স্মরণশক্তি নির্ভরতা নয় উদ্ভাবনী নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থায় সম্পৃক্ত হতে হবে:নওফেল
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : স্মরণশক্তি নির্ভর সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে উদ্ভাবনী নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থায় সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমে অভ্যস্ত হতে উন্নয়ন কর্মসূচির বই পড়তে হবে। চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস সম্মেলন কক্ষে শনিবার সকাল ১১টায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন সেকেন্ডারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের
(এসইডিপি) অন্তর্ভুক্ত স্ট্রেংদেনিং রিডিং হ্যাবিট অ্যান্ড রিডিং স্কিলস অ্যামাং সেকেন্ডারি স্টুডেন্টস স্কিমের আওতায় ‘পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি’র চট্টগ্রাম বিভাগের ওরিয়েন্টেশন কর্মশালা তিনি এ আহ্বান জানান। এই কর্মশালায় চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলার জেলা শিক্ষা অফিসার, কর্মসূচিভুক্ত ৬৪টি উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারগণ অংশগ্রহণ করেন। মাঠ পর্যায়ে পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি সুষ্ঠু ও সফলভাবে পরিচালনার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তাই দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরে স্কিমভুক্ত উপজেলাসমূহের উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারগণকে পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচির বিষয়ে বিস্তারিত ধারণা প্রদান এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া অবহিত করার জন্যই এই ওরিয়েন্টেশন কর্মশালা আয়োজন করা হয়। কর্মশালায় চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় অতিরিক্ত কমিশনার ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রধান বক্তা ছিলেন স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির সাবেক উপাচার্য ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি অধ্যাপক মুহাম্মাদ আলী নকী।
বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র শিক্ষা উপদেষ্টা ড. মোঃ মাহামুদ-উল-হক। স্কিম প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্ট্রেংদেনিং রিডিং হ্যাবিট অ্যান্ড রিডিং স্কিলস অ্যামাং সেকেন্ডারি স্টুডেন্টস স্কিমের উপ-পরিচালক ড. আছিছুল আহছান কবীর।শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, সরকার নতুন যে শিক্ষাক্রম চালু করেছে তাতে অভ্যস্ত হতে হলে পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত বইগুলো পড়তে হবে। অধ্যাপক মুহাম্মাদ আলী নকী বলেন, বই শুধু পাঠ করলে হবে না পাঠ দক্ষতাও বাড়াতে হবে।
তিনি কর্মশালায় উপস্থিত শিক্ষা উপমন্ত্রীকে পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচির গুরুত্ব অনুধাবন করে কর্মসূচির মেয়াদ বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করেন।বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচির সঙ্গে শুধু শিক্ষার্থী নয় শিক্ষক এবং অভিভাবকদেরও সম্পৃক্ত করতে হবে।উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন তাঁরা যেন এই বিষয়টি নিশ্চিত করেন যে সপ্তাহের ১ দিন ১ ঘণ্টা শিক্ষকরা লাইব্রেরির কাজ করেন।
বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র শিক্ষা উপদেষ্টা ড. মোঃ মাহামুদ-উল-হক বলেন, সেকায়েপ প্রকল্পের অধীনে পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি এতোটাই সফল হয়েছিল যে এটি বিশ্বে একটি মডেলে পরিণত হয়েছে। সেকায়েপ প্রকল্পের সাফল্য এসইডিপিতেও বজায় থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্কিম উপপরিচালক ড. আছিছুল আহছান কবীর বলেন, ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী অতিথি এবং অংশগ্রহণকারীদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, একজন শিক্ষার্থীর সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনী শক্তি বই পড়ার দক্ষতার মাধ্যমে তৈরি হয়। পড়ার দক্ষতা তৈরিতে পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি উপস্থিত উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারগণকে কর্মসূচির জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করা এবং মাঠ পর্যায়ে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সকল কর্মীকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার নির্দেশ দেন।স্বাগত বক্তব্য দেন পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচির কো-টিম লিডার শামীম আল মামুন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচির ডেপুটি টিম লিডার (প্রোগ্রাম) মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ।
এই কর্মশালার মাধ্যমে চট্টগ্রাম বিভাগের ৬৪টি উপজেলার দুই হাজার তিনশত তেত্রিশটি (২৩৩৩) মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচির বইপড়া কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। এর ফলে আনুমানিক তিন লক্ষ ছিয়ানব্বই হাজার ছয়শত দশ (৩৯৬,৬১০) জন ছাত্রছাত্রী স্কিমের তালিকাভুক্ত বইগুলো পড়ে নিজেদের সমৃদ্ধ, মানবিক ও মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারবে।
পাঠাভ্যাস উন্নয়ন কর্মসূচি দেশের ৬৪ জেলার ৩০০ উপজেলায় ১৫ হাজার মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাস্তবায়িত হচ্ছে। কর্মসূচির আওতায় প্রতিবছর প্রায় ২৫ লাখ ছাত্রছাত্রী বই পড়ার সুবিধা পাবে। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র উক্ত কর্মসূচি মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করছে। ইতোমধ্যে ৪টি বিভাগে (ঢাকা, রাজশাহী, বরিশাল ও খুলনা) কর্মশালা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।