পল্লী বিদ্যুত ডিজিএমের ঘুষ নিয়ে তুলকালাম
পাবনা প্রতিনিধি : পল্লী বিদ্যুত ডিজিএমের ঘুষ নিয়ে তুলকালাম অবস্থা চলছে পাবনার দাশুরিয়ায়। জানা গেছে, পাবনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর দাশুড়িয়া জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) সাজ্জাদুর রহমানের ‘ঘুষ’ নেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে জেলাব্যাপী চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। বিষয়টি নিয়ে পাবনা জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায়ও আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
এদিকে পাবনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর দাশুড়িয়া জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) সাজ্জাদুর রহমানের ‘ঘুষ’ নেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি।রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে পাবনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ১-এর মহাব্যবস্থাপক আকমল হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।এ বিষয়ে তিনি বলেন, সমিতির প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে ডিজিএম সাজ্জাদুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করে দাশুড়িয়া কার্যালয় থেকে ময়মনসিংহ তত্ত্বাবধায়কের কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।
ঘটনা তদন্তে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে উল্লেখ করে আকমল হোসেন বলেন, সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে কমিটি কাজ শুরু করবে। তদন্ত শেষে কমিটি প্রতিবেদন দিলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে কমিটিতে কারা আছেন, তা নিশ্চিত করেননি তিনি।
ওদিকে ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে দেখা যায়, এক ব্যক্তির কাছ থেকে টাকার একটি বান্ডিল হাতে নিয়েছেন ডিজিএম সাজ্জাদুর রহমান। এ সময় সামনে বসা ব্যক্তি সেটা ভিডিও করে টাকার বিষয়ে গ্রাহককে জিজ্ঞাসা করেন। এ সময় গ্রাহককে বলতে শোনা যাচ্ছে- ‘স্যারের কাছে একটি নতুন সংযোগ নিচ্ছি তো এ জন্য স্যার মিষ্টি খাওয়ার টাকা চেয়েছেন।’ এ সময় সঙ্গে সঙ্গে সেই টাকা ডিজিএম সাজ্জাদুর রহমান ওই গ্রাহকের দিকে ছুড়ে মারেন। ওই গ্রাহকের নাম আমিনুল ইসলাম রানা। তিনি দাশুড়িয়া পুরাতন ট্রাফিক মোড় এলাকার আনিছুর রহমানের ছেলে।
আমিনুল ইসলাম রানা বলেন, পাবনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর অন্তর্ভুক্ত দাশুড়িয়া জোনাল অফিসের আওতায় একটি বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য আমি বেশ কিছুদিন আগে আবেদন করি। সরকার নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে বিদ্যুৎ সরঞ্জাম সংযোজনের পরও নানা অজুহাতে সংযোগ দিচ্ছিল না কর্তৃপক্ষ। ডিজিএম সাজ্জাদুর রহমানকে ‘মিষ্টি খাওয়ার জন্য’ এক লাখ টাকা ঘুষ দিলে সংযোগ দেওয়া হবে বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। পরে ৫০ হাজার টাকা জোগাড় করে গত ১৪ সেপ্টেম্বর ডিজিএম সাহেবকে দিতে যাই। তিনি টাকা নিয়ে ড্রয়ারে রাখার সময় সেখানে উপস্থিত এক ব্যক্তি টাকা দেওয়ার দৃশ্য ভিডিও করে ফেললে হাতে নেওয়া টাকা ছুড়ে ফেলে দেন ডিজিএম সাজ্জাদুর রহমান। ভিডিও ধারণকারী ব্যক্তিকে আমি চিনি না।
তবে ঘটনাটি সাজানো দাবি করে পাবনার ঈশ্বরদী থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন ডিজিএম সাজ্জাদুর রহমান। তিনি অভিযোগ করেছেন, আমিনুল ইসলাম রানা নামে এক খেলাপি গ্রাহক বিদ্যুৎ সংযোগের বকেয়া ৫০ হাজার টাকা প্রদানের বিষয়টিকে ‘ঘুষ’ হিসেবে সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করছে। গত বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টার দিকে আমিনুল ইসলাম রানা ৩/৪ জন সহযোগী নিয়ে অফিসে আসেন। সেখানে ৫০ হাজার টাকার একটি বান্ডিল নিয়ে তাকে উৎকোচ প্রদানের অভিনয় করে ভিডিও করার চেষ্টা করেন। ঘটনা বুঝতে পেরে আমিনুল ইসলামকে ধরার চেষ্টা করলে আমিনুল ইসলাম ও তার সহযোগীরা দ্রুত পালিয়ে যান।
পাবনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর দাশুড়িয়া জোনাল অফিসের ডিজিএম সাজ্জাদুর রহমান বলেন, আমিনুল ইসলাম রানার বাবার নামে ৯ লাখ ৩ হাজার ৯৪৮ টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকার কারণে আদালতে মামলা রয়েছে। ফলে তার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। আমিনুল ইসলাম আদালতে রিট করলে আদালত তাকে ছয় মাসের মধ্যে বিল পরিশোধ করার নির্দেশনা দেন। আমরা ছয় মাসের মাসিক কিস্তিতে বিল পরিশোধ করার ব্যবস্থা করে দেই। কিন্তু তিনি বিল পরিশোধ না করে উল্টো আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি ধামকি দেন। পরে নতুন সংযোগ নিতে আসলে আমরা তাকে বলি আগের বিল বকেয়া পরিশোধ করতে হবে। তখন তিনি টাকা বের করে আমাকে দেন। আমি টাকা নিয়ে তাকে বলি টাকাটা ক্যাশ কাউন্টারে জমা দেন। এ সময় তাদের কয়েকজন মোবাইলে ভিডিও করে সেটিকে ঘুষ হিসেবে প্রচার করার চেষ্টা করেন। পরে ওইদিনই থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়।তবে ডিজিএম সাজ্জাদুর রহমানের এই দাবিকে মিথ্যা বলে দাবি করেন আমিনুল ইসলাম রানা। তিনি বলেন, ‘ডিজিএম সাজ্জাদুর রহমান এখন নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন। ঘুষ নেওয়ার ভিডিওর জন্য সমালোচনার মুখে পড়ে ডিজিএম আবোল-তাবোল বকছেন। এ সম্পর্কে ঈশ্বরদী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অরবিন্দ সরকার বলেন, এ বিষয়ে পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম সাজ্জাদুর রহমান বাদী হয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সেটা তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।