মুনিয়া হত্যা মামলা ষড়যন্ত্রমূলক বসুন্ধরা এমডিকে অব্যাহতি-
কোর্ট রিপোর্টার : অবশেষে মুনিয়া হত্যা মামলা ষড়যন্ত্রমূলক বলেছে পিবিআই। একই সঙ্গে বসুন্ধরা এমডিকে অব্যাহতি-দিয়েছে সংস্থাটি। মোসারাত জাহান মুনিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় বোন নুসরাত জাহানের করা দ্বিতীয় মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। বুধবার (১৯ অক্টোবর) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে এই প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে মামলা থেকে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরসহ অন্যদের অব্যাহতি চাওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগ এনে নালিশি মামলা করেন নুসরাত জাহান। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন। পিবিআই দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় ধরে মামলার তদন্ত করেছে। তদন্তে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডির বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। এর আগে গত বছর নুসরাতের করা প্রথম মামলাটিও পুলিশি তদন্তে মিথ্যা প্রমাণ হয়। পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে আত্মহত্যা প্ররোচনার সেই মামলা থেকে সায়েম সোবহান আনভীরকে অব্যাহতি দিয়েছিলেন আদালত।
পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, মুনিয়াকে হত্যার অভিযোগে করা নালিশি মামলার সব আসামির অব্যাহতি চেয়ে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে পিবিআই। পিবিআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মোসারাতকে হত্যার অভিযোগের সত্যতা মেলেনি। তিনি আত্মহত্যা করেছেন। এজন্য আসামীদেরকে মামলা থেকে অব্যাহতি জানানোর সুপারিশ করা হয়েছে।জানা গেছে, বুধবার আদালতে প্রতিবেদনটি জমা দেয়া হলেও পিবিআই চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাঠিয়েছে গত ২৬ সেপ্টেম্বর।
পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সরোয়ার জাহান বলেন, এই মামলায় যাদেরকে আসামী করা হয়েছিল, সবার অব্যাহতি চাওয়া হয়েছে। কেননা, এখানে হত্যার অভিযোগের কোন সত্যতা প্রমাণিত হয়নি। মুনিয়া আত্মহত্যা করেছেন। এমনকি এখানে প্ররোচনার ঘটনাও প্রমাণ হয়নি। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, যেহেতু মামলার তদন্তে তারা ধর্ষণ বা হত্যার আলামত পাননি, এসব কারণে অন্য যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন দেখেননি।
গত বছরের ২৬ এপ্রিল রাজধানীর গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে মুনিয়ার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই রাতে তড়িগড়ি করে নুসরাত জাহান বাদী হয়ে গুলশান থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে মামলা করেন। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে দায়ের করা এ মামলার দীর্ঘ তদন্ত শেষে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওই বছরের ১৯ জুলাই ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন (ফাইনাল রিপোর্ট) দাখিল করেন।
পরে গত বছরের ১৭ আগস্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার ওসি আবুল হোসেনের দাখিল করা প্রতিবেদনের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি শেষে যৌক্তিক কারণ না থাকায় পরদিনই ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের হাকিম রাজেশ চৌধুরী সায়েম সোবহান আনভীরকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেন। একইসঙ্গে পুলিশের প্রতিবেদনের ওপর নুসরাতের নারাজি আবেদনটিও যৌক্তিক না হওয়ায় খারিজ করে দেন আদালত।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আত্মহত্যায় প্ররোচনার প্রথম মামলা খারিজ হয়ে গেলে বসুন্ধরা এমডিকে ফাঁসাতে নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করেন নুসরাত। গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর আনভীরসহ আটজনের বিরুদ্ধে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮-এ নালিশি মামলা করেন তিনি; যেখানে তিনি মুনিয়াকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগ আনা হয়। এরপর মামলাটি গুলশান থানাকে এজাহার হিসেবে রেকর্ড করার আদেশ দেন আদালত।
