ডিজিটাল পাপে বোল্ড এমপি পঙ্কজ নাথ!
বিশেষ প্রতিনিধি : তাহলে কি ডিজিটাল পাপের খেসারত দিলেন এমপি পঙ্কজ নাথ! আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই পরিস্কার বোল্ড হয়ে দলীয় সকল পদ থেকে অব্যাহতি পেলেন তিনি! এমপি পঙ্কজ নাথের এই অব্যাহতি স্থায়ী অব্যাহতি হয় কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়! কারণ, মেহেন্দীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেয়র কামাল খানকে ‘কুপিয়ে জখম’ করতে দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগটা (যে অডিও ইতিমধ্যে নেট দুনিয়ায়) ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে দলীয় ফোরামের তদন্তে এটি প্রমাণিত হয়েছে বলে এমপি পঙ্কজ নাথ কে দলীয় সকল পদ থেকে অব্যাহতি পেতে হয়েছে।এখন আদেশ হবে চূড়ান্ত! যেটি ডিজিটাল পাপের খেসরাত দিতেই হতে পারে এমপিকে। এমনটিই বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল জেলা শাখা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দলটির পদ থেকে পঙ্কজ নাথকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। গতকাল রোববার আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত অব্যাহতিপত্রে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদ সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী অর্পিত ক্ষমতাবলে প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে আপনাকে আওয়ামী লীগ বরিশাল জেলা শাখার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য পদসহ দলীয় অন্যান্য সব পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। উক্ত বিষয়ে আপনার লিখিত জবাব আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় দপ্তর বিভাগে জমা প্রদান করার জন্য সাংগঠনিক নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথের বিরুদ্ধে মেহেন্দীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেয়র কামাল খানকে ‘কুপিয়ে জখম’করতে দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ উঠে গত জুলাই মাসে। থানার পুলিশ পরিদর্শকের (তদন্ত) মোবাইল নম্বরে কল করে এই নির্দেশনা দেন ওই সংসদ সদস্য। ইতোমধ্যে ১ মিনিট ৯ সেকেন্ডের ওই কথোপকথনের একটি অডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এ নিয়ে খোদ জেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মাঝে ক্ষোভ ও উত্তেজনা তৈরি হয়।
উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, গত ৪ জুলাই পংকজ নাথের অনুসারীরা পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক রাতুল চৌধুরীকে কুপিয়ে দুই হাতের রগ কেটে দেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে কর্মসূচি পালনের জন্য রাতুলের অনুসারীরা ৫ জুলাই পৌর ভবনের সামনে জড়ো হন। খবর পেয়ে সেখানে ফোর্সসহ উপস্থিত হন মেহেন্দীগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) তৌহিদুজ্জামান। তখন পরিদর্শককে এমন নির্দেশনা দেন সংসদ সদস্য। সংসদ সদস্য ও পুলিশ পরিদর্শক তৌহিদুজ্জামানের ১ মিনিট ৯ সেকেন্ডের ওই কথোপকথনে সংসদ সদস্য পংকজ নাথকে বলতে শোনা যায় :
পংকজ নাথ : তুমি কোথায় এখন?
পরিদর্শক (তদন্ত) : স্যার, আদাব স্যার।
পংকজ : আদাব, ভালো আছেন? হ্যাঁ।
পরিদর্শক : জি স্যার। স্যার।
পংকজ : আপনি কোথায় এখন? থানায় না, বাইরে?
পরিদর্শক : স্যার, আমি পৌরসভার সামনে আছি স্যার।
পংকজ : যা হইছে হইছে। ওই শালায় তো খারাপ। ওরা মারামারি করলে আমাগো লোকজনরে কইয়া দিছি রামদা লইয়া ওপেন মিছিল করতে। কামাল খানরে শুইদ্ধা কোপাইবে…ফাইজলামি করলে কিন্তু কামাল খান (পৌর মেয়র) কোপ খাইবে। আমি কইয়া দিছি…কেমন?
পরিদর্শক : আচ্ছা স্যার, দেখি।
পংকজ : সিদ্ধান্ত হইছে মেয়র সামনে পড়লে মেয়ররে কোপাইব। যে সামনে পড়বে, তারেই কোপাইব। কেমন?
পরিদর্শক : আচ্ছা স্যার, দেখি স্যার। আমরা আছি স্যার, বাইরে আছি।
পংকজ : ওসি কই? ওসি কই?
পরিদর্শক : ওসি স্যার বরিশাল আছে, স্যার।
পংকজ : যে কোপ খাইছে (পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক রাতুল চৌধুরী) ওইডা খারাপ। নেশাখোর, অ্যাডিক্টেড…তাই না? এ নিয়া যেন মাতবরি না করে, বাড়াবাড়ি না করে…আমি পোলাপানরে রেডি হইতে কইছি। তোরা রেডি হ…যা আছে কপালে…যুদ্ধ হইয়া যাইব একটা।(ভাষারীতি ও বিধির কারণে কিছু শব্দের বানান সংশোধন করা হয়েছে)
এ বিষয়ে মেহেন্দীগঞ্জ পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামাল খান বলেন, বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে জানতে পেরে আমি ডিআইজি, পুলিশ সুপার এবং থানার ওসির সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছে, এমপি তো, আমরা একটু খোঁজ নিয়ে দেখি। এটা আমার প্রতি তার (এমপি) একটা ক্ষোভ। আমি আওয়ামী লীগ সংগঠনকে ধরে রেখেছি তো, এটা তার সহ্য হয় না।
বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, অডিও ক্লিপের কণ্ঠস্বর এমপি পংকজের। সংসদ সদস্যের এমন নির্দেশনায় দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। দলের কর্মী নয় শুধু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ যাদের কোপানোর নির্দেশনা তিনি (এমপি পংকজ নাথ) দিয়েছেন, এটি আমাদের জন্য দুঃখজনক। এতে প্রমাণিত হয়েছে, দলের প্রতি তার কোনো দরদ নেই।
এ বিষয়ে সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথ জানান, আমি রাজনীতি করি। কখন কাকে কী বলি তা ঠিক নেই। এ জন্য বলতে পারব না কল রেকর্ডিংটা আমার কি না! তবে যে অফিসটার বিষয়ে বলেছি, সেটি হয়ে গেছে অপরাধীদের আখড়া। ওখানে নেশাখোর অ্যাডিক্টেট দখলে নিয়েছে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে সাহস করে কাউকে না কাউকে তো কথা বলতেই হবে।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে বিগত এক দশকে কমপক্ষে ৯ জন নেতা খুনের ঘটনা ঘটেছে মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলায়। আর শারীরিকভাবে পঙ্গু হয়েছেন শতাধিক নেতা-কর্মী।