পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ে চাষার ছেলে অক্সফোর্ডে
লন্ডন থেকে সাইফুল ইসলাম : পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ে চাষার ছেলের কপাল খুলে এখন অক্সফোর্ডে। পেয়েছেন ব্রিটেনের রাজ পরিবারের স্বীকৃতি। এরই অংশ হিসেবে মিলেছে ৫০ হাজার পাউন্ড সমমূল্যের প্রধানমন্ত্রী ফেলোশিপ। যা নিয়ে চাষার ছেলে মিজান এখন পড়ছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। অথচ তাদের একসময় নুন আনতে পান্তা ফুরাতো। নদী ভাঙনে নিঃস্ব কৃষক পরিবারে জন্ম নিয়েও, কেবল মেধা আর পরিশ্রম দিয়ে, জীবন বদলে দেয়ার অনন্য এক রেকর্ড তৈরি করেছেন বাংলাদেশি তরুণ মিজানুর রহমান খান। পড়াশোনার খরচ যোগাতে যাকে একদিন এই মিজান ফুটপাতে খাবার বিক্রি করেছেন।
মিজান অনন্য জীবন সংগ্রামের জন্য পেয়েছেন ব্রিটেনের রাজ পরিবারের স্বীকৃতি।বাঘেরহাটের মোড়লগঞ্জের শ্রেণীখালী গ্রামের প্রান্তিক চাষি সিদ্দীকুর রহমানের পরিবার নিঃস্ব হয়েছেন পানগুছি নদী ভাঙনে।চার সন্তানের মধ্যে বড়ো ছেলে মিজানুর রহমান খান কর্নিয়া টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ঠিক মতো পড়াশোনায়ও মনোযোগী হতে পারেননি। দরিদ্র এই পিতা স্বপ্নেও ভাবেননি তার ছেলেকে তিনি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলবেন। কিন্তু মিজানের গল্প যেন রূপকথাকেও হার মানান!
বাবা-মায়ের কষ্ট দূর করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার বীজ বুনতে শুরু করেন মিজান। আমবাড়ীয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই জরাজীর্ণ শ্রেণী কক্ষেই হাতেখড়ি তার। গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় এসে ভর্তি হন ঢাকা কলেজে, তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে পাশ করে বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছেন প্রভাষক হিসেবে। অর্থকষ্টের কারণে কলেজ জীবনে সহপাঠীদের দেওয়া চিড়া মুড়ি খেয়েও কাটিয়েছেন নির্ঘুম রাত।
‘হে দারিদ্র তুমি মোরে করেছো মহান’ -নজরুলের কবিতার মতই যেন মিজানের গল্প- ৫০ হাজার পাউন্ড সমমূল্যের প্রধানমন্ত্রী ফেলোশিপ নিয়ে পড়তে এসেছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে।সমাজ সেবা ও শিক্ষামূলক কাজে অংশগ্রহণ ও দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে নিজেকে বদলে দেওয়ার স্বীকৃতি হিসেবে ডিউক অব এডিনবরা ইন্টান্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড প্রোগ্রামের অধীনে পেয়েছেন ব্রিটেনের রাজ পরিবারের সম্মাননা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব ইউকের পরিচালনা পরিষদের সদস্য বিধান গোস্বামী মনে করেন মিজানের এই অর্জন বাংলাদেশের প্রান্তিক মানুষের জন্য হতে পারে অনুপ্রেরণা।মাস্টার্স অব সায়েন্স ইন এপ্লাইড লিঙ্গুয়িসটিক্স এন্ড সেকেন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ একুইজিশনের ওপর উচ্চতর ডিগ্রী শেষ করে মিজান ফিরছেন বাংলাদেশে, তাই আজ সবচেয়ে বেশি খুশি মিজানের গর্বিত পিতা-মাতা।