একই সঙ্গে মামলাটি পিবিআইকে তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়।জানা গেছে, এ মামলায় বসুন্ধরা গ্রপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরসহ বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমদ আকবর সোবহান, তাঁর স্ত্রী আফরোজা সোবহান এবং সায়েমের স্ত্রী সাবরিনাকে আসামি করা হয়। অন্য আসামিরা হলেন- সাইফা রহমান, ফারিয়া মাহবুব, শারমিন ও ইব্রাহিম আহমেদ। পরে এই মামলায় সাইফা ও ফারিয়াকে গ্রেপ্তার দেখায় পিবিআই।
বিবাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তুহিন হাওলাদার বলেন, সায়েম সোবহান আনভীর দেশের একজন স্বনামধন্য ব্যবসায়ী এবং শীর্ষস্থানীয় ব্যাবসায়িক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। দেশে-বিদেশে তাঁর ব্যাপক সুনাম ও সুখ্যাতি রয়েছে। তাঁর সুনাম ক্ষুণ্ন করা এবং বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যাবসায়িক ক্ষতিসাধনের হীন উদ্দেশ্যে সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্র এবং চক্রান্তমূলকভাবে প্রথমে একটি মামলায় ফাঁসানোর অপচেষ্টা হয়েছে। পুলিশ দীর্ঘ তিন মাসের তদন্তে আসামি সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে অভিযোগের সপক্ষে গ্রহণযোগ্য কোনো প্রমাণ পায়নি। পুলিশ প্রতিবেদন গ্রহণ ও আদালতের আদেশে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ষড়যন্ত্রকারীরা দ্বিতীয় আরেকটি মামলায় ফাঁসায়। সেটিও মিথ্যা প্রমাণিত হলো।
তিনি আরো বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের বিরুদ্ধে এই চক্রান্তে বাদী নুসরাত জাহান তানিয়ার সঙ্গে যোগ দিয়েছিল সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী দেশি-বিদেশি শক্তিশালী চক্র। যারা দেশের গণতন্ত্র চায় না, উন্নয়ন চায় না, তারা এসব চক্রান্তে শামিল হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যমে তারা নানাবিধ কুৎসা ও অপপ্রচার ছড়াতে থাকে। বাদী নুসরাতও সরাসরি এসব টক শো ও অনলাইন সভায় যোগ দিয়ে নানা অপপ্রচার করেন। পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন, আদালতের অব্যাহতির আদেশ ও পিবিআিইয়ের চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদনে অনুযায়ী এসব চক্রান্ত মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ার মাধ্যমে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
সূত্র জানায়, এসব মামলার মধ্য দিয়ে মূলত ভিন্ন উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিলেন নুসরাত জানান। বিশেষ করে মুনিয়ার মরদেহ উদ্ধারের পর রাতে একটি বিলাসবহুল পাজেরো জিপে করে কয়েকজন আইনজীবী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ গুলশান থানায় হাজির হয়েছিলেন নুসরাত জাহান। তারা পুলিশের ওপর নানামুখী চাপ তৈরি করে এবং প্রাথমিক তদন্ত না করেই তড়িঘড়ি করে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ এনে মামলাটি করেছিলেন।
এমনটি দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠীর কর্ণধার হওয়ায় মিডিয়া ট্রায়ালেরও শিকার হন সায়েম সোবহান আনভীর। কোনো রকমের তদন্ত ও প্রমাণ ছাড়াই তার বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেন নুসরাত এবং তার সহযোগীরা। কিন্তু পুলিশের পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তে নুসরাতের অভিযোগ মিথ্যা বলেই প্রমাণ হয়। দীর্ঘ দেড় বছর পর পিবিআইয়ের তদন্তেও বসুন্ধরার এমডির বিরুদ্ধে অসত্য ও ষড়যন্ত্রমূলক অভিযোগের সত্যতা মেলেনি।