রিহ্যাব আবাসন মেলা শুরু-ড্যাপ সমস্যা সমাধানের আশ্বাস স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর
বিশেষ প্রতিনিধি : রাজধানীতে রিয়েল এস্টেট এ্যান্ড হাউজিং এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) পাঁচ দিনব্যাপী আবাসন মেলা শুরু হয়েছে। এবারের মেলায় ১৮০টি স্টল রয়েছে। এছাড়া ৭টি ব্যাংক ও ৬টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানও অংশগ্রহন করছে মেলায়। আজ ২১ ডিসেম্বর থেকে মেলা চলবে ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। বুধবার (২১ ডিসেম্বর) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধান অতিথি হিসেবে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম এবারের মেলার উদ্বোধন করেন। রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট আলমগীর শামসুল আলামিন (কাজল)-এর সভাপতিত্বে মেলায় আরো বক্তব্য রাখেন রিহ্যাবের ভাইস চেয়ারম্যান কামাল মাহমুদ এবং সিনিয়র সহ সভাপতি ইন্তেখাবুল হামিদ।
প্রধান অতিথি বক্তব্যে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সচিবসহ রাষ্ট্রের কোনো স্তরের মানুষই ত্রুটিমুক্ত নন। তবে দেশের উন্নয়নে সবাইকে লোভ–লালসা সীমার মধ্যে থেকে নিয়ম মেনে কাজ করা উচিত। আজ বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত আবাসন মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
‘ঢাকাকে সুন্দরভাবে বসবাসযোগ্য করার জন্য ইতোমধ্যে ড্যাপ এর প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। ড্যাপ এ ফার হ্রাস এর বিষয়ে অনেকের মধ্য থেকে উদ্বেগ প্রত্যক্ষ করেছি। সবার যৌক্তিক দাবি বিবেচনা করবো। পরিকল্পিত ঢাকা গড়তে সবাইকে এগিয়ে আসার কথা বলেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) সভাপতি হিসেবে কোনো পার্শয়ালিটি করিনি। আমি কারো পক্ষ-বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছি না। দেশের কল্যাণে কোথাও কোন কিছু করা হলে আমি সেটা অবশ্যই করবো। ৫০ বছর পর ঢাকার জনসংখ্যা হিসাব করেই আমরা সেটা করবো। ঢাকাসহ সারা দেশের নাগকিরদের আবাসনের স্বপ্ন পূরণে রিহ্যাবের অবদান অনেক বড় বলেও অভিমত দেন এলজিআরডি মন্ত্রী।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীন যুদ্ধের পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৯০ ডলার মাথাপিছু আয় নিয়ে দেশ গঠনের কাজ শুরু করেছিলেন। ১৯৭৫ সালে যখন তাকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয় তখন আমাদের মাথা পিছু আয় ছিলো ২৭৭ ডলারের ওপরে। এরপর ২১ বছর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিলো না। তারপর থেকে ১৯৯৫ সালে আমাদের মাথা পিছু আয় ২১ বছরে বেড়েছে মাত্র ৫২ ডলার। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বে বর্তমান সরকার ২০০৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১৪ বছরে আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়ে ২৮২৪ ডলার উন্নতি হয়েছে। এখন মানুষের আয় বেড়েছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ দলটির নেতাদের সমালোচনা করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, ‘ফখরুলদের পদ্মাসেতু ভালো লাগে না। তারা আবার বাংলাদেশকে ৫২ ডলারের মাথাপিছু আয়ের দেশ বানাতে চায়।
রিহ্যাব প্রেসিডেন্ট আলমগীর শামসুল আলামিন (কাজল) করোনা মহামারী যুদ্ধ, দ্রব্যমূলের দাসের সঙ্গে ড্যাপ বাস্তবায়নে আমরা যুদ্ধ করে যাচ্ছি। তবে প্রধানমন্ত্রী এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এ সেক্টরের জন্য খুবই যুগান্তকারী। বৈশ্বিক এই মন্দা পরিস্থিতিতে এ খাতের উন্নয়নে আমরা কোনো ইনসেনটিভ চাই না, আমাদের প্রয়োজন সরকার নীতি সহযোগিতা।
আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, আমাদের বিশ্বাস এই খাতের সমস্যাগুলো আপনারা সমাধান করবেন। সরকারের রাজস্ব আয়, কর্মসংস্থান, রড, সিমেন্ট, টাইলসসহ ২৭০ এর অধিক লিংকেজ শিল্প প্রসারের মাধ্যমে সমগ্র নির্মাণ খাত জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সমগ্র নির্মাণ খাতের অবদান প্রায় ১৫শতাংশ। বাংলাদেশের আবাসন শিল্প শুধু আবাসনই সরবরাহ করছে না, একই সাথে ৪০ লাখ শ্রমিকের উপর নির্ভরশীল ২ কোটি লোকের অন্নের যোগান দিয়েছে। আমাদের আবাসন সেক্টর থেকে আয়কৃত অর্থ পুনরায় বিনিয়োগ হয়েছে অন্য উৎপাদনশীল সেক্টরে। দেশের বেশ কয়েকটি বড় শিল্প গ্রুপের যাত্রা শুরু হয়েছে আবাসন শিল্প দিয়ে। ফলে আবাসন খাত অনেক নতুন নতুন উদ্যোক্তাদের সৃষ্টি করছে। যা প্রকারান্তরে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছে।
রিহ্যাবের ভাইস চেয়ারম্যান কামাল মাহমুদ বলেন, আমরা সাম্প্রতিক সময়ে ড্যাপ নিয়ে একটু সমস্যায় আছি। এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা আপা জানেন। এজন্য তিনি আমাদের প্রধান অতিথি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম সাহেবকে দায়িত্ব দিয়েছেন। তাজুল সাহেব প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত কাছের মানুষ। তাই মন্ত্রী মহোদয় আমাদের এ বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, রিহ্যাব এর পাশে তিনি আছেন এবং থাকবেন।
প্রসঙ্গত, ২০০১ সাল থেকে ঢাকায় আবাসন মেলা শুরু হয়েছে। এছাড়া ২০০৪ সাল থেকে বিদেশেও মেলার আয়োজন করে আসছে রিহ্যাব। আয়োজকরা জানিয়েছেন, এবারের মেলায় ১৮০টি স্টল রয়েছে। এরমধ্যে ৩টি ডায়মন্ড প্যাভিলিয়ন, ৭টি গোল্ড স্পন্সর, ২২টি কো-স্পন্সর, ১৬টি বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস ও ১৩টি অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানের স্টল। এ বছর মেলায় ডায়মন্ড স্পন্সর হিসেবে রয়েছে রূপায়ন হাউজিং এস্টেট লিমিটেড, রূপায়ন রিয়েল এস্টেট লিমিটেড এবং আরএকে সিরামিকস (বাংলাদেশ) লিমিটেড।
গোল্ড স্পন্সর হিসেবে রয়েছে কনকর্ড রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডিং প্রডাক্ট লিমিটেড, ক্রিডেন্স হাউজিং লিমিটেড, ডোম-ইনো বিল্ডার্স লিমিটেড, ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট (প্রাইভেট) লিমিটেড, নাভানা রিয়েল এস্টেট লিমিটেড, র্যাংকস্ প্রপার্টিজ লিমিটেড, শেলটেক প্রাইভেট লিমিটেড। এছাড়া কো-স্পন্সর হিসেবে অংশ নিচ্ছে মোট ২২টি প্রতিষ্ঠান।