অতি চালাকির বলি হচ্ছে জিএম কাদের!
বিশেষ প্রতিনিধি /কোর্ট রিপোর্টার : তাহলে কি অতি চালাকির বলি হচ্ছে জিএম কাদের! মামলার অবস্থাদৃষ্টে তো তাই মনে হচ্ছে বলে প্রতিয়মান করছেন আইনজীবীরা। বলা হচ্ছে জিএম কাদের যে প্রক্রিযায় চেয়ারম্যান পদ বাগিয়েছেন সেটা বিধিসম্মত হয়নি! ফলে সব দিক থেকে ঝামেলা হচ্ছে কাদেরের! দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের ওপর দেওয়া অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আবেদন খারিজ করেছেন আদালত। ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ মাসুদুল হক আজ বুধবার এ আদেশ দেন।
ফলে জি এম কাদের জাপার সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে যুক্ত থাকতে পারছেন না। এ আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবেন তাঁর আইনজীবী। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারী হারুন সরদার। এর আগে গত বৃহস্পতিবার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয় শুনানি শেষ হয়। আজ বুধবার আদেশের জন্য দিন ঠিক করেছিলেন আদালত।
জি এম কাদেরের আইনজীবী আবদুর রশিদ বলেন, জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রত্যাহার বিষয় শুনানি শেষ হয়েছে। বাদী ও বিবাদী—উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আবেদন খারিজ করেছেন। অর্থাৎ দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে জি এম কাদেরের ওপর দেওয়া অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা বহাল রয়েছে। এ আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন করা হবে।
জাতীয় পার্টি থেকে সম্প্রতি অব্যাহতি পাওয়া জিয়াউল হকের করা মামলার শুনানি নিয়ে গত ৩০ অক্টোবর জি এম কাদেরের দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। ওই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার চেয়ে ৮ নভেম্বর আদালতে আবেদন করেন জি এম কাদের।জি এম কাদেরের পক্ষে আদালতে লিখিতভাবে বলা হয়েছে, মামলার বিবাদী জি এম কাদের জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। হয়রানি ও সম্মানহানির উদ্দেশ্যে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে।
জিয়াউল হক ৪ অক্টোবর জি এম কাদেরকে জাপার চেয়ারম্যান হিসেবে অবৈধ ঘোষণার ডিক্রি চেয়ে প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা করেন। মামলায় দল থেকে জিয়াউল হকের বহিষ্কারাদেশকে বেআইনি ঘোষণা এবং দলীয় গঠনতন্ত্রের ২০-এর উপধারা ১(১) অবৈধ ঘোষণার আবেদন জানানো হয়। মামলায় জি এম কাদের ছাড়াও নির্বাচন কমিশনের সচিব, জাপার মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুগ্ম দপ্তর সম্পাদককে বিবাদী করা হয়। জিয়াউল হক জাপার সাবেক সংসদ সদস্য এবং দলের চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন। ১৭ সেপ্টেম্বর তাঁকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। জি এম কাদেরের পক্ষে আদালতে বলা হয়েছে, জিয়াউল হককে আইন মেনে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ সব পদপদবি থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর অব্যাহতি পাওয়া মসিউর রহমান ২৩ অক্টোবর একটি মামলা করেন। ওই মামলার শুনানি নিয়ে আদালত কেন দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে জি এম কাদেরের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে না, সে বিষয়ে তাঁকে কারণ দর্শাতে বলেছেন। ১৫ দিনের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এই মামলায়ও আপত্তি দাখিল করার জন্য সময় চেয়ে আবেদন করেছেন জি এম কাদের। আগামী ২ জানুয়ারি এ মামলার পরবর্তী শুনানির দিন রাখা হয়েছে।
মামলায় জিয়াউল হক ও মসিউর রহমান দুজনই দাবি করেন, জাপার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর ছয় মাস আগে তাঁর ছোট ভাই জি এম কাদের ভুল বুঝিয়ে ‘জাতীয় পার্টির জন্য ভবিষ্যৎ নির্দেশনা’ শিরোনামে একটি চিঠিতে স্বাক্ষর করান। এরপর জি এম কাদের প্রথমে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, পরে চেয়ারম্যান হন, যা ছিল গঠনতন্ত্রের পরিপন্থী। এ নিয়ে দলের ভেতরে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে এরশাদ ২০১৯ সালের ২২ মার্চ জি এম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি দেন।
পরে ৪ মে পুনরায় জি এম কাদেরকে জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয়। তখন এরশাদ গুরুতর অসুস্থ থাকায় তিনি স্বাভাবিক বিবেচনা প্রয়োগে সক্ষম ছিলেন না বলে মামলায় দাবি করা হয়েছে। এরশাদের মৃত্যুর পর ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা দেন জি এম কাদের। দলের গঠনতন্ত্রে এভাবে চেয়ারম্যান ঘোষণার কোনো বিধান নেই।
মামলায় মসিউর রহমান দাবি করেন, জি এম কাদের নিজেকে জাপার চেয়ারম্যান দাবি করে ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে সম্মেলন ডাকেন। এর আগে এ সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে ১৯ ডিসেম্বর হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন হয়। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে জি এম কাদেরকে চেয়ারম্যান ঘোষণা কেন বেআইনি হবে না, মর্মে রুল দেন হাইকোর্ট। এটি বিচারাধীন অবস্থায় দলের কাউন্সিল করেন জি এম কাদের। সম্মেলনে দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ উপস্থিত ছিলেন না।