষ্ঠান এনা গ্রুপের মালিক খন্দকার এনায়েত উল্লাহর ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা উত্তোলনের অনুমতি দেওয়ার ঘটনায় তোলপাড় আলোচনায় আছেন। জানা গেছে, গত বছরের নভেম্বরে বিএফআইইউ এনায়েত উল্লাহ ও তার পরিবারের ৫০টি ব্যাংক হিসাবে থাকা ১২০ কোটি টাকা জব্দ করে। তবে চলতি বছরের এপ্রিলে ব্যাংক আল-ফালাহর চারটি হিসাব পুনরায় ফ্রিজ না করে ১৯ কোটি টাকা উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া হয়। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এই তথ্য জানতে পেরেছে।

দুদকের অভিযোগ অনুযায়ী, সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ বাস রুট থেকে প্রতিদিন প্রায় ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করতেন। এই অভিযোগের ভিত্তিতে ২৭ মে মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত তার ১২০ কোটি টাকা ফ্রিজের আদেশ দেন। তবে পরে দুদক জানতে পারে, বাস্তবে হিসাবগুলোতে রয়েছে ১০১ কোটি টাকা এবং অনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে বাকি অর্থ উত্তোলনের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে শাহীনুল ইসলাম বলেন, এনা পরিবহনের আবেদনের ভিত্তিতে কিছু অর্থ উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তিনি দাবি করেন, ব্যবসা পরিচালনার স্বার্থে অনেক প্রতিষ্ঠানকে এমন সুযোগ দেওয়া হয়ে থাকে। ভিডিও প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এগুলো ভুয়া এবং তাকে হেয় করার উদ্দেশ্যে ছড়ানো হয়েছে।

 

সংশ্লিষ্ট খবর

Back to top button