পাঁচ চোরের ধনী হওয়ার নেশায় গুড়েবালি-
স্টাফ রিপোর্টার : গাড়ি ও বাইক চুরি করেই ওরা ধনী হতে হয়েছিল। কিন্তু ওদের স্বপ্নে গুড়েবালি ঘটেছে গোয়েন্দা দলের অভিযানে। একে একে পাঁচ শতাধিক গাড়ি চুরি করেছিল চক্রটি। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। ১০ দিনের চোরের একদিন গৃহস্তের বলে কথা আছে না; তাই ঘটলো। এদেরই পাঁচ চোর চক্রের এক চোর সজল ধনী ব্যবসায়ীর মেয়েকে পালিয়ে বিয়ে করেন। কিন্তু মেয়ের মা-বাবা তাদের মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলে চোর সজলের সব পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও গোয়েন্দা (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ।সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ডিএমপির গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন, মিডিয়া মুখপাত্র ফারুক হোসেন, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার তরিকুর রহমান, মিডিয়ার এডিসি হাফিজ আল আসাদ, এসি আবু তালেব ও টিম লিডার মাহফুজুর রহমান।
ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ বলেন, যারা চুরি করে এবং যারা চোরাই জিনিস কিনে ব্যবহার করবেন উভয়েই সমান অপরাধী। যার কাছে চোরাই জিনিস পাওয়া যাবে, তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, ঢাকা থেকে মোটরসাইকেল চুরি করে মুন্সীগঞ্জ, নবাবগঞ্জ ও দোহারসহ আশপাশের এলাকায় নিয়ে বিক্রি করে এই চক্রটি। তারা তিন-চার লাখ টাকার মোটর সাইকেল কম দামে বিক্রি করে দেয়।সোমবার রাজধানীর শনিরআখড়া ও ধলপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে চোর চক্রের মূল হোতাসহ পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবির ওয়ারী বিভাগ। গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন- নূর মোহাম্মদ (২৬), সজল (১৮), মনির (২২), আকাশ (২২) ও রবিন (২৩)। এসময় তাদের কাছ থেকে ১৩ টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি পালসার, একটি এ্যাপাসি আরটাআর ও ১১টি সুজুকি জিক্সার।
যখনই চুরি হোক না কেনো থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার পরামর্শ দেন ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ। তিনি বলেন, পরে জিডি কপি ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় পৌঁছালে চোরাই গাড়িসহ সব কিছু উদ্ধার করতে সহজ হয়। হারুন জানান, গ্রেপ্তার চক্রটি এমন চাবি ব্যবহার করে, তারা যেকোনো মোটরসাইকেলকে চালু করতে পারে। তবে তারা সুজুকি জিক্সার গাড়ি বেশি চুরি করতে পারে। ঢাকা মহানগরে এলাকা ভেদে ভিন্ন ভিন্ন চোর চক্র সক্রিয় রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ কাজ করছে বলে জানান তিনি।
পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তার সজল, মনির ও আকাশের মূল কাজ ছিল দোহার ও আশে পাশের এলাকা থেকে চোরাই মোটরসাইকেল বিক্রির জন্য ক্রেতা খুঁজে বের করা। প্রতিটি চোরাই মোটর সাইকেল তারা ৪০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করতো। বিক্রির টাকা নূর মোহাম্মদ ৪০ শতাংশ, রবিন ৩০ শতাংশ ও অবশিষ্ট টাকা অন্যান্যরা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিতেন। গ্রেপ্তার আসামিরা জানায়, তারা এ পর্যন্ত ৫০০টিরও বেশি মোটরসাইকেল চুরি করেছে। তারা ২০১৫ সাল থেকে মোটরসাইকেল চুরি করে আসছে।
পুলিশ জানায়, ডিএমপির ওয়ারী ও গেন্ডারিয়া থানার দুটি চুরির মামলা তদন্তকালে সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করতে গিয়ে তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় চোর চক্রকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা (ওয়ারী) বিভাগ।পুলিশের ভাষ্য, জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানিয়েছে তারা ঢাকা মহানগর এলাকায় দীর্ঘদিন যাবত মোটরসাইকেল চুরি করে আসছিল। চোর চক্রের মূল হোতা নূর মোহাম্মদ মূলত জুরাইন এলাকায় একটি কাঠের দোকানে নকশার কাজ করত। পরে একদিন হাসনাবাদ গলির ভিতর চা দোকানে গ্রেপ্তার রবিনের সঙ্গে পরিচয় হয়। দুজন মিলে পরিকল্পনা করে, কীভাবে দ্রুত বড়লোক হওয়া যায়।
নূর মোহাম্মদ রবিনকে বলেন, তার কাছে করাত ধার দেওয়ার রেদ আছে ,যা দিয়ে মোটরসাইকেলের চাবি পাতলা করে ‘মাস্টার কি’ বানানো যাবে। ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী রবিনের জিক্সার মোটরসাইকেলের চাবি রেদ দিয়ে ঘষে পাতলা করে শারিঘাট, হাসনাবাদ, দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জে পার্ক করা একটি জিক্সার মোটরসাইকেল চুরি করার উদ্দেশ্যে প্রথমে পরীক্ষামূলক চেষ্টা করে। পরে মোটরসাইকেলটি স্টার্ট হয়ে গেলে তারা মোটরসাইকেলটি চুরি করে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তারা এ চাবিকেই ‘মাস্টার কি’ হিসেবে ব্যবহার করে দুই বন্ধু দীর্ঘদিন যাবত মোটরসাইকেল চুরি করে আসছে।চোরাই মোটরসাইকেল বিক্রি করার জন্য তারা দোহারে সজলকে তাদের চক্রের সদস্য হিসেবে যুক্ত করে। ঢাকা মহানগর এলাকা থেকে মোটরসাইকেল চুরি করে নিরাপদ রোড হিসেবে পোস্তগোলা ব্রিজ পার হয়ে মাওয়া রোডের শ্রীনগর বাইপাস হয়ে মেঘুলা বাজার, দোহার রুট হিসেবে ব্যবহার করে।
অন্যদিকে বাবুবাজার ব্রিজ পার হয়ে কেরাণীগঞ্জ, জয়পাড়া ও দোহার এলাকা যাওয়ার রুট হিসেবে ব্যবহার করে। সজল ও মনির দোহারের বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে চোরাই মোটরসাইকেল ইন্ডিয়ান বর্ডার ক্রস গাড়ি বলে বিক্রি করে আসছিল।সজল জানায়, তিনি নিজেও বড়লোক হওয়ার নেশায় দোহারের মেঘুলা বাজারের একজন ধনী বেকারি ব্যবসায়ীর মেয়েকে পালিয়ে নিয়ে বিয়ে করেন। কিন্তু মেয়ের মা-বাবা তাদের মেয়ের সঙ্গে সজলের সম্পর্ক ছিন্ন করলে সজল হতাশ হয়ে যায়। বড়লোক হওয়ার নেশায় আসামি নুর মোহাম্মদ-রবিনদের চক্রে সজলও যোগ দেন।রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানায় গ্রেপ্তার নুর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে চারটি মামলা, রবিনের বিরুদ্ধে তিনটি ও অন্যান্য তিনজনের বিরুদ্ধে একটি করে মামলা আছে।