সয়াবিন কারসাজিতে জেল হয়েছে হাজার কোটি লুটেরা শিল্পপতি জহির আহম্মদের
শফিক রহমান : সয়াবিনে কারসাজি করায় এক মামলায় জেল হয়েছে হাজার কোটি লুটেরা নূরজাহান
গ্রুপের চেয়ারম্যান জহির আহম্মদের। বিএসটিআই’র মামলায় নূরজাহান গ্রুপের চেয়ারম্যান জহির আহম্মদকে এক বছর কারাদণ্ড ও আড়াই লাখ টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম কাজী শরিফুল ইসলামের আদালত এ রায় দেন। দণ্ডিত আসামি পলাতক থাকায় ওয়ারেন্ট জারি করেছে আদালত। ওদিকে একই গ্রুপ খেলাপি ঋণ পরিশোধ না করায় নূরজাহান সুপার অয়েলের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিনসহ ছয় পরিচালকের পাসপোর্ট জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এই লুটেরারা এক হাজার ৯৫ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় সাউথইস্ট ব্যাংক জুবিলী রোড শাখার পক্ষে এক আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে এরা যাতে বিদেশে পালাতে না পারে সেজন্য আদালত নির্দেশনা দিয়েছে।
বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আশরাফ উদ্দিন খন্দকার রনি দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে জানান, জাসমির ব্যান্ডের সয়াবিন তেলে কারসাজি করে বিক্রয়, সংরক্ষণ, সরবরাহ ও বাজারজাত করে বিএসটিআই আইনে অপরাধ করায় আসামি জহির আহম্মদকে সাজা দিয়েছেন আদালত। বিএসটিআইয়ের সার্ভিল্যান্স অভিযান মানসম্মত সয়াবিন তেলে ন্যূনতম যেসব উপাদান থাকার কথা নূরজাহান গ্রুপের মালিকানাধীন জাসমির ব্যান্ডের তেলে তার কিছুই পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় চট্টগ্রাম পিউর ফুড কোর্টে মামলা করে বিএসটিআই।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, বাজারজাত করা জাসমির ব্র্যান্ডের সয়াবিনে ভিটামিন ‘এ’ এর স্ট্যান্ডার্ড মান নির্ধারণ করা আছে ১৫ মিলিগ্রাম থেকে ৩০ মিলিগ্রাম। কিন্তু বিএসটিআইয়ের পরীক্ষায় জাসমির ব্যান্ডের সয়াবিনে ভিটামিন ‘এ’র উপাদান পাওয়া গিয়েছে মাত্র ৪ দশমিক ২৭ মিলিগ্রাম। ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর বিএসটিআই পরীক্ষা করে প্রতিবেদন তৈরি করে। ২০ অক্টোবর আদালত মামলাটি দায়ের করা হয়। ‘জাসমির’ ব্রান্ড সয়াবিন তেলের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান জাসমির সুপার অয়েল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির আহম্মদ। তিনি নুরজাহান গ্রুপের চেয়ারম্যান।
ওদিকে খেলাপি ঋণ পরিশোধ না করায় চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্প গ্রুপ নূরজাহান সুপার অয়েলের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিনসহ ছয় পরিচালকের পাসপোর্ট জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। চট্টগ্রাম অর্থ ঋণ আদালতের বিচারক যুগ্ম জেলা জজ মুজাহিদুর রহমান গত বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।
এক হাজার ৯৫ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় সাউথইস্ট ব্যাংক জুবিলী রোড শাখার পক্ষে এক আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত এ আদেশ দেন। জসিম উদ্দিন ছাড়াও মামলার অন্য বিবাদীরা হলেন- জাসমির সুপার অয়েল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির আহম্মেদ রতন, তার স্ত্রী ও কোম্পানির পরিচালক তাসনিম মনোয়ার, চেয়ারম্যান টিপু সুলতান, জাসমির সুপার অয়েলের পরিচালক ইফতেখার আল জাবের ও মো. ফরহাদ মনোয়ার।
চট্টগ্রাম অর্থ ঋণ আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বিবাদীদের বিরুদ্ধে এ মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি এবং দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন আদালত। তারপরও তারা পলাতক হওয়ায় তাদের বিদেশ গমন প্রতিরোধে পাসপোর্ট জব্দের আবেদন করে মামলার বাদী সাউথইস্ট ব্যাংক। বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে আদালত আবেদন মঞ্জুর করে বিবাদীদের পাসপোর্ট জব্দের নির্দেশ দেন।
আদালতে বিবাদীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির বিষয়টি ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে জানানো এবং তাদের বিদেশ গমন ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়ার আবেদনও করে সাউথইস্ট ব্যাংক। আদালত সাউথইস্ট ব্যাংকের করা আবেদন মঞ্জুর করে বিবাদীরা যেন দেশত্যাগ করতে না পারেন সেজন্য ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ বরাবর আদেশের কপি পাঠানোর নির্দেশ দেন।
গত ৮ সেপ্টেম্বর পাঁচ মাসের দেওয়ানি আটকাদেশসহ বিবাদীদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। পরের দিন সাউথইস্ট ব্যাংকের আরেক মামলায় জহির আহম্মেদ রতনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে একই আদালত। ১৩ সেপ্টেম্বর আরও একটি মামলায় জহির আহম্মেদ ও টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে দেওয়ানি আটকাদেশসহ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।