বিশেষ প্রতিনিধি : ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভদ্রলোকের যদি এতোই আত্মবিশ্বাস থাকে যে তিনি অপরাধ করেননি, তাহলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিবৃতি ভিক্ষা করে বেড়াতেন না। তিনি বলেন, যারা বিবৃতি দিয়ে তার বিচার স্থগিত করতে বলেছেন তাদের বলছি বিবৃতি না দিয়ে আইনজীবী পাঠাক, এক্সপার্টরা দেখুক অনেক কিছু পাবেন। আমাদের দেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন। সব কিছুই আইন মতো চলে। কেউ যদি ট্যাক্স (কর) না দেয় আর যদি শ্রমিকের অর্থ আত্নসাৎ করে, শ্রমিকদের পক্ষ থেকে যদি মামলা করা হয়। আমাদের কী সেই হাত আছে যে মামলা বন্ধ করে দেবো?
একজন ব্যাংকের এমডি কিভাবে বিদেশে বিলিয়ন বিলয়ন ডলার বিনিয়োগ করে এটা কি তারা খোঁজ নিয়েছেন। এ টাকা কোথা থেকে এসেছে এটা কি তারা খোঁজ নিয়েছেন? সবাই দুর্নীতি খুঁজে বেড়াতে বলছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেন। কিন্তু দুর্নীতিবাজ ধরলে তাদের পছন্দ না হলে তখন চুপ।প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এত লম্বা লম্বা কথা বলে অথচ লেবারের টাকা মেরে খাবে। আবার ঘুষও দিবে। চমৎকার বাংলাদেশ। আর বিদেশিরাও কিছু না বুঝে বিবৃতি দেয়। অথচ শ্রমিক অধিকার নিশ্চিতে আইএলওর শর্ত নিয়েও আমাদের চাপ দেয়।দক্ষিণ আফ্রিকা সফর সম্পর্কে অবহিত করতে মঙ্গলবার ২৯ আগস্ট বিকেলে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এবারই ব্রিকসের সদস্যপদ পেতে হবে এমন কোনো চেষ্টা বাংলাদেশের ছিল না এবং বাংলাদেশ কাউকে সেটা বলেওনি।চাইলে পাব না সেই অবস্থাটা আর নাই। কিন্তু প্রত্যেক কাজটারই একটা নিয়ম থাকে, আমরা সেই নিয়ম মেনেই চলি, বলেছেন তিনি।দক্ষিণ আফ্রিকায় পঞ্চদশ ব্রিকস সম্মেলনে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা জানাতে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে আসেন সরকারপ্রধান। সেখানেই ব্রিকস নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দেন।
বিশ্ব অর্থনীতির এক-চতুর্থাংশের নিয়ন্ত্রণকারী পাঁচ দেশের জোট ব্রিকসের সম্মেলনে যোগ দিতে এবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করেন শেখ হাসিনা।এবারের সম্মেলনের আগেই বাংলাদেশের সদস্য হওয়ার আবেদনের বিষয়টি আলোচনায় ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এর আগে এ বিষয়ে আগ্রহের কথা বলেছিলেন।
সম্মেলনে শেষ পর্যন্ত ৬ দেশকে ব্রিকসে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হলেও বাংলাদেশ সেই তালিকায় নেই, যা নিয়ে নানামুখী আলোচনা চলছে। বিএনপি বিষয়টিকে বর্ণনা করেছে সরকারের ‘কূটনৈতিক ব্যর্থতা’ হিসেবে। সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক ব্রিকসে বাংলাদেশের সুযোগ না পাওয়া এবং এ বিষয়ে চলমান আলোচনার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী গত জুন মাসে তার ইতালি সফরের সময় দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতে ব্রিকসে নতুন সদস্য নেওয়ার আলোচনার বিষয়টি তুলে ধরেন।শেখ হাসিনা বলেন, আমার সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎ হল, তখন আমন্ত্রণ জানালেন, ব্রিকস সম্মেলন করবে, আমাকে আসতে বললেন এবং সে সময় আমাকে জানালেন যে, তারা কিছু সদস্যপদ বাড়াবেনও এবং সেটাতে আমার মতামত জানতে চাইলেন।আমি বললাম যে, এটা খুবই ভালো হবে। কারণ ব্রিকস যখন প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন থেকে এই পাঁচটা দেশের সরকারের প্রধানের সঙ্গে আমার যোগাযোগ সবসময় ছিল এবং আছে।
