৮ বিভাগের খবরঅপরাধ

১০ লাখ ঘুষখেকো কর কর্মকর্তার শিনাজুরি-

দুদকের ঘুষফাঁদে পাকরাও-

 

রাজশাহী প্রতিনিধি : দুদকের ঘুষফাঁদে পাকরাও হয়েও ১০ লাখ টাকা ঘুষখেকো কর কর্মকর্তা শিনাজুরি করায় তোলপাড় চলছে। জানা গেছে, রাজশাহীতে ‘ঘুষের’ ১০ লাখ টাকাসহ একজন উপ–কর কমিশনারকে গ্রেপ্তার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ মঙ্গলবার দুপুরে এই অভিযান চালানোর সময় কর কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা দরজা ভেঙে ওই কর্মকর্তার কার্যালয়ে ঢুকে দুদক কর্মকর্তাদের ওপর হামলা চালিয়েছেন।

এ সময় দুদকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁদের ধস্তাধস্তি হয়। উপ–কর কমিশনার মহিবুল ইসলাম ভূঁইয়া সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, গ্রেপ্তারের আগে তাঁকে মারধর করা হয়েছে। তিনি আহত হয়েছেন। দুদকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ধস্তাধস্তির সময় তাদের চার-পাঁচজন কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। তাঁরা কাউকে মারধর করেননি। উপ–কর কমিশনার ধস্তাধস্তিতেই আহত হয়েছেন।

গ্রেপ্তার মহিবুল ইসলাম ভূঁইয়া রাজশাহী কর অঞ্চলের সার্কেল-১৩–এর উপকমিশনার। বেলা সোয়া দুইটার দিকে ‘ঘুষের’ ১০ লাখ টাকাসহ গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের উদ্দেশে মহিবুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, তাঁকে দুদক কর্মকর্তারা মারধর করেছেন। তাঁর ঘাড়ে একটি আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। তিনি আরও বলেন, নগরের মাদারল্যান্ড ইনফার্টিলিটি সেন্টার ও হাসপাতালের মালিক ফাতেমা সিদ্দিকার ব্যাংক বিবরণীতে ২৬ কোটি টাকার লেনদেনের একটি তথ্য পাওয়া গেছে।

যেটি ফাতেমা তাঁর কর নথিতে উল্লেখ করেননি। এ বিষয় নিয়ে তিনি কাজ করছিলেন। ফাতেমা সিদ্দিকা আজ মঙ্গলবার তাঁর টেবিলের ওপরে টাকা এনে রেখেছিলেন। এই টাকা তিনি ছুঁয়েও দেখেননি। কিন্তু ঘুষের টাকা ড্রয়ারে ঢুকলো কি করে সেকথা কর কর্মকতা বলেনি। তিনি দাবি করেন ফাতেমা বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুদক অভিযান চালিয়ে ড্রয়ারের টাকাসহ তাকে পাকরাও করে।

অভিযানের পরে দুদকের সমন্বিত রাজশাহী জেলা কার্যালয়ের সামনে উপপরিচালক মনিরুজ্জামান সাংবাদিকদের কাছে দাবি করে বলেন, মাদারল্যান্ড ইনফার্টিলিটি সেন্টার ও হাসপাতালের মালিক ফাতেমা সিদ্দিকার পাঁচ বছরের ব্যাংকে লেনদেনের বিষয়ে কর কর্মকর্তা আপত্তি তোলেন। বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে গেলে ওই কর্মকর্তা তাঁর কাছে ৬০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। পরে তা ৫০ লাখ টাকায় দফা হয়। বিষয়টি জানিয়ে ফাতেমা সিদ্দিকা গত ২৯ মার্চ দুদকের প্রধান কার্যালয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এই অভিযোগ নিয়ে দুদকের রাজশাহী জেলা ও বিভাগীয় কার্যালয়ে যৌথভাবে কাজ করছিল।

মনিরুজ্জামান বলেন, ফাতেমা সিদ্দিকা তাঁর ৫০ লাখ টাকা চুক্তির অংশ হিসেবে প্রথম কিস্তির ১০ লাখ টাকা দিতে গিয়েছিলেন। এ সময় দুদকের পক্ষ থেকে ওই কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়। দুদকের ওই কর্মকর্তা দাবি করেন, মহিবুল ইসলাম ভূঁইয়া ওই ১০ লাখ টাকা তাঁর নিজের টেবিলের ড্রয়ারের তুলে রেখেছিলেন। তারপরেই তাঁরা অভিযান চালান। তাঁরা ড্রয়ার থেকে ওই টাকা উদ্ধার করেন। তিনি বলেন, অভিযান চালানোর সময় তাঁরা সাদাপোশাকে ছিলেন।

সঙ্গে পুলিশও ছিল না। তাঁদের নয়জন কর্মকর্তা অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন। অভিযান চালানোর সময় মহিবুল ইসলাম ভূঁইয়া চিৎকার করে লোক জড়ো করার চেষ্টা করলে তাঁরা দরজা লাগিয়ে দেন। তখন কর ভবনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে তাঁদের ওপরে হামলা চালান। এ সময় দুদকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁদের ধস্তাধস্তি হয়। পরে তারা বাধ্য হয়ে পুলিশ ডাকেন। খবর পেয়ে নগরের রাজপাড়া থানার পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।

রাজশাহীর মাদারল্যান্ড ইনফার্টিলিটি সেন্টার ও হাসপাতালের মালিক চিকিৎসক ফাতেমা সিদ্দিকা বেলা সোয়া দুইটার দিকে দুদক কর্মকর্তাদের সঙ্গে ওই কার্যালয় থেকে বের হন। তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি। উপকমিশনারকে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে জানতে চাইলে রাজশাহী কর অঞ্চলের কমিশনার মো. শাহ্ আলী সাংবাদিকদের বলেন, দুদক একটি স্বাধীন কমিশন। তারা তাদের কাজ করেছে।

দরজা ভেঙে হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ভেতরে চিৎকার শুনে তাঁর কার্যালয়ের লোকজন ভেতরে ঢুকেছিল। তারপর কী হয়েছে তিনি জানেন না। ফাতেমা সিদ্দিকার আয়কর ফাইল নিয়ে কাজ শুরু করার আগে উপকমিশনার মহিবুল ইসলাম ভূঁইয়া তাঁর অনুমতি নিয়েছিলেন কি না, জানতে চাইলে কমিশনার মো. শাহ আলী বলেন, এ ব্যাপারে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। তবে বিষয়টি তিনি অবগত ছিলেন। তাঁর ব্যাপারে বিভাগীয় কোনো ব্যবস্থা নেবেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, সম্ভবত মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়ার পরে সেটা করতে হয়। সেই পর্যায়ে গেলে তখন করবেন।

 

 

সংশ্লিষ্ট খবর

Back to top button