যে রিজার্ভ আছে ৯ মাসের খাবারও কিনে আনতে পারব: প্রধানমন্ত্রী
বিশেষ প্রতিনিধি :প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,যে রিজার্ভ আছে ৯ মাসের খাবারও কিনে আনতে পারব-ইনশাআল্লাহ। আমাদের রিজার্ভ থাকে, কোনো আপৎকালে ৩ মাসের খাদ্যশস্য বা আমদানি করার মতো যেন অর্থটা আমাদের হাতে থাকে। আমাদের এখন যে রিজার্ভ আছে তাতে ৩ মাস কেন, ৬ মাস, ৯ মাসের খাবারও আমরা কিনে আনতে পারব। দলীয় নেতা-কর্মীদের সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড দেশবাসীর সামনে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে বলেন, কোন ষড়যন্ত্রই দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে থামাতে পারবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অগ্রগতি ব্যাহত করার অনেক ষড়যন্ত্র আছে, কিন্তু উন্নয়নের অপ্রতিরোধ্য গতিকে কেউ বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না ইনশাল্লাহ।বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বুধবার দুপুরে রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে যুক্ত হয়ে তিনি এ সব কথা বলেন।
এ সময় দেশের চাহিদার তুলনায় বেশি পেট্রল ও অকটেন আছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির আমলে ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে রিজার্ভ ছিল ৩ বিলিয়নের কিছু ওপরে আর আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর আমরা যখন ২০০৯-এ সরকার গঠন করি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় কিছুটা বেড়েছিল। ৭ বিলিয়নের মতো আমরা পেয়েছিলাম। সেখানে ৪৮ বিলিয়ন পর্যন্ত রিজার্ভ বাড়াতে আমরা সক্ষম হয়েছিলাম। করোনাকালে আমাদের আমদানি বন্ধ ছিল, এরপর আমদানি করতে হয়েছে, আমদানি করতে যেয়ে এবং বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য আমাদের রিজার্ভ খরচ করতে হয়েছে। তা ছাড়া আমরা যে ভ্যাকসিন কিনে দিয়েছি, বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দিলাম, বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন সেখানেও তো আমাদের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হয়েছে। ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য সিরিঞ্জ থেকে শুরু করে যা যা দরকার সেগুলো তো আমরা বিদেশ থেকে কিনে এনেছি। শুধু কিনে আনা না, আমাদের বিমান পাঠিয়ে সেগুলো নিয়ে আসতে হয়েছে। সেখানে বিরাট অঙ্কের টাকা আমরা খরচ করেছি।
আজকে আমাদের আমদানি কিন্তু সব ক্যাপিটাল মেশিনারিজ। এটা মাথায় রাখতে হবে, এই ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আনার পরে যেসব শিল্প গড়ে উঠবে, সেটা যখন প্রোডাকশনে যাবে সেখানে আমাদের দেশের মানুষই লাভবান হবে। এটা তো অনেক সহজ, এ খরচ তো আমাদের করতেই হবে। আমাদের রিজার্ভ থাকে কোনো আপৎকালে ৩ মাসের খাদ্যশস্য বা আমদানি করার মতো যেন অর্থটা আমাদের হাতে থাকে। আমাদের এখন যে রিজার্ভ আছে তাতে ৩ মাস কেন, ৬ মাস, ৯ মাসের খাবারও আমরা কিনে আনতে পারব। আমাদের সেই পদক্ষেপ নিতে হবে যেন খাদ্যশস্য আমাদের কিনতে না হয়। আমরা যেন নিজেরা উৎপাদন করতে পারি, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগকে আজ এটাই বলবো তোমাদের কাজ হবে আমরা যে মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি, যে উন্নতি দেশের হয়েছে, শিক্ষার দ্বার অবারিত হয়েছে, বহুমুখী শিক্ষার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি, কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করেছি সেই সাথে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছি- এসব দেশবাসীর সামনে তুলে ধরা। আমরা মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছি, গ্রামে গ্রামে ব্রডব্যান্ড সেবা পৌঁছে দেয়ার মাধ্যমে ডিজিটাল ব্যবস্থাপনায় মানুষের ঘরে বসে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, ফ্রিলান্সার সৃষ্টি হয়েছে। বেকারদের ব্যাপক কর্মসংস্থান হয়েছে, রাস্তাÑঘাট, পুল, ব্রীজ নির্মাণের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন ঘটিয়েছি- এই উন্নয়নের কথাগুলো মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। প্রত্যেকটি অঞ্চলে গিয়ে মানুষের কাছে বার বার বলতে হবে। কে কী বললো সেদিকে কর্ণপাত করার কোন দরকার নেই। আমরা কি করেছি তা মানুষের কাছে তুলে ধরতে পারলে সেটাই হবে আসল জবাব।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দেয়া, স্বাস্থ্য সেবা ও শিক্ষাকে জনগণের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসার পাশাপাশি গৃহহীনকে ঘর করে দেয়ার উদ্যোগ তুলে ধরেন। দেশে কোন গৃহহীন পরিবার থাকলে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকমীদের নিজ এলাকায় খুঁজে দেখার আহ্বান জানান তিনি। কারণ, সরকার সবাইকে ঘর করে দিবে। এ থেকে দলিত শ্রেণি পেশার মানুষ এমনকি হিজড়া ও বেদে শ্রেণিও বাদ যাচ্ছে না। তার সরকার তাদের রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনার থেকে সকলের জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে পরিকল্পনা সেটা থেকেই এটা করছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, কে কী বললো সেদিকে না যেয়ে আমরা মানুষের জন্য যে উন্নয়ন করেছি সেই উন্নয়নের কথাগুলো একেবারে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। বার বার বলতে হবে। এদিকে দৃষ্টি দিতে হবে এবং এই কাজটা করতে হবে।আমরা বিস্মিত জাতি বিধায় এগুলো বার বার মানুষের কাছে তুলে ধরায় গুরুত্বারোপ করে সরকার প্রধান বলেন, ষড়ঋতুর দেশ আমাদের। দুই মাস পর পর ঋতু বদলায়, মানুষের মনও বদলায় এবং ভুলেও যায়। কাজেই দুই মাস পর ভুলে যেন না যায়, সে জন্য আমরা কি কাজ করেছি মানুষের কাছে বার বার সেটা বলতে হবে, বোঝাতে হবে। কারণ একটা শ্রেণি আছে যারা মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায়। এই জ্ঞানপাপীদের কথা শুনে অজ্ঞান হয়ে কেউ যেন বিভ্রান্ত না হয়।