কঙ্কাল চোরদের রাজত্ব বীরগঞ্জে
দিনাজপুর প্রতিনিধি : ওরা কঙ্কাল চোর। ওরা একটি সংঘবদ্ধ চক্রে জড়িত। নিয়মিত কঙ্কাল চুরি করতে করতে ওদের হাত পেকে গেছে। স্বজনদের কঙ্কাল চুরি ঠেকাতে পাহারা দেয়া শুরু করে এলাকাবাসি। একপর্যায়ে রোববার গভীর রাতে উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের চৌধুরীহাট বালাপুকুর কেন্দ্রীয় কবরস্থানে কঙ্কাল চুরির প্রস্তুতিকালে তাদের আটক করে এলাকাবাসী। পরে তাদের পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।
দিনাজপুরের বীরগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকার কবরস্থান থেকে কঙ্কাল চুরি হচ্ছে নিয়মিত। এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে আটককৃতরা পুলিশকে জানিয়েছেন, তারা একেকটি কঙ্কাল সাড়ে ৬ হাজার থেকে সাড়ে ৭ হাজার টাকায় বিক্রি করে। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) দেবাশীষ চৌধুরী ও দুপুর ২টার দিকে বীরগঞ্জ থানায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বীরগঞ্জ সার্কেল) খোদাদাত হোসেন সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
পুলিশ জানায়, রোববার গভীর রাতে উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের চৌধুরীহাট বালাপুকুর কেন্দ্রীয় কবরস্থানে কঙ্কাল চুরির প্রস্তুতিকালে তাদের আটক করে এলাকাবাসী। পরে তাদের পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।এর আগে এ এলাকার কবরস্থান থেকে একবার এবং পাশ্ববর্তী তুলশীপুর কেন্দ্রীয় কবরস্থান হতে দুইবার কঙ্কাল চুরির ঘটনা ঘটে। তিন দফায় এই তিনটি কবরস্থান থেকে মোট ২৮টি কঙ্কাল চুরি হয় বলে জানান স্থানীয়রা।
প্রথম চুরির ঘটনা ঘটে গত ১০ আগস্ট রাতে। পরে গত ২৪ ও ২৫ তারিখে বীরগঞ্জের আরও দুটি কবরস্থান থেকে কঙ্কাল চুরির ঘটনা ঘটে।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- ময়মনসিংহ জেলার সদর উপজেলার অষ্টধর গ্রামের তাজিম উদ্দিন ওরফে আজিজুল ইসলামের ছেলে ২৫ বছর বয়সী দেলোয়ার হোসেন বাবু, শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার আদর্শগ্রাম টাঙ্গাইলপাড়া গ্রামের প্রয়াত ছাবেদ আলীর ছেলে ২৪ বছর বয়সী শেখ ফরিদ, একই এলাকার প্রয়াত ওসমান গনির ছেলে ২৭ বছর বয়সী সিরাজুল ইসলাম, বাবর হোসেনের ছেলে ২৬ বছর বয়সী আব্দুস সোবহান ওরফে সফু এবং প্রয়াত হাফিজ উদ্দিনের ছেলে ৩০ বছর বয়সী লালচান।
তাদের গ্রেপ্তারের সময় ৩টি মাটিমাখা ট্রাউজার, ৩টি টি-শার্ট, ৩টি নতুন গামছাসহ তাদের ব্যবহৃত ৫টি মোবাইল ও ৭টি বিভিন্ন কোম্পানির সিম উদ্ধার করে পুলিশ।পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কঙ্কাল চুরির সক্রিয় সদস্য বলে স্বীকার করেছেন। তারেই যে বীরগঞ্জ উপজেলার ১০ নম্বর মোহনপুর ইউনিয়নের তুলশীপুর কেন্দ্রীয় কবরস্থান এবং চৌধুরীহাট বালাপুকুর কেন্দ্রীয় কবরস্থানসহ দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন কবরস্থান থেকে কঙ্কাল ও হাড়গোড় চুরি করেছে, সে কথাও স্বীকার করেছেন।
জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান, পুরাতন কবরস্থানগুলো টার্গেট করে তাদের ৬ জন সদস্য ২-৩ জন করে দুই-তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে কঙ্কাল চুরি করে। চুরি করা কঙ্কালগুলো রংপুরসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে নিয়ে গিয়ে প্রতিটি কঙ্কাল সাড়ে ৬ হাজার থেকে সাড়ে ৭ হাজার টাকায় বিক্রি করে থাকেন তারা। এ বিষয়ে বীরগঞ্জ থানায় তাদের বিরুদ্ধে কবরস্থানে অনধিকার প্রবেশ, ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত এবং কঙ্কাল চুরির অপরাধে নিয়মিত মামলা করা হয়েছে। আসামিদের আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হবে বলে জানায় পুলিশ।