দাম বাড়ল-ডিজেল লিটারে ৩৪ অকটেন ৪৬-পেট্রোল ৪৪ টাকা
বিশেষ প্রতিনিধি : শুক্রবার রাত ১২টা থেকে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে। নতুন দাম অনুযায়ী লিটারপ্রতি অকটেন ১৩৫, পেট্রোল ১৩০, ডিজেল ও কেরোসিন ১১৪ টাকায় বিক্রি হবে।ডিজেলের দাম লিটারে ৩৪, অকটেন ৪৬ আর পেট্রোলের দাম লিটারে ৪৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপপ্রধান তথ্য অফিসার মীর মোহাম্মদ আসলাম উদ্দিন স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি হওয়ার বাংলাদেশ প্রেট্টোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি), ইস্টার্ণ রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল) পরিশোধিত এবং আমদানি/ক্রয়কৃত ডিজেল, কেরোসিন, অকটেন ও পেট্টোলে মূল্য সমন্বয় করে ভোক্তা পর্যায়ে পুণঃনির্ধারণ করেছে।বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, শুক্রবার রাত ১২টার পর থেকে ডিপোর ৪০ কিলোমিটারের ভেতর ভোক্তাপর্যায়ে খুচরা মূল্য ডিজেল প্রতি লিটার ১১৪ টাকা, কেরোসিন প্রতি লিটার ১১৪, অকটেন প্রতি লিটার ১৩৫ ও পেট্টোল প্রতি লিটার ১৩০ টাকায় বিক্রি হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের উর্ধ্বগতির কারণে পার্শ্ববর্তী দেশসহ বিভিন্ন দেশে নিয়মিত তেলের মূল্য সমন্বয় করে থাকে। ভারত ২২ মে থেকে কলকাতায় ডিজেলের মূল্য প্রতি লিটার ৯২.৭৬ রুপি এবং পেট্রোল লিটার প্রতি ১০৬.০৩ রুপি নির্ধারণ করেছে যা এখনো বিদ্যমান আছে। এই মূল্য বাংলাদেশি টাকায় যথাক্রমে ১১৪.০৯ টাকা এবং ১৩০.৪২ টাকা। (১ রুপি=গড় ১.২৩ টাকা)। অর্থাৎ বাংলাদেশে কলকাতার তুলনায় ডিজেলের মূল্য লিটার প্রতি ৩৪.০৯ এবং পেট্টোল লিটার প্রতি ৪৪.৪২ টাকা কমে বিক্রয় হচ্ছিল। মূল্য কম থাকায় তেল পাচার হওয়ার আশঙ্কা থেকেও জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়া সময়ের দাবি।এর আগে শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর বারিধারার বাসায় গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, দেশে আবার তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের দাম বাড়তে পারে। বিশ্ব বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দেশে তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম আবারও সমন্বয়ের কথা ভাবছে সরকার।
তিনি বলেন, বিদ্যুতের দাম সমন্বয়ের ব্যাপারে আমরা অপেক্ষায় আছি, গ্যাসের ব্যাপারে আমরা আরেকটা সমন্বয়ে যেতে চাচ্ছি এবং আমরা মনে করছি, তেলেরও একটা সমন্বয় হওয়া উচিত।প্রতিমন্ত্রী তখন আরো বলেন, ইতোমধ্যে বিপিসি প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার উপরে নিজে থেকে লস দিয়েছে। আমি মনে করি যে, কোথায় কমল, কোথায় বাড়ল—তা না। বিশ্ব বাজারের সঙ্গে একটা সমন্বয় থাকা উচিত।তার এ বক্তব্যের পর রাত ১০টার দিকে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা আসে।
গত ৫ জুন মাসের শুরুতে গ্যাসের দাম এক দফায় ২২ দশমিক ৭৮ শতাংশ বাড়ানো হয়। এর আগে গত বছরের নভেম্বরে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ায় সরকার।বিদ্যুতের পাইকারি দাম বাড়ানো হয়েছিল সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে। তখন খুচরায়ও দাম বাড়ে। এদিকে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কারিগরি কমিটি পাইকারিতে বিদ্যুতের দাম ৫৮ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে গত মে মাসে, যার ওপর এ মাসেই সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা।
ইউক্রেইন যুদ্ধের জেরে অস্থির বিশ্ব বাজারে এলএনজির দাম প্রতি ইউনিট ৭/৮ ডলার থেকে বেড়ে এখন ৩৫ ডলারের ওপরে চলছে। অপরিশোধিত তেলের দামও প্রতি ব্যারেল ৭০ ডলার থেকে বেড়ে ১০০ ডলারের আশপাশে উঠানামা করছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) জানিয়েছে, সাত অর্থবছর মুনাফায় থাকার পর ইউক্রেইন যুদ্ধে বড় ধাক্কা খেয়েছে তারা। আবার লোকসানে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি। এখন প্রতিদিন ১০০ কোটি টাকার ওপর সংস্থাটি লোকসান হচ্ছে।
প্রতিমন্ত্রী তার বক্তব্যে আরো বলেন, একটা জিনিস বুঝতে হবে, কারা কী বলল তাদের কথা অনুযায়ী তো আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি না! বিভিন্ন মানুষ বিভিন্নভাবে কথা বলছে। ইউক্রেন যুদ্ধের আগে তো পরিস্থিতি এ রকম ছিল না। আমরা তো পরিস্থিতি কন্ট্রোলে রাখি। ইউক্রেন যুদ্ধের পরও আমাদের পরিস্থিতি চালাচ্ছিলাম। হঠাৎ করে তেল এবং গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়াতে সাময়িক সমস্যা সৃষ্টি করেছে। আমি দেখলাম, হাজারো মানুষ হাজারো পরামর্শ দেওয়া শুরু করে দিয়েছে; এটা করলে ভালো হতো, আগে কেন করলেন না। এটা আমাদের চিরাচরিত বাঙালি চরিত্র। তো কে কী বললো সেটা না, আমাদের সায়েন্টিফিক্যালি সমাধানে আসতে হবে।