পয়ঃবর্জ শোধন করে ঢাকার ফুসফুস ক্লিন করল ওয়াসা এমডি
শফিক রহমান : ঢাকা ঘিরে চারপাশের নদী দূষণের অন্যতম কারণ ছিল পয়ঃবর্জ্য। এই পয়ঃবর্জ শোধন করে ঢাকার ফুসফুস ক্লিন করল ওয়াসা এমডি তাকসিম এ খান। এ এক বিশাল কর্মযজ্ঞ সাধিত হয়েছে নীরবে নিভৃতে। এতে ওয়াসা এমডির আন্তরিকতা কর্মদক্ষতা দেশপ্রেম কাজ করেছে।
একই সঙ্গে ঢাকার ফুসফুস ক্লিন করার এক দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছিল তাঁর। সে চেষ্ঠা থেকে পয়ঃবর্জ শোধন করে ঢাকার ফুসফুস ক্লিন করলেন ওয়াসা এমডি। শুধু ফুসফুস ক্লিন করেই তিনি ক্ষান্ত হননি। প্রতি মাসে ৪২ লাখ ৬৪৩ টাকা বিদ্যুত বিলও তিনি সাশ্রয় করে দিয়েছেন।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিগগির এটির ফলক উম্মোচন করবেন। কিন্তু তার আগেই পয়ঃবর্জ শোধন করে ঢাকার ফুসফুস ক্লিন করে চলেছে দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার।
কিভাবে এ কর্মযজ্ঞ সাধন করলেন এ সম্পর্কে ওয়াসা এমডি দৈনিক সত্যকথা প্রতিদিন কে জানালেন, সায়েদাবাদ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের আগে পানি প্রি-ট্রিটমেন্ট করতে হতো। তাতে প্রতিদিন প্রায় ৪৫২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হতো। এখন আর সেই প্রি-ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টটি চালু করতে হচ্ছে না। এর ফলে সরকারের কোটি কোটি বিদ্যুত বিল সাশ্রয় হচ্ছে। এছাড়াও পয়ঃবর্জ শোধনের ফলে উৎপন্ন হচ্ছে সিমেন্ট তৈরী কাঁচামাল ফ্লাইএ্যাশ। যা বিক্রি করে আসছে লাখ লাখ টাকা।
তিনি বললেন, ঢাকার চারপাশের নদী দূষণের অন্যতম কারণ ছিল পয়ঃবর্জ্য। ঢাকার ফুসফুস খ্যাত হাতিরঝিলকে রক্ষা করতে সরকার দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। একসময় ঢাকা শহরের পয়ঃবর্জ সরাসরি হাতিরঝিলসহ বিভিন্ন খালে বা ঝিলে পড়ত। ঢাকার চারপাশের নদী দূষণের অন্যতম কারণ ছিল পয়ঃবর্জ্য। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হাতিরঝিলের দক্ষিণ পাশে নির্মিত ৬টি এবং উত্তর পাশের ৫টি স্পেশাল স্যুয়ারেজ ডাইভারশন স্ট্রাকচার (এসএসডিএস) দিয়ে নির্গত বর্জ্য শোধন করে পানি বালু নদীতে ফেলা হচ্ছে।
জানা গেছে, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়াধীন ঢাকা ওয়াসার এই প্রকল্পের নাম দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্প। উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুযায়ী ২০১৫ সালের জুলাই মাসে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। তবে দুই দফা সংশোধনীতে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কাজ শেষ হয়ে যাওয়ায় ৩ হাজার ৪৮২ কোটি ৪২ লাখ টাকার এই প্রকল্পটি এখন নিয়মিত বর্জ্য শোধন করছে। তবে এখনো প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়নি। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সময় চেয়েছে ঢাকা ওয়াসা।
প্রকল্প এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায় হাতিরঝিলের পানি শোধন করে পাশের বালু নদীতে ফেলা হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় রমনা থানার অন্তর্র্গত এলাকা, মগবাজার ওয়্যারলেস রোড, ইস্কাটন, নয়াটোলা, মৌচাক, আউটার সার্কুলার রোড, নয়াটোলা মহানগর হাউজিং এলাকা, উলন ও তৎসংলগ্ন এলাকা, কলাবাগান ও ধানমন্ডি (পূর্বাংশ)।
এ ছাড়া তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, তেজগাঁও এলাকা, নাখালপাড়া, নিকেতন, বাড্ডা, বনানী ও গুলশান (আংশিক) এলাকার পয়ঃবর্জ ও কিচেন ওয়াটার ওয়াসার পাইপলাইনের মাধ্যমে হাতিরঝিল রামপুরার পাশে ওয়াসার স্যুয়ারেজ লিফটিং স্টেশনে পড়ছে। সেখানে পলিথিনসহ বড় বড় বর্জ্য শোধন করে পাইপলাইনের মাধ্যমে দাশেরকান্দি শোধনাগারে পাঠানো হয়। সেখানে কয়েক দফা ট্রিটমেন্ট করে স্বচ্ছ পানি বালু নদীতে ফেলা হচ্ছে। ফলে বালু নদীর দূষণ কমানো সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
প্রকল্পের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) একেএম শহীদউদ্দিন বলেন, দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার চালু করার কারণে বালু নদীর দূষণ অনেকাংশ কমে গেছে। তিনি বলেন, ‘দাশেরকান্দির এই প্রকল্পের কারণে আমাদের সায়েদাবাদ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হচ্ছে। আমরা বালু নদীর পাশ থেকে যে পানি নিয়ে শোধন করতাম সেই পানি এতটাই দূষিত ছিল যে সায়েদাবাদ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের আগে প্রি-ট্রিটমেন্ট করতে হতো। তাতে প্রতিদিন প্রায় ৪৫২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হতো। এখন আর সেই প্রি-ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টটি চালু করতে হচ্ছে না।
প্রকল্প পরিচালক মো. মোহসেন আলী মিয়া বলেন, দাশেরকান্দি পয়ঃবর্জ্য শোধনাগার প্রকল্পে প্রতিদিন ৫০ কোটি লিটার পানি শোধন করে ৪৮ কোটি লিটার স্বচ্ছ পানি বালু নদীতে ফেলা হচ্ছে। আর সেখান থেকে যে শুষ্ক বর্জ্য তৈরি হচ্ছে সেই বর্জ্য সিমেন্ট কারখানা তাদের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করছে। প্রতিদিন সেখান থেকে কয়েক টন বর্জ্য সিমেন্ট কারখানায় নিয়ে যাচ্ছে। এতে আমাদের দেশের অর্থনীতি যেমন সমৃদ্ধ হচ্ছে তেমনি ঢাকার ফুসফুস ক্লিন হচ্ছে।