দালাল নয়-বিদেশ যেতে ব্যাংক বিনা জামানতেও ঋণ দেয় প্রধানমন্ত্রী
বিশেষ প্রতিনিধি : কোনো দালালের খপ্পরে পড়ে সবকিছু বিক্রি করে বিদেশে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিদেশে যেতে চাইলে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে আপনারা ঋণ নিতে পারেন। প্রয়োজনে বিনা জামানতেও ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা আছে, যাতে জমি-জমা, সম্পত্তি বিক্রি না করতে হয়। তাই দয়া করে এ ধরনের কোনো প্ররোচনায় পড়বেন না।বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সেন্টেনিয়াল কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসহ দেশের বিভিন্ন উপজেলায় নির্মিত ২৪টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানে একই সঙ্গে চট্টগ্রামে একটি ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজির উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
প্রসঙ্গত, দক্ষ জনশক্তি তৈরি করে তাদের বিদেশে পাঠানোর উদ্দেশ্যে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো উপজেলা পর্যায়ে এসব কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বাস্তবায়ন করছে। এর আগে এসব উপজেলায় কোনো প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছিল না। যার কারণে বিদেশ গমনেচ্ছুদের আশপাশের জেলায় যেতে হতো।বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের অর্থ দেশে প্রেরণ যাতে সুবিধাজনক হয় সেইভাবে সংশ্লিষ্ট সবাইকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানি অনেক জায়গায় তারা কাজ করে কিন্তু সেখানে কোনো মানি এক্সচেঞ্জ বা ব্যাংকের সুবিধা পায় না। তাদের নির্ভর করতে হয় হুন্ডির উপর। এর উপর আমাদের দেশে কিছু লোক আছে, কিছু এজেন্ট আছে তারা নানাভাবে মানুষকে উসকায়। ব্যাংকের মাধ্যমে না পাঠিয়ে হুন্ডির মাধ্যমে পাঠালে তাতে তাদের লাভ হয়। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ৩৮ শতাংশ হচ্ছে যুব সমাজ (২০-৪০বছর)। যুব সমাজকে শুধু বিদেশে পাঠানোর চিন্তা করলে হবে না। আমরা দেশে ১০০টা অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করছি। সেখানে আমাদের দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন। কাজেই আমরা প্রশিক্ষণ দেব, বিদেশের পাশিপাশি দেশেও তাদের যেন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়।প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ একটু কম-বেশি হবে। আমাদের কিছু লোক আছে এটা নিয়ে অনেকে নানা ধরনের গল্প-গুজব করে বেড়ায়। আমি মনে করি আমাদের তিন মাসের খাদ্য কেনার রিজার্ভ থাকলেই যথেষ্ট।
তিনি আরও বলেন, খাদ্যপণ্যের উপর আমাদের পরনির্ভরশীলতা কমিয়ে দেশের উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমাদের উর্বর জমি ও জনশক্তি রয়েছে। পণ্য উৎপাদনের পাশাপাশি সংরক্ষণেও আধুনিক ব্যবস্থা নিতে হবে এবং খাদ্যপণ্য বা কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত পণ্য শিল্প ব্যাপকভাবে গড়ে তুলতে হবে। এতে নিজের দেশে যেমন মার্কেট তৈরি হবে আবার বিদেশেও রপ্তানি করতে পারব।‘শুধু রেমিট্যান্সের উপর নির্ভরশীল না হয়ে, বিদেশে যেন রপ্তানি করা যায়, সেজন্য পণ্য বহুমুখীকরণ করা এবং পণ্যের নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে। নতুন নতুন বাজারে কোন কোন পণ্যের কেমন চাহিদা আছে সেই ধরনের পণ্য বাংলাদেশে তৈরি করে পাঠাতে হবে। সেখান থেকে যাতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হয়। সেই ব্যবস্থা আমরা নেব। রপ্তানি নির্ভর আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের দিকে আমাদের আরও বেশি মনোযোগ দিতে হবে। সেদিকে আমি অনুরোধ করব’- যোগ করেন তিনি।
দক্ষ কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা করাসহ যৌথভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রয়োজনে আপনারা স্ব স্ব মন্ত্রণালয় থেকে এক একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা দিয়ে একটি কমিটি করেন। আপনারা স্ব উদ্যোগে কাজ করবেন তাহলে সব কাজ সহজ হয়ে যাবে। যাতে আমাদের কোনোরকম প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি না হয়।তিনি বলেন, দালালদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে যখন বিপদে পড়ে, তখন সরকাকেই উদ্ধার করতে হয়। অথবা ভূমধ্যসাগরে সলিল সমাধি হয়, এটা হচ্ছে দুভার্গ্যজনক। প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ নিয়ে আপনারা বিদেশে যেতে পারেন। নিজে কাজ করে এ ঋণও শোধ দিতে পারেন, নিজের পরিবারকে দেখতে পারেন। তাদের জন্য টাকা রাখতে পারেন।
প্রযুক্তির দ্রুত উন্নতির যুগে দেশকে সমানতালে এগিয়ে নিতে হলে উন্নত টেকসই প্রযুক্তি নির্ভর প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। সেদিকে বিশেষভাবে নজর দিয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইমরান আহমদের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক শহিদুল আলম এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ মনিরুছ সালেহীন।