গত জুন মাসে জেনিভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ব্রিকসের সভাপতি দেশ দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার বৈঠক হয়।ওই বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছিলেন, বাংলাদেশের ব্রিকসে যোগদানের বিষয়ে সেখানে আলোচনা হয়েছে। এরপর জুনের মাঝামাঝিতে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিকসের সদস্যপদের জন্য আবেদন করে সরকার।
চলতি মাসের ২৪ তারিখ ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আমন্ত্রিত হয়ে যোগ দেন। এই সম্মেলনেই ছয়টি দেশকে নতুন করে ব্রিকসের সদস্য হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত হয়। সেগুলো হল- আর্জেন্টিনা, মিশর, ইথিওপিয়া, ইরান, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে জুনে যে আলোচনা হয়, সেই পর্যায়েই বিষয়টি ছিল বলে জানান সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, ব্রিকসের সদস্য হওয়ার বিষয়ে প্রেসিডেন্ট আমাকে তখনই বলেছিলেন যে, ধাপে ধাপে নেবেন, তারা ওই ভৌগোলিক অবস্থানকে বিবেচনা করে যে দেশগুলি তাদেরকে নেবেন এবং পর্যায়ক্রমিকভাবে তারা সদস্য সংখ্যা বাড়াবেন।
আমরা ঠিক ওইভাবে… হ্যাঁ, নিলে আমরা খুব খুশি। কিন্তু আমরা ঠিক ওইভাবে ব্রিকসে এখনই সদস্যপদ পাব, এই প্রথমবারই যে সদস্যপদ পাব, এ ধরনের চিন্তা আমাদের মাথায় ছিলও না, আর সেই রকম চেষ্টাও কিন্তু আমরা করিও নাই বা কাউকে আমরা বলিও নাই।
ব্রাজিল ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কিন্তু কাউকে কিছু বলতে যাইনি যে, এখনি মেম্বার করেন। তখন থেকে আমরা জানি যে তারা কয়েকটা দেশ নেবেন।ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ অন্য সরকারপ্রধানদের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজেও সদস্যপদ নিয়ে আলোচনার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ওই সময় আলোচনা হয়, ‘এখন আমরা এই কয়জন নেব। এরপরে ধাপে ধাপে আমরা আরও সদস্য সংখ্যা বাড়াব’; এই।
বিরোধীদলের সমালোচনার জবাব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জানি, এই ইস্যুটা আসবে বা আমাদের অপজিশান থেকে খুব হুতাশ, যে আমরা নাকি চেয়েছি, পাইনি, হেনতেন।বাংলাদেশ কিছু চেয়ে পাবে না এটা কিন্তু ঠিক না। অন্তত আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের যে মর্যাদাটা আমরা তুলে ধরেছি, সেখানে আমাদের সেই সুযোগটা আছে।
তিনি বলেন, তারা বলতে পারে, কারণ তারা বিএনপির আমলে ওইটাই ছিল। বাংলাদেশের কোনো অবস্থানই ছিল না সারাবিশ্বে। বাংলাদেশ মানেই ছিল দুর্ভিক্ষের দেশ, ঝড়ের দেশ, বন্যার দেশ, হাত পেতে চলার দেশ, ভিক্ষা চাওয়ার দেশ। এখন অন্তত বাংলাদেশ ভিক্ষা চাওয়ার দেশ না, এটা সবাই জানে।প্রধানমন্ত্রী জানান, ব্রিকস জোটের অধীনে গঠিত নিউ ডেভেলপমন্টে ব্যাংকে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ শুরু থেকেই বাংলাদেশের ছিল এবং বাংলাদেশ ওই ব্যাংকের সদস্য হয়েছে।
আমাদের পক্ষ থেকে আমরা যখন শুনলাম যে, নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক হচ্ছে, ওটার উপরে আমাদের আগ্রহটা বেশি ছিল, সেখানে আমরা যুক্ত হতে চেয়েছিলাম।ওই ব্যাংকের অর্থায়নে বাংলাদেশে দুটি প্রকল্প চালু থাকার কথাও আরেক প্রশ্নে তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। বিনিময়ের ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট মুদ্রার বাধাধরা না কথাও তিনি বলেন।