কোর্ট রিপোর্টার/চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : আদালতে জালিয়াতি করে ইতিপূর্বে পার পেয়ে যাওয়া দেশের কুখ্যাত গোল্ড স্মাগলার আবু এবার ওয়ান্টেড। তাকে হন্য হয়ে খুঁজছে পুলিশ ও গোয়েন্দারা। উচ্চ আদালত আবুকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছে। সে যাতে বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য সব :রনের পদক্ষেপও নিতে বলেছে আদালত। ২০২০ সালের ১৮ মার্চ আবু আহম্মদসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে সিআইডি।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নেন তিনি। উচ্চ আদালতের নির্দেশ মতো ২২ ফেব্রুয়ারি বিচারিক আদালতে করেন জামিন আবেদন। এরপর ৯ মাস নানা কৌশলে সময়ক্ষেপণ করেন। পরে জারি হয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। সেই তথ্য গোপন করে হাইকোর্টে আবার আগাম জামিনের জন্য আসেন তিনি। একটি সূত্র দারি করেছে ঢাকাতেই আছে আবু। পরিস্থিতি অবলোকন করছে গোল্ড স্মাগলাররা। সময় সুযোগ মত নাম পাল্টিয়ে বিদেশ পালানোরও ধান্ধা করছে সে। গোল্ড স্মাগলিং, হুন্ডি ব্যবসাসহ নানা ধরনের অবৈধ কারবারি করে সে কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক।
এরমধ্যে দুই শ কোটিরও বেশি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে মামলায় আগাম জামিন পেয়ে বিচারিক আদালতে চালাকি করতে গিয়ে ফেঁসে গেছেন চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ী।বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করলেও ৯ মাস ধরে নানা অজুহাতে সময়ক্ষেপণের কারণে তার বিরুদ্ধে জারি করা হয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। সেই তথ্য গোপন করে ফের উচ্চ আদালতে এসে আগাম জামিনের আবেদন করলে তাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয় হাইকোর্টও।
সেই সঙ্গে তিনি যেন দেশ ছাড়তে না পারেন, সে জন্য ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে ইমিগ্রেশনকে। মঙ্গলবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।সেই ব্যবসায়ীর নাম আবু আহাম্মদ। তিনি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির বাসিন্দা। ২০ জনের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ১৮ মার্চ কোতোয়ালি থানায় মামলা করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত সংস্থা সিআইডি।
মামলায় বলা হয়, আসামিরা একে অপরের সহায়তায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কয়েকটি ব্যাংক হিসাব নম্বরে ১২ বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে স্বর্ণ চোরাচালান, চোরাই এবং অন্যান্য দ্রব্যের অবৈধ ব্যবসা ও হুন্ডির মাধ্যমে ২০৪ কোটি টাকার পাচারের অর্থ দিয়ে গাড়ি, বাড়ি, মার্কেটসহ বিভিন্ন সম্পত্তি অর্জন করেছেন।বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউ থেকে পাওয়া হিসাব বিবরণী, কাগজপত্র পর্যালোচনা, লেনদেনের ধরন এবং আসামির স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ পর্যালোচনায় এই সিদ্ধান্তে পৌঁছে সিআইডি।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে হাজির হয়ে আগাম জামিন চান আবু আহাম্মদ। তার আবেদন গ্রহণ করে তিন সপ্তাহের মধ্যে চট্টগ্রামের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয় উচ্চ আদালত।এরপর শুরু হয় আবু আহাম্মদের চালাকি।
তিনি ২২ ফেব্রুয়ারি আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন ঠিকই। কিন্তু বারবার শুনানি পেছানোর কৌশল নিতে থাকেন। তার জামিন আবেদন পেয়ে চট্টগ্রামের সিনিয়র স্পেশাল জজ ইসমাইল হোসেন নথি তলব করে ৫ মে শুনানির জন্য দিন ঠিক রাখেন। কিন্তু চট্টগ্রামের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে নথি না আসায় জামিন শুনানি হয়নি।
১৩ জুলাই আবার শুনানির দিন ঠিক হলেও নথি না আসায় সেদিনও শুনানি হয়নি। সেদিন আদালত ৩১ আগস্টের মধ্যে নথি জমা দিয়ে ৫ সেপ্টেম্বর শুনানির দিন ঠিক করে। কিন্তু এভাবে আরও কয়েকবার শুনানির জন্য সময় প্রার্থনা করেন আসামি। এসব আবেদন গ্রহণও করে আদালত।তবে গত ১৩ নভেম্বর আসামির সময় আবেদন নাচক করে তার বিরুদ্ধে জারি হয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। সেই তথ্য লুকিয়ে ফের হাইকোর্টে আবেদন করা হলে হাইকোর্ট সেটা ধরে ফেলে।আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন। দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান।