৬৪ কোটি লুটেরা শারমিন তানিয়া কানাডা পালাচ্ছিল
বিশেষ প্রতিনিধি : সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎকারী পিকে হালদারের অন্যতম সহযোগী ছিলেন খবির উদ্দিনের দুই মেয়ে ৬৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পালিয়ে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু বিধিবাম; র্যাবের নজরদারিতে সব ভেস্তে গেছে। ধরা পড়েছে লুটেরা কানাডা প্রবাসি দুই বোন শারমিন ও তানিয়া। পিপলস্ লিজিং এন্ড ফাইন্যান্স কোম্পানির পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় প্রায় ২০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন খবির উদ্দিন। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে খবিরের দুই মেয়ে আত্মসাৎ করেন ৬৪ কোটি টাকা। খবির উদ্দিনের দুই মেয়ে শারমিন আহমেদ ও তানিয়া আহমেদ। তারা দুই দশক ধরে কানাডায় বসবাস করছেন। পারিবারিক একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গত ২৮ জুলাই তারা দেশে আসেন। বুধবার দেশত্যাগের পরিকল্পনা ছিল তাদের। তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার ভোরে তাদের ধানমন্ডি থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
র্যাবের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, গেল প্রায় দুই মাস ধরে আমরা তাদেরকে অনুসরণ করছিলাম। এর আগে ২৮ জুলাই কানাডা থেকে দেশে আসেন শারমিন ও তানিয়া। বুধবার ভোরে তাদের দেশত্যাগের পরিকল্পনা ছিল। সেই অনুযায়ী মঙ্গলবার রাতে একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে, যা দিয়ে ধানমন্ডির বাসা থেকে বেশকিছু ল্যাগেজ বিমানবন্দরে রেখে আসা হয়।
ওই অ্যাম্বুলেন্স পুনরায় ধানমন্ডিতে আসে। দেশত্যাগের পরিকল্পনা জেনে ফেলায় র্যাব সদস্যরা ওই বাড়ির আশপাশে অবস্থান করে। রাত দেড়টার দিকে ওই বাড়ি ঘিরে ফেলা হয়। এসময় কোনোভাবে খবির উদ্দিনের দুই মেয়ে র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে যান। নিজেদের গ্রেপ্তার এড়াতে তারা ভবনের ছাদের একটি রুমে আত্মগোপন করেন।
অভিযানে যখন প্রতিটি রুম তল্লাশি করা হচ্ছিল তখন শারমিন ও তানিয়াকে পাওয়া যাচ্ছিল না। ওই ফ্ল্যাটে থাকা তার স্বজনরা জানায়, তারা দুই বোন এখানে নেই। সন্ধ্যায় বাসা থেকে চলে গেছেন। তাদের কথায় সন্দেহ বাড়লে র্যাব প্রযুক্তির সহায়তা নেয়। মোবাইল ট্রাকিং করে দেখা যায় তারা ধানমন্ডির এই ভবনের আশপাশেই রয়েছেন। পরে র্যাব সদস্যরা ভবনের ছাদের চিলে কোটায় যায়। সেখানে একটি টেবিলের নিচে দুই বোন (শারমিন ও তানিয়া) শুয়ে আছেন। এরপরই তাদেরকে আটক করে র্যাবের গাড়িতে তোলা হয়।
র্যাব জানায়, পিপলস্ লিজিং এন্ড ফাইন্যান্স কোম্পানির পরিচালক খবির উদ্দিন পিকে হালদারের অন্যতম সহযোগী। তিনি প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কর্মরত থাকাকালে নিজে প্রায় ২০০ কোটি টাকা পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের নামে ও বেনামে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেন। ২০১০ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হলে এই পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তিনি বর্তমানে জামিনে রয়েছেন। চলতি বছরের ৭ মার্চ প্রতিষ্ঠানটির ঋণ খেলাপিদের আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশনা প্রদান করেন হাইকোর্ট। কিন্তু হাজির না হওয়ায় গত ১৯ এপ্রিল তাদের গ্রেপ্তার করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেন আদালত।
বুধবার দুপুরে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে বাহিনীটির মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘র্যাব জানতে পারে প্রতিষ্ঠানের দুজন ঋণ খেলাপি বর্তমানে দেশে অবস্থান করছেন। র্যাব এ ঋণ খেলাপিদের গ্রেপ্তার করতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার ভোরে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। মঈন জানান, গ্রেপ্তার দুজন তাদের বাবা খবির উদ্দিনের মাধ্যমে ঋণ নেন। শারমিন ৩১ কোটি ও তানিয়া ৩৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। তারা গত ২৮ জুলাই কানাডা থেকে বাংলাদেশে আসেন এবং আজ গোপনে কানাডার উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা করছিলেন।
১৯৯৭ সালের ২৪ নভেম্বর আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পিপলস্ লিজিং এন্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিকে অনুমোদন দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পরবর্তীতে নানা অনিয়ম ও আর্থিক দুর্নীতির কারণে ২০১৯ সালে পিপলস্ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানির সার্বিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসময় আদালত পিকে হালদারসহ প্রতিষ্ঠানটির বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরওয়ানা জারি করেন।
প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় ছয় হাজার ব্যক্তি আমানতকারী রয়েছেন এবং বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীর প্রায় এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা আটকা পড়েছে। এই টাকার পুরোটাই পিপলস্ ঋণ হিসেবে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনা রয়েছে। এই অর্থের একটি বড় অংশ প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকরা বিভিন্ন নামে-বেনামে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন।