ডাক্তার সেজে সিজার করে কপাল কেটে আয়া পুলিশে
![](https://dainiksottokothaprotidin.com/wp-content/uploads/2022/01/Aya-780x470.jpg)
ফরিদপুর প্রতিনিধি : ডাক্তার সেজে সিজার অপারেশন করে কপাল কেটে এক আয়া এখন পুলিশের কব্জায়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়া হাসপাতালের আয়াকে দিয়ে ফরিদপুরে এক প্রসূতি নারীর সিজারিয়ান অপারেশন করার অভিযোগ উঠেছে। জেলা শহরের আল-মদিনা প্রাইভেট হাসপাতালে অপারেশনকালে নবজাতকের কপাল কেটে ফেলেছেন ওই আয়া। রোগীর স্বজনরা বিষয়টি প্রশাসনকে জানালে ওই আয়া, হাসপাতালের পরিচালক ও এক দালালকে আটক করেছে পুলিশ।
শনিবার (১৫ জানুয়ারি) সকালে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন বেসরকারি আল-মদিনা প্রাইভেট হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। পরে ওই নবজাতকের কপালে ৯টি সেলাই দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত আয়ার নাম- চায়না বেগম। আটক বাকি দুজন হলেন- হাসপাতালের পরিচালক পলাশ ও এক দালাল। অপারেশন থিয়েটারের স্টাফ নার্স পরিচয়ধারী আয়া চায়না বেগম দীর্ঘদিন ধরে এভাবে চিকিৎসক ছাড়াই নবজাতকের প্রসব করে আসছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।জানা গেছে, রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দক্ষিণ উজানচর মইজুদ্দিন মন্ডলপাড়ার বাসিন্দা সৌদি প্রবাসী শফি খানের স্ত্রী রুপা আক্তারের (২৩) প্রসব বেদনা শুরু হলে শনিবার সকাল ৮টার দিকে ওই হাসপাতালে আনা হয়। সেখানে আনার পর চিকিৎসক ছাড়াই ওই প্রসূতির সিজারিয়ান অপারেশন করেন চায়না বেগম ও হাসপাতালের অন্য দুই আয়া (তাদের পরিচয় জানা যায়নি)। অপারেশন করতে গিয়ে নবজাতকের কপালের একটি অংশ কেটে ফেলেন।
নবজাতকের বাবা শফি খান বলেন, হাসপাতালে আনার পর একাধিকবার কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে ডাক্তারকে ডাকেন। তারা বলেন, ডাক্তার আসবে, রোগীকে অপারেশন থিয়েটারে ঢোকান। এরই মধ্যে আমার স্ত্রীর প্রসব বেদনা বেড়ে গেলে তারা অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায় এবং বলে ডাক্তার ভেতরে আছেন। আয়া চায়না বেগম অপারেশন করেন এবং আমার শিশু সন্তানের কপালের একটি অংশ কেটে ফেলেন। পরে তার ৯টি সেলাই দেওয়া লাগছে। বিষয়টি আমরা পরে জানতে পেরে প্রশাসনকে জানাই।ভাতিজা শাকিল জানান, তার চাচি রুপাকে শনিবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে চায়না বেগমসহ আরও দুই আয়া অপারেশনের সময় নবজাতককে বের করতে গিয়ে কপালের একটি অংশ কেটে রক্তাক্ত করে ফেলে। তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। আহত নবজাতকের ফুফু হোসনেয়ারা বেগম চিকিৎসার ব্যয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বহনের দাবি জানান।
ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদুল আলম বলেন, এমন ঘটনা কাম্য নয়। ইতোমধ্যে হাসপাতাল থেকে তিন জনকে পুলিশ আটক করেছে। এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য বিভাগকে বলা হয়েছে।বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতাল মালিক সমিতির সভাপতি ডা. আব্দুল জলিল জানান, তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন। কেন চিকিৎসক ছাড়া প্রসূতির অপারেশন করা হলো, সেটি জানার চেষ্টা চলছে। এই অন্যায় কাজের সঙ্গে যুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফরিদপুর সদর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফাতেমা করিম বলেন, বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এ ধরনের উদাসীনতা মেনে নেওয়া হবে না। আমরা প্রসূতি মায়ের অপারেশন ও এই জাতীয় কাজে নিয়োজিত কর্মীদের ডাটাবেজ তৈরি করছি- এ বিষয়ে মনিটরিং জোরদার করা হবে।ফরিদপুর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন রঞ্জন কর বলেন, ঘটনাটি জানার পরপরই ওই হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তিন জনকে আটক করা হয়েছে। মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।