বিশেষ প্রতিনিধি : এবার এইচএসসি পরীক্ষার ‘সৃজনশীল’ প্রশ্নে সাম্প্রদায়িক অনুচ্ছেদ নিয়ে তুলকালাম চলছে। বলা হচ্ছে সরকারিভাবে প্রশ্নপত্রে সাম্প্রদায়িক অনুচ্ছেদ উল্লেখ করায় তোলপাড় চলছে বিভিন্ন মহলে। অথচ বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা কখনো ঘটেনি। তাহলে সরকারিভাবে পরীক্ষার সৃজনশীল প্রশ্নে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়ানো-কার ইঙ্গিতে-সেটাই প্রশ্ন দেশ-জাতি ও বিজ্ঞ মহলের।
যদিও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, শ্রেণিকক্ষে ও পাঠ্যবইয়ে সব সময় সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক বিষয়কে নিরুৎসাহিত করা হয়। এ বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তাৎক্ষণিকভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়নকারী কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, দোষীদের শনাক্তে তদন্ত করা হচ্ছে।
সৃজনশীল প্রশ্নপত্রে বলা হয়েছে-‘নেপাল ও গোপাল দুই ভাই। জমি নিয়ে বিরোধ তাদের দীর্ঘদিন। শেষমেষ ভাইকে শাস্তি দিতে আবদুল নামের এক মুসলমানের কাছে তার ভাগের জমি বেঁচে দেয় নেপাল। আবদুল সেখানে বাড়ি বানিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। ঈদুল আজহার সময় সে নেপালের বাড়ির সামনে গরু কুরবানি দেয়। এই ঘটনায় নেপালের মন ভেঙে যায়। কিছুদিন পর কাউকে কিছু না বলে সপরিবারে ভারতে চলে যায় সে’।
অথচ-বাস্তবে এটা বাংলাদেশের কোনো সত্য ঘটনা নয়। অথচ গত রোববার (৬ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি পরীক্ষার বাংলা প্রথম পত্রের প্রশ্নপত্রে থাকা একটি অনুচ্ছেদ (সৃজনশীল প্রশ্নের একটি অংশ)। রোববার রাতে এটি জানাজানির পর সামাজিক মাধ্যমসহ অন্যান্য স্তরে এটি ব্যাপক সমালোচনার ঝড় তুলেছে। ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে প্রশ্নপত্রের এই অংশটি।
অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী ও সাধারণ মানুষ এনিয়ে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং দোষী ব্যক্তিদের অবিলম্বে শাস্তিদানের দাবি তুলেছেন। দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদেরাও এটিকে ‘সাম্প্রদায়িক’ এবং বাংলাদেশের মতো শান্তিপূর্ণ দেশে অপ্রত্যাশিত বলে উল্লেখ করেছেন। আশরাফুল আলম চিশতী শাহিন তার ফেসবুকে লিখেছেন, একদল মানুষ আমাদের সন্তানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে চায়। এটি অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, দেশে সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দেবে এই অনুচ্ছেদ। কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িকতাই দেশের জন্য কল্যাণকর নয়। যারা একাজ করেছে সরকারকে তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির লক্ষ্যে কিছু মানুষ প্রশ্নপত্রের একটি অংশকে এমন করেছে। এদেশে আজো এমন মানুষ বসবাস করে, যা সত্যিই দুর্ভাগ্যের’।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, শ্রেণিকক্ষে ও পাঠ্যবইয়ে সব সময় সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক বিষয়কে নিরুৎসাহিত করা হয়। এ বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তাৎক্ষণিকভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও পরিশোধনকারী কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।এটি একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। আমরা দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করব এবং তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। খুব শিগগিরই তা করা হবে…।
ঘটনার এখানেই শেষ নয়-প্রথমদিনে আরও বিপর্যয়ের ঘটনা-রোববার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথম দিনে পরীক্ষার্থীদের ভুল প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়। পরে বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা স্থগিত করে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। তবে প্রায় ১ লাখ ২২ হাজার পরীক্ষার্থীর শিক্ষা জীবনকে সমস্যার মধ্যে ফেলা এই অবহেলার জন্য কে বা কারা দায়ী- তা সুনির্দিষ্টভাবে জানানো হয়নি বোর্ডের পক্ষ থেকে।
শিক্ষার্থীদের ভুল প্রশ্নপত্র দেওয়ার ঘটনা এবারই প্রথম নয়, এর আগেই একারণে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। তবে এসব ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার রেকর্ড নেই শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষের। এবার প্রায় ১৪ পরীক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। মোট ২ হাজার ৬৪৯টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় ৯ হাজার ১৮১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেবে।