পদ্মা চায়নি হিলারি-টাকাও বন্ধ করেছিল
বিশেষ প্রতিনিধি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন নিজে আদেশ দিয়ে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। শুক্রবার ১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সবকিছু বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দিয়েছি। এর ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাংক করে দিয়েছি। বিদেশে যারা যাবে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তারা যেতে পারবে। কোনো ঘরবাড়ি বিক্রি করা লাগবে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেন, পদ্মা সেতু করতে গিয়ে আমাদের ওপর বদনাম দিয়েছিল, একটা ব্যাংকের এমডি পদের জন্য সেটাও সরকারি বেতনধারী। সরকারি আইনে আছে ৬০ বছর পর্যন্ত এমডি থাকতে পারবে। এর বেশি হলে থাকতে পারবে না। তারপরও বেআইনিভাবে ১০ বছর চালিয়ে আবারও সেখানে থাকতে হবে, সেই লোভে বারবার আমাদের ওপর চাপ।
একটি বড় দেশও বারবার চাপ দিত’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এমডি পদে না রাখলে নাকি পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দেবে। আমাদের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে সেই ভদ্রলোক মামলাও করেছিল। কিন্তু আদালত তো তার বয়স কমাতে পারে না। সে মামলায় হেরে যায়।
তারপর তার বিদেশি বন্ধু দ্বারা…এটা কিন্তু ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের বোর্ডে হয়নি। হিলারি ক্লিনটন নিজে অর্ডার দিয়ে তখন ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের যিনি প্রেসিডেন্ট ছিলেন তাকে দিয়ে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দেয়, যোগ করেন তিনি।প্রধানমন্ত্রী বলেন, তখন বলেছিলাম নিজের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করব, কারও কাছে হাত পেতে না। আমরা সেটা করেছি। সেটা করে বিশ্বকে দেখিয়েছি। এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ জাতির পিতা ভাষণ দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, এই বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। আমরা কিন্তু সেই জাতি। আমাদের দাবায়ে রাখতে পারে নাই।
মানুষ আর বিএনপিকে ভোট দেয় না
বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ৩০টি পেয়েছিলো উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষ তাদের আর ভোট দেয় না। কেননা তারা ভোট চোর, জঙ্গি, লুটেরা। আমার কোনো ভয় নেই। আমি মানুষের জন্য কাজ করি। দেশের অগ্রযাত্রা কেউ ব্যাহত করতে পারবে না। অতন্দ্র প্রহরী হয়ে ছাত্রলীগকে সজাগ থাকতে হবে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি ভোট করতে আসেনা। তারা জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে চায়। বিএনপি নাকি গণতন্ত্রের কথা বলে। যাদের জন্মই সেনা স্বৈরশাসকের হাতে তারাই নাকি আবার গণতন্ত্র উদ্ধার করবে।
নিজের নয়, দেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, দেশের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রাম আর অর্জনের সঙ্গে ছাত্রলীগ জড়িত। যেকোনো দুর্যোগে ছাত্রলীগ সক্রিয় থাকে। ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ থেকে শুরু করে সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের তারুণ্যের শক্তি এগিয়ে নেবে বাংলাদেশকে।
শেখ হাসিনা বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছি মানুষের জন্য। অথচ এটা নিয়েো বিএনপি বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। নিজেরা কিছু করতে পারে না, আর আমরা মানুষের জন্য করতে গেলে সেটা নিয়ে বিভ্রান্ত করছে। সর্বজনীন পেনশন স্ক্রিম নিয়ে বিএনপির বিভ্রান্তিতে কেউ যেন কান না দেয়।তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ছাত্রদলের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিলো, আর আমি ছাত্রলীগের হাতে বই, খাতা তুলে দিয়েছিলাম। অশিক্ষিতদের হাতে দেশ পড়লে দেশের অগ্রযাত্রা হতে পারে না। খালেদা জিয়া দেশকে দুর্নীতি পরপর পাঁচ বার চ্যাম্পিয়ন করেছিলো। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছিলো অস্ত্রের ঝনঝনানি। সারাদেশ ছিলো জঙ্গি, সন্ত্রাসীদের।
শেখ হাসিনা বলেন, এখন অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা দেখি মানবাধিকারের কথা বলে। কিন্তু ১৫ আগস্টের পর তো আমরা বিচার চাইতে পারিনি। তবে কোনো বাধা আমাকে আটকাতে পারেনি। আমি মৃত্যুকে ভয় করিনি। মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে দেশে ফিরেছি। দেশে ফেরার পর সারাদেশ ঘুরেছি। দেখতে চেয়েছি বাবা-মার রক্ত নিয়ে তারা মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পেরেছে কি না।সরকারপ্রধান বলেন, ১৯৭৫ এর পর যে ক্ষমতা ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করা হয়েছিলো, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছে।