সংলাপ তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে নিশ্চুপ ইইউ-আ’লীগ জাপা বিএনপি বৈঠকে
বিশেষ প্রতিনিধি : ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা) ও রাজপথের বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ঢাকা সফররত প্রতিনিধি দল।এ বৈঠকের বিষয়ে ইইউর প্রাক নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলটি সাংবাদিকদের কিছু না জানালেও রাজনৈতিক দল তিনটির পক্ষ থেকে তুলে ধরা হয়েছে আলোচনার বিষয়বস্তু।
বৈঠকের পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইইউ প্রতিনিধি দলটি সংলাপ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে কোনো কথা বলেনি। বাংলাদেশের সংবিধানের ওপর ভিত্তি করে নির্বাচন চায় ইইউ প্রতিনিধি দল।
বিএনপি বলছে, এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না বলে বৈঠকে ইইউ প্রতিনিধি দলকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, সংলাপ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ নেই।অপরদিকে জাতীয় পার্টি জানিয়েছে, নির্বাচনকালীন সরকারে আগ্রহী নয় ইইউ। তবে জাপা সুষ্ঠু নির্বাচন চায় বলে জানানো হয়েছে প্রতিনিধি দলকে।
গত ৮ জুলাই ইইউর ৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসে প্রাক নির্বাচনী সফরে। এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, মানবাধিকার কমিশনের কর্মকর্তা, অ্যাটর্নি জেনারেল ও বাংলাদেশ পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তারা। প্রতিনিধি দলটি বিকালে জামায়াতে ইসলামী ও এবি পার্টির সঙ্গেও বৈঠক করবে বলে জানা গেছে।
সংলাপ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার
নিয়ে কোনো কথা বলেনি-কাদের
শনিবার বনানীর হোটেল শেরাটনে ইইউ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ইইউ প্রতিনিধি দল সংলাপ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কোনো কথা বলেনি। তারা (ইইউ) দেশের আইন ও সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছেন।ওবায়দুল কাদের বলেন, বৈঠকে ইইউ প্রতিনিধি দল সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা চেয়েছে। আমরা তাদের অঙ্গীকার করেছে। তারা বাংলাদেশের সুন্দর নির্বাচন দেখতে চায়। নির্বাচনি ব্যবস্থার বিষয়ে তারা আশ্বস্ত হয়েছেন।
ঢাকা সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রাক-নির্বাচনি পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে বৈঠকে ওবায়দুল কাদেরের নেতত্বে অংশ নেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কনেল ফারুক খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আক্তার, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জামির, কেন্দ্রীয় কার্যর্নিবাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আরাফাত ও তারানা হালিম।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) প্রতিনিধি দলের বৈঠকে তাদের সঙ্গে আমাদের পজিটিভ (ইতিবাচক) কথা হয়েছে। বহু বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন উপলক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কোনো সংলাপ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তারা দেশের আইন ও সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের কথা বলেছেন।এর আগে গত ১০ জুলাই ইইউ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির চার নেতা।
ইইউ বলেছে নির্বাচন আদৌ
জনগণের ভোটে সম্ভব কি না-বিএনপি
ঢাকার গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে ইইউর ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদলের বৈঠক শুরু হয় শনিবার সকাল ৯টায়। শেষ হয় এক ঘন্টা পর।বৈঠকের পর আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অবস্থান, রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও দাবিসহ সার্বিক বিষয় ইইউ প্রতিনিধিদলের কাছে তুলে ধরা হয়েছে।সংলাপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সংলাপ গণতান্ত্রিক পরিবেশের একটি অংশ। বাংলাদেশে কোনো গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই। সেই পরিবেশ প্রথমে তৈরি করতে হবে। তারপরই সংলাপের প্রশ্ন আসবে।
ইইউ প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ছাড়া দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আন্তর্জাতিক-বিষয়ক কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ ও আসাদুজ্জামান এবং সাবেক সচিব ইসমাইল জবিউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ইইউ জানতে চেয়েছে, বাংলাদেশের নির্বাচন আদৌ জনগণের ভোটের মাধ্যমে সম্ভব হবে কি না। তিনি বলেন, আমরা সব সময় বলে আসছি, এ সরকারের অধীন নির্বাচনে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না, সম্ভব নয়। কারণ অনেক। এ কারণগুলো বলে শেষ করা যাবে না। মূল কারণগুলো হচ্ছে এদের অধীন নির্বাচন হবে না। কারণ নির্বাচনের দিন তো দূরে থাক। ভোট চুরি তো এখনই চলছে।
আমীর খসরু মাহমুদ আরও বলেন, ‘বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিচার করে তাড়াতাড়ি সাজার ব্যবস্থা করছে, তারা যাতে নির্বাচন করতে না পারেন। এসব কাজ তারা প্রতিদিন করছে ভোট চুরির জন্য। কারণ, তারা নির্বাচনকে নিয়ন্ত্রণ করে জোর করে আবার ক্ষমতায় আসতে চায়। স্বাভাবিকভাবে এ কথাগুলো আজকের আলোচনায় এসেছে। শেষ কথা হচ্ছে, এই সরকারের অধীন দেশের মানুষ তাদের ভোট প্রয়োগ করতে পারবে না। জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারবে না। তা ইইউকে বলা হয়েছে।
নির্বাচনকালীন সরকারে
আগ্রহী নয় ইইউ-জাপা
শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ইইউ প্রতিনিধিদলের সদস্যরা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বিশেষ দূত মশরুর মাওলার গুলশানের বাসায় পৌঁছান। পরে সেখানে জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা বৈঠক করেন তারা।বৈঠক শেষে জাপা মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশের মানুষ একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। আমাদের দফা একটি, সুষ্ঠু নির্বাচন। আর এ কথা আমরা ইইউ প্রতিনিধি দলকে জানিয়েছি।বৈঠকে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক ছাড়াও দলটির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জি এম কাদের) ও চেয়ারম্যানের বিশেষ দূত মশরুর মাওলা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে মুজিবুল হক চুন্নু আরও বলেন, উনারা (ইইউ প্রতিনিধিরা) এসেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের আরেকটি টিম (প্রতিনিধিদল) আসবে ২৩ জুলাই। তারা বিভিন্ন দল ও পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করছেন আগামী নির্বাচনটা যাতে সুষ্ঠু হয়, ভালোভাবে হয়, নিরপেক্ষভাবে হয় এ বিষয়ে তারা কথা বলছেন। দুটি টিম তাদের মূল্যায়ন প্রতিবেদন দেওয়ার পর তারা সিদ্ধান্ত নেবেন পর্যবেক্ষক পাঠাবেন কি না।
ইইউ প্রতিনিধি দলটি জাতীয় পার্টির কাছে কী জানতে চেয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে মুজিবুল হক বলেন, ‘আমরা বলেছি, নির্বাচন আমরা চাই, দেশের মানুষ চায় একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন। সে নির্বাচনটা যদি করতে হয়, তাহলে নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের সবচেয়ে বড় ভূমিকা দরকার। এখন যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, এটা আলোচনার মাধ্যমে সম্ভব। আসলে মূল পদক্ষেপটা সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া প্রয়োজন।নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কোনো কথা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে মুজিবুল হক বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কোনো কথা হয়নি। তারা এটা নিয়ে ইন্টারেস্টেড (আগ্রহী) না।