কর্পোরেট ফার্মে ডিম কারসাজি
বিশেষ প্রতিনিধি : ডিমের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের কারসাজি খুঁজতে রাজধানীর কাপ্তানবাজারে অভিযান নামে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এ সময় তিন ব্যবসায়ীকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। শনিবার সরেজমিনে ভোক্তা অধিকারের অভিযানে দেখা যায়, ডিমের উৎপাদক ও বাজারজাতকারী কাজী ফার্মস, নাবিল, ফিনিক্স, রানা, প্যারাগন ও ডায়মন্ডের মতো প্রতিষ্ঠান তাদের তালিকাভুক্ত ডিম বিক্রেতাকে রশিদ দিলেও, তাতে বিক্রয় মূল্য লিখে দিচ্ছে না। ফলে, পাইকারি বিক্রেতাদের নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি করছেনা। আর এ অপরাধে এই বাজারের তিন ব্যবসায়ীকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে উৎপাদক প্রতিষ্ঠানেও অভিযান করা হবে বলে জানিয়েছে ভোক্তা অধিকার।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন বলছে, ডিমের দাম বাড়া-কমা, সবই এখন হয় কর্পোরেট কোম্পানির ইশারায় চলছে। বাজারে বাদামি ডিমের হালি এখন ৬০ টাকা। সাদা ডিম ৫৫ টাকা। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দাম। পাইকারিতেই বাদামি ডিমের শ’ বিক্রি হচ্ছে ১২৭০ টাকা। অর্থাৎ প্রতিটি ডিমের দাম পড়ছে ১২ টাকা ৭০ পয়সা। হালি হিসেবে করলে আসে ৫০ টাকা ৮০ পয়সা।
আড়তে ১০০ সাদা ডিমের ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগেও যে দামটা ছিলো এক হাজার ৮০থেকে ১১শ’ টাকা।বর্ষায় খামারির ক্ষতি হয় বলে প্রতি বছর এই সময় ডিমের দাম কিছুটা বাড়ে। তবে এবার দাম বৃদ্ধি আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ঢাকার বাজারে প্রতিটি ডিমের দাম ১৪ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়। ডজন হিসেবে ডিমের দাম উঠেছে ১৬৫ টাকায়।গত বছরের এই সময়ে প্রতি ডজন ডিমের দাম উঠেছিল ১৫৫ টাকা। তবে বর্ষা শেষে তা আবার কমে গিয়েছিল। গত মাস পর্যন্ত ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় ডিম বিক্রি হয়। এরপরই বাড়তে থাকে।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন বলছে, ডিমের বাজারের মাত্র ২০ শতাংশ কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের দখলে। কিন্তু বাকি ৮০ শতাংশ ডিমের দাম তারাই নিয়ন্ত্রণ করে।বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদার বলেন, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান যদি শুধু বাচ্চা ও ফিড উৎপাদন করে, আর খামারী যদি ডিম আর মাংস উৎপাদন করে তাহলে দীর্ঘ মেয়াদে ভোক্তাদের স্বস্তি মিলবে।
ডিমের দাম অনেক বেড়ে যাওয়ার পেছনে সরবরাহ সংকটের কথা বলছে পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন।
ঘাটতি তৈরির কারণ হিসেবে প্রান্তিক পর্যায়ের অধিকাংশ ছোট ছোট খামার বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা বলেছে সংগঠনটি। গত বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে সংগঠনটি বলেছে, ডিম ও মুরগির দাম বেড়ে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টির অন্যতম কারণ এ খাতে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসায় সরকারি তদারকি না থাকা। পোলট্রি শিল্পে তাদের আধিপত্য বেড়ে যাওয়ায় এর খেসারত দিতে হচ্ছে জনগণকে।
বর্তমানে প্রান্তিক পর্যায়ে একটি ডিমের উৎপাদন খরচ ১০ টাকা ৮৭ পয়সা থেকে ১১ টাকা পর্যন্ত। এক কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা। কিন্তু প্রান্তিক খামারিদের বাধ্য হয়ে ২০ থেকে ২৫ টাকা কমে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় মুরগি বিক্রি করতে হচ্ছে বলে জানানো হয় বিবৃতিতে। কেন উৎপাদক পর্যায়ে অভিযান হচ্ছে না, তার উত্তরে ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তারা বললেন, মহাপরিচালকের নির্দেশনা পেলে সেখানেও অভিযান কবরে তারা।
বাজারে অভিযান প্রসঙ্গে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডল বলেন, আমরা কিছু প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম পেয়েছি, ফলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া ভবিষ্যতে যেন এমন না হয়, সে বিষয়েও সতর্ক করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা আজ বাজার ঘুরে ডিমের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে যেগুলো পেয়েছি, সেগুলো প্রতিবেদন আকারে তৈরি করে ডিজির কাছে জমা দেবো এবং সে অনুযায়ী অধিদপ্তর